মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:২১ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক।। সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় আসামি ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ তিন আসামিকে গতকাল শুক্রবার রাত পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিতে পারেনি র্যাব। কক্সবাজার কারা কর্তৃপক্ষ বলেছে, আদালতের আদেশ তাদের কাছে না পৌঁছানোয় তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। এদিকে ওসি প্রদীপসহ টেকনাফ থানার ৭ পুলিশ সদস্যকে গতকাল বরখাস্ত করা হয়েছে।
কক্সবাজারের আদালত বৃহস্পতিবার আত্মসমর্পণ করা সাত আসামির মধ্যে তিনজনকে সাত দিনের রিমান্ড এবং অন্য চারজনকে দুই দিন করে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন তদন্তকারী সংস্থা র্যাবকে। আত্মসমর্পণ না করা হত্যা মামলাটির আরো দুই আসামির ওপর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে আদালতের কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর রাত ১০টার দিকে সাত আসামিকে কক্সবাজার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে গতকাল জানা গেছে, আত্মসমর্পণ করা সাত আসামিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এর আগে মামলা হওয়ার পর তাঁদের দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
গতকাল সকালে কক্সবাজার র্যাব-১৫-এর উপ-অধিনায়ক মেজর মেহেদী হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালতের আদেশপ্রাপ্ত হয়ে আসামিদের বিষয়ে প্রক্রিয়া অনুযায়ী আমরা কাজ শুরু করেছি।’ অন্যদিকে গতকাল সন্ধ্যায় কক্সবাজার কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক
মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘আমি আদালতের নির্দেশনার খবর শুনেছি। তবে এখনো আমার কাছে অফিশিয়াল কোনো চিঠি বা নির্দেশনা এসে পৌঁছেনি। নির্দেশনা না এলে আমার করার কিছুই নেই।
এদিকে আসামিদের আইনজীবী মোহাম্মদ জাকারিয়া সাংবাদিকদের বলেছেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে মামলার ৮ নম্বর আসামি মো. টুটুল ও ৯ নম্বর আসামি মো. মোস্তফার বিরুদ্ধে। কিন্তু এই নামের কোনো পুলিশ সদস্য বারহারছড়া তদন্তকেন্দ্রে নেই। এ বিষয়ে জানার জন্য গতকাল টেকনাফ থানার পরিদর্শক ও বর্তমানে ওসি এ বি এম এস দোহার সরকারি ও ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। তবে পুলিশের অন্যান্য সূত্রে জানা গেছে, বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক ও টেকনাফ থানায় ৩১ জুলাই রাতে সংঘটিত ঘটনায় পুলিশের পক্ষে মামলার বাদী নন্দ দুলাল রক্ষিতের ডাকনাম হচ্ছে টুটুল। এ নামটি নিয়েই আরেকজন আসামির নাম দেওয়া হয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। তবে টেকনাফ থানা ও বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রে মোস্তফা নামে কোনো পুলিশ সদস্য নেই বলে সূত্রগুলো বলছে।
কারাগারে কয়েদিদের ক্ষোভের মুখে প্রদীপ
কক্সবাজারের কারাগারে থাকা কয়েদিদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন টেকনাফ থানার বিতর্কিত ওসি প্রদীপের করা মামলার আসামি। সেই প্রদীপ তাঁদের সঙ্গী হতে চলেছেন বলে বৃহস্পতিবার দুপুরে কারাগারের ভেতর খবর চাউর হলে ওই কয়েদিরা ক্ষোভ নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন। শত শত কয়েদি অধীর অপেক্ষায় ছিলেন প্রদীপের কারাগারে ঢোকার দৃশ্যটি একটু হলেও অবলোকন করতে। কিন্তু তাঁদের সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি আদালতের কার্যক্রম সারতে দেরি হওয়ার কারণে। রাত ১০টার পরই আদালত থেকে ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকতসহ সাত পুলিশ আসামিকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। ততক্ষণে নিয়মানুযায়ী কারাগারের সব ওয়ার্ড বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
বন্দিদের মধ্যে ক্ষোভ লক্ষ করে কারা কর্তৃপক্ষ ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকতসহ সাত আসামিকে আলাদাভাবে রাখার ব্যবস্থা করেছেন। এ সত্ত্বেও গতকাল সকাল থেকেই বন্দিরা ওসি প্রদীপের নাম ধরে চিৎকার করে নানা কথা বলেন। পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আশঙ্কায় সাত আসামিকে সকাল থেকে ওয়ার্ডের বাইরে বের হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। বন্দিদের সঙ্গে নিয়মমাফিক দেখা করা তাঁদের স্বজনদের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক মোজাম্মেল হোসেন বলেছেন, কারাভ্যন্তরে কোনো সমস্যা নেই, সব ঠিকঠাক রয়েছে।
৭ পুলিশ বরখাস্ত
মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সাত পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার তাঁদের বরখাস্ত করা হয়। তাঁরা হলেন টেকনাফ থানার প্রত্যাহার হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, সিনহাকে গুলি করা পুলিশের পরিদর্শক লিয়াকত আলী, কনস্টেবল সাফানুর করিম, উপপরিদর্শক নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন এবং সহকারী উপপরিদর্শক লিটন মিয়া।
Leave a Reply