সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৫ পূর্বাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অভিযোগপত্রের শুনানির দিন বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বরগুনা আদালত প্রাঙ্গণ ছিল নিরাপত্তাবেষ্টনীতে মোড়ানো। তবে এ দিন বোরকা পরা একজনকে ঘিরে আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির নিরাপত্তার বিষয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
এ দিন বরগুনার আদালত প্রাঙ্গণে সকাল থেকে পোশাকে ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন।
কার্যক্রম শুরুর আগে জেলা কারাগার থেকে এ মামলার অপর ৭ আসামিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। সকালে শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে মামলার মূল নথি বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে থাকায় বিলম্বের শুনানি শুরু হয়। বেলা ১১টার দিকে জৈষ্ঠ্য জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী অভিযোগপত্র শুনানির জন্য দুপুর দুইটায় নির্ধারণ করেন।
এর আগে সকাল নয়টার দিকে মিন্নি তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের মোটরসাইকেলে করে আদালতে আসেন। আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত মিন্নি তার বাবার সঙ্গে আদালতের একটি কক্ষে ছিলেন।
অভিযোগপত্র শুনানির জন্য বিচারক দুপুর দুইটায় সময় নির্ধারণ করার কারণে বেলা ১১টার দিকে বাবার সঙ্গে মোটরসাইকেলে বাসায় যান মিন্নি।
আদালত থেকে বের হয়ে আদালত প্রাঙ্গণে বাবার মোটরসাইকেলে ওঠার আগ পর্যন্ত মিন্নির ছবি সংগ্রহ করেন সংবাদকর্মীরা। এসময় সাধারণ মানুষও মিন্নিকে দেখতে জড়ো হন, লোকে লোকারণ্য হয় আদালত প্রাঙ্গণ।
সাংবাদিকরা যখন ছবি তুলছিলেন তখন ব্যতিক্রমী পোশাকে মোবাইল হাতে মিন্নির ছবি তুলতে হাজির হন একজন। তিনি সংবাদকর্মী ও উৎসুক মানুষকে ভেদ করে একের পর এক মিন্নির ছবি তুলছেন। এসময় সবার চোখ পড়ে ওই ব্যক্তির দিকে। দেখা যায় হাতে-পায়ে মোজাসহ বোরকা পরিহিত ওই ব্যক্তি মিন্নির খুব কাছ গিয়ে ছবি তুলছেন। মিন্নি আদালত প্রাঙ্গণে থাকা পর্যন্ত সাংবাদিকদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে মিন্নির ছবি তুলেন তিনি। এ বিষয় নিয়ে সন্দেহ হয় স্থানীয় সাংবাদিকদের। সর্বাঙ্গ ঢেকে মিন্নির ছবি তোলা ওই ব্যক্তি ‘নারী নয় বরং পুরুষ’ এমনটিও বলেছেন কেউ কেউ। তবে ওই ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়নি। এমনকি স্থানীয় সাংবাদিক ও মিন্নির পরিবারের সদস্যরাও ওই ব্যক্তিকে চিনতে পারেননি।
ঘটনার দিনি আদালতে থাকা কয়েকজন সাংবাদিক বলেন, আদালতের কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় এজলাসের পাশের একটি কক্ষে বাবার সঙ্গে বসে ছিলেন মিন্নি। এ সময় হাত-পায়ে মোজা ও বোরকা পরিহিত ওই ব্যক্তি মিন্নির কক্ষের বাইরে ঘোরাফেরা করেন। বিষয়টি তখন আমরা গুরুত্ব দিইনি। এরপর আদালত প্রাঙ্গণে ছবি তোলার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে মিন্নির ছবি তুলেন ওই ব্যক্তি। তাকে দেখে মনে হয়েছে, তিনি পুরুষ, নারী নয়।
বরগুনা জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মো. হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, আমি পেশাগত দায়িত্ব পালনে আদালত প্রাঙ্গণে ছিলাম। বোরকা পরা ওই ব্যক্তিকে দেখে মনে হয়েছে একজন ধার্মিক নারী। কিন্তু মিন্নির ছবি তোলার সময় তিনি যেভাবে হুলুস্থুল করেছেন, তাতে মনে হয়েছে তিনি পুরুষ। বিষয়টি খুবই সন্দেহজনক। ওই ব্যক্তির আসল পরিচয় জানা জরুরি।
তিনি বলেন, কারাগার থেকে মুক্তির আগে মিন্নির বাবা তার মেয়ের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন, তার মেয়ের জন্য হুমকি রয়েছে। বুধবারের ঘটনায় মিন্নির নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় তৈরি হলো। তাই বোরকা পরিহিত ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে পুলিশকে অনুরোধ করছি।
এ প্রসঙ্গে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, মিন্নিকে নিয়ে আদালত থেকে বের হওয়ার সময় বোরকা পরিহিত ওই মানুষটি মিন্নির কাছে এসে ছবি তোলা শুরু করেন। তাকে দেখে ধর্মপ্রাণ নারী মনে হলেও তিনি যেভাবে মিন্নির কাছে এসেছেন, সেটা তার পোশাকের সঙ্গে বেমানান। এ বিষয়ে পুলিশকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাই।
বরগুনা সদর থানার ওসি আবীর মোহাম্মদ হোসেন বলেন, বিষয়টি জানা ছিল না। সাংবাদিকদের কাছ থেকে ঘটনা জেনেছি। আমরা ওই ব্যক্তির বিষয়ে খোঁজ নেব।
Leave a Reply