বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪৪ পূর্বাহ্ন
মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি॥ মঠবাড়িয়ায় স্বামী,শাশুড়ি, দেবর ও ননদের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা করে বিপাকে পড়েছে গৃহবধূ রুনু বেগম। মামলা তুলে নিতে শ্বশুর বাড়ির লোকজন প্রাণনাশসহ মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকির মুখে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় ডায়েরী করেও আইনগত কোন সহায়তা পাইনি ওই গৃহবধূ। বরং আসামি পক্ষ মিথ্যা সাজানো মামলা দিয়ে ও হয়রানির করারও অভিযোগ করেছে যৌতুক মামলার বাদী ওই গৃহবধূ রুনু বেগম।
এ ব্যপারে ওই গৃহবধূ আসামিদের অব্যাহত হুমকি ও সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানির বিষয়টি সাংবাদিকদের মাধ্যমে পত্রিকায় প্রকাশ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
মামলা ও লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ভাইজোড়া গ্রামের মৃত কাদের খানের মেয়ে রুনু বেগম (৩৭) এর সাথে প্রতিবেশী মৃত নজরুল ইসলামের পুত্র নিজামের (৪৫) বিয়ে হয়। বিয়ের পর পরই রুনুর দরিদ্র পিতা নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার ও আসবাবপত্রসহ স্বামীর বাড়িতে তুলে দেয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই নিজাম স্ত্রীকে বিদেশ যাওয়ার জন্য বাপের বাড়ি হতে টাকার জন্য শারীরিক নির্যাতন করলে বিভিন্ন সময় তিন লক্ষাধিক টাকা এনে স্বামীকে দেয়। এতে সে ক্ষান্ত না হয়ে পুনরায় আবার বড় ভাইয়ের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা আনার জন্য চাপ দিলে আবারও জমি বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা দেন। বাকী দাবীকৃত দেড় লাখ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নিজাম ক্ষিপ্ত হয়। এক পর্যায় গত ১৩ জুন-২১ স্বামী নিজাম, দেবর মঞ্জু ও ননদ হেলেনার প্ররোচনায় রুনু বেগমকে বেদরক মারধর করে গুরুতর আহত করে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
অসুস্থ অবস্থায় ওই দিন রুনুর ভাই ও স্বজনরা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এ ঘটনায় ২৪ জুন মঠবাড়িয়া থানায় স্বামী নিজাম দেবর রফিকুল মঞ্জু, ননদ হেলেনাসহ ৫জনকে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করে। মামলা দায়েরের পর স্বামী নিজাম স্বেচ্ছায় আদালতে হাজির হয়ে জামিনের প্রার্থনা করলে জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠায়। এদিকে পুলিশ দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত-৩১ জুলাই অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় স্বামী নিজাম, দেবর মঞ্জু ও ননদ হেলেনার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করে। বাকী দু’জনকে মামলা থেকে অব্যহতি দেয়। মামলা দায়েরের পর থেকেইে দেবর, ননদ ও তাদের লোকজন মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেয়।
গত ২৪ জুলাই দেবর মঞ্জুসহ বিবাদীরা বাদীর ভাইজোড়া গ্রামের বসত ঘরে গিয়ে মামলা না তুললে হাত পা ভেঙ্গে পঙ্গুসহ খুন জখম ও মিথ্যা মামলার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় রুনু বেগম মঠবাড়িয়া থানায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে একটি জিডি করে (যার নং-১৮৪ তারিখ-০৫/০৮/২১)।
রুনু আরও অভিযোগ করেন- আমাকে হয়রানী করার জন্য আমার ননদ হেলেনা বেগম একটি ঘটনা সাজিয়ে গত ১৮ জুলাই বাদী হয়ে আমিসহ আমার একমাত্র পুত্র হৃদয় (১৮) ও ভাই মহসিন (৩৫) কে আসামী করে মঠবাড়িয়া বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্টেট্রট আদালতে একটি মামলা দায়ের করে (যার নং-১৫১)। এ মামলাটি মঠবাড়িয়া থানায় তদন্তানাধীন।
গৃহবধূর দেবর অভিযুক্ত রফিকুল তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী ও হুমকিসহ আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বড় ভাই নিজামকে তার স্ত্রী রুনু বেগম ও তার একমাত্র ছেলে হৃদয়সহ অন্যান্য লোক ভাড়া করে আমাদের কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে। দীর্ঘদিন ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে আদালতে মামলা দায়ের করি।
মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ নূরুল ইসলাম বাদল বলেন, স্বামীর বিরুদ্ধে-স্ত্রী রুনু বেগমের মামলার আদালতে চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে এবং হেলেনা দায়ের করা মামলাটির আদালতের নির্দেশনা পেয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ঘটনা তদন্ত পূর্বক পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply