রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৬ পূর্বাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ সদ্য গ্রেফতার করা হয় নব্য জেএমবির পলাতক সদস্য জাহিদ হাসান রাজু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার লেমুয়া গ্রামের ছেলে।
জাহিদ হাসান রাজুর মায়ের ধারণা তার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের গ্যালারিতে গত ৩০ জুন সংবাদ সম্মেলনে এসে তার মা আকলিমা বেগম বলেন তার ছেলে রাজু ৫ দিন ধরে নিখোঁজ। তাকে অপহরণ করা হয়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্জিও জানান।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মাহবুব কবির, অধ্যাপক সুবর্ণা কর্মকার ও সহযোগী অধ্যাপক আওলাদ হোসেন।
তবে ঘটনার ৪৮ দিন অতিবাহিত হলে গত ১১ আগস্ট রাজধানীর কাফরুল এলাকায় সন্ধান মিলে জাহিদ হাসান রাজুর। নিখোঁজ হিসেবে উদ্ধার না হলেও নব্য জেএমবির পলাতক সদস্য হিসেবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের তথ্য সূত্রে, রাজু সিটিটিসির মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি। বোমা মিজান হিসাবে রাজুর পরিচিতি ব্যাপক। তবে সহযোগীরা তাকে ফোরকান ভাই নামে ডাকে।
সিটিটিসির প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে জানান, রাজু নব্য জেএমবির বোমা তৈরির প্রধান কারিগর।
রাজুর মা আকলিমা বেগম বলেন, ১৯৯৪ সালের ১২ অক্টোবর লেমুয়া গ্রামে জন্ম আমার ছেলে। খুব মেধাবী ছাত্র রাজু। সাইন্স থেকে এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে জাবির রসায়ন বিভাগে চান্স পায়।
জেএমবির বোমা তৈরির প্রধান কারিগর ছিল তার ছেলে এমনটা মানতে নারাজ রাজুর মা, স্ত্রী ও গ্রামের লোকজন। ২০১৮ সালের জুন মাসে বিয়ে হয় রাজুর। ঘরে আছে তার এক বছর বয়সী মেয়ে।
আকলিমা জানান, জাবিতে ভর্তির জন্য আবদুল খালেক জাহিদ নামের এক শিক্ষকের কাছে পড়তেন রাজু। সে সময় তিনি ধর্মচর্চায় মনোযোগী হতে থাকেন।
রাজুর বাবা হুমায়ুন কবির কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, সারা জীবন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ছেলেকে মানুষ করার চেষ্টা করলোম। এখন শুনি ছেলে নাকি জঙ্গি, আবার বোমাও বানায়। এমন ঘটনা শুনে ইচ্ছে হয় মরে যাই। যারা আমার স্বপ্নে বিষ দিয়েছে তাদের বিচার চাই।
বিয়ের পর স্ত্রীর তেমন খোঁজ না রাখায় বেশিরভাগ সময় বাবার বাড়িতে থাকতেন বলে জানান রাজুর স্ত্রী। ইউপি সদস্য ইউসুফ মিয়া বলেন, রাজুকে আমরা ভদ্র ছেলে হিসেবে চিনতাম। তবে এর আড়ালে যে সে জঙ্গি কার্যক্রমে যুক্ত হয়ে পড়বে, এটা আমরা ধারণা করিনি।
সিটিটিসির তথ্যমতে, গত কয়েক বছরে ১০-১২টি পুলিশ বক্সে বোমা হামলার চেষ্টা করে নব্য জেএমবির জঙ্গিরা। গ্রেফতারকৃত জঙ্গিদের ভাষ্যমতে নব্য জেএমবির বোমা বানানোর সেল আছে। সেই সেলের প্রধান রাজু। মূলত বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ দিতে সেল তৈরি করেন তিনি। এমন তিনটি সেল রয়েছে রাজুর। তাদের ভাষায় সেলের নাম ইদাদ। প্রত্যেকটি ইদাদে (সেল) ২০ জন সদস্য একত্রে প্রশিক্ষণ নিতো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে টার্গেট করেই এ সেল গঠন করা হয়।
রাজুকে গ্রেফতারের পর সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসির প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, ছাত্র হিসেবে রাজু খুবই মেধাবী এটা সত্য। কিন্তু জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত মাস্টার্স শেষ করতে ব্যর্থ হয় তিনি। ২০১৬ সালে নব্য জেএমবির তৎকালীন আমির মুসার মাধ্যমে রাজু জঙ্গিবাদে জড়ায় বলে নিশ্চিত করেছেন আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, মেধা ও দক্ষতা থাকায় রাজুকে জঙ্গিরা তাদের শীর্ষস্থানীয় সামরিক শাখায় নিয়োগ দেয়। এরপর বোমা ও গ্রেনেড তৈরিতে পারদর্শী হয়ে রাজু প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। বড় কোনো রাসায়নিক সরবরাহ কোম্পানিতে চাকরি নিয়ে সেখান থেকে কেমিক্যাল সরবরাহ করে আইইডি বানানোর পরিকল্পনা ছিল রাজুর। তার ও দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা হয়েছে। তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করা হবে।
Leave a Reply