রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:০৯ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: বরিশাল নৌবন্দরের টার্মিনালে তীব্র পন্টুন সংকট দেখা দিয়েছে। আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত নৌযানের আসা যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে এই সংকট ঈদ স্পেশাল সার্ভিস শুরু হলে সংকট আরও কয়েকগুণ বাড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে। কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে- এই সংকটের মধ্যে পন্টুনের একটি বড় অংশ ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের দখলে থাকছে। ঈদকে কেন্দ্র করে নৌযানের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়লেও তাদের উচ্ছেদে উদ্যোগ নেই। বরং প্রতিনিয়ত পন্টুনে ভাসমান ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এখন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে পন্টুনে চলাচলে যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। এই বিষয়টি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বরিশাল অফিসের কর্মকর্তারা প্রত্যক্ষ করলেও উচ্ছেদে তৎপরতা লক্ষ্যণীয় নয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে যাত্রায়াতকারী লঞ্চের তিনটি পন্টুনে অর্ধশত ভাসমান ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া পাশেই অভ্যন্তরীণ নৌযানের পন্টুনেও রয়েছে আরও অন্তত ২০টি ভ্রাম্যমাণ দোকান। যত্রতত্র প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে পন্টুনে যাত্রী সাধারণকে হাটাচলা করতে বেগ পেতে হচ্ছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তা কর্মচারীরাই ভাসমান ব্যবসায়ীদের পন্টুনে বসার সুযোগ করে দিয়েছেন। এবারের ঈদকে কেন্দ্র করে নতুন করে বেশ কয়েকজনকে বসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি পন্টুন ইনচার্জ দেলোয়ার পন্টুনে এই সুযোগ করে দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ তুলছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নৌ পুলিশ থানার কর্মকর্তারাও মাসোহারা নিচ্ছে বলে শোনা গেছে।
বরিশাল ঢাকা নৌরুটে চলাচলরত একাধিক লঞ্চের ড্রাইভার ও চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে টার্মিনালে থাকা টিনটি পন্টুনে ৫ থেকে ৭টি লঞ্চ বার্দিং করা সম্ভব। কিন্তু এবারে ঈদে ১৫ থেকে ২০টি লঞ্চ একসাথে যাত্রীসেবা দেবে। এতে পন্টুনে নোঙর করা নিয়ে ভোগান্তি পড়তে হবে। তার পরে পন্টুনের এক তৃতীয় অংশে ভাসমান ব্যবসায়ীরা প্রতিষ্ঠান খুলে বসায় ভোগান্তি আরও বেড়েছে। বিশেষ করে এই প্রতিষ্ঠানগুলো যাত্রীদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের আগে প্রতিষ্ঠানগুলো সরানো না গেলে ভোগান্তির মাত্রা আরও বাড়বে বলে তাদের অভিমত। একইভাবে যাত্রী ভোগান্তি নিয়ে শঙ্কায় থাকার কথা জানিয়েছেন বরিশাল ঢাকা নৌরুটে যাত্রী পরিবহনকারী একাধিক লঞ্চ মালিক।
কীর্তনখোলা লঞ্চে মালিক মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌসের অভিযোগ হচ্ছে, সপ্তাহখানেক আগে প্রশাসনের সাথে বৈঠকে আলোচনার প্রাক্কালে পন্টুনগুলো ভাসমান ব্যবসায়ী মুক্ত করার অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ প্রতিষ্ঠনগুলো উচ্ছেদে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বরং ঈদকে কেন্দ্র করে একের পর এক প্রতিষ্ঠান পন্টুনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে সন্ধ্যার পরে রাজধানী ঢাকাগামী যাত্রীদের বেগ পেতে হচ্ছে। ২/১ দিনে মধ্যে তাদের উচ্ছেদ করা না গেলে বিষয়টি ভোগান্তিতে রূপ নেবে বলে মনে করেন তিনি।
কেন্দ্রীয় লঞ্চ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু জানিয়েছেন, ঈদের আগে পন্টুন চেয়ে নৌ মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার আবেদন করেছেন। এমনকি সর্বশেষ আন্তঃমন্ত্রণায়ের বৈঠকেও বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
এমন পরিস্থিতিতে পন্টুনে ভাসমান ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠান থাকার বিষয়টিতে রীতিমত তিক্ত-বিরক্ত সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির মালিক রিন্টু। এই ঘটনায় তিনি ক্ষোভ ঝেরে বলছেন- এমনিতেই পন্টুন সংকটের কারণে যাত্রীদের টার্মিনালে পৌছে দেওয়া যাচ্ছে না। তার ওপরে আবার ভ্রাম্যমাণ দোকান খুলে পন্টুনের বড় একটি অংশ দখল নিয়ে নিয়েছে। তাদের সরিয়ে দিতে বিআইডব্লিউটিএকে একাধিকবার বলা হলেও কোন উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিআইডব্লিউটিএ বরিশাল অফিসের কর্মকর্তা আজমল হুদা সরকার বলেন, আর্থিক কোন লাভের আশায় নয়, মানবিক কারণে ব্যবসায়ীদের পন্টুনে বসতে দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই তাদের সরিয়ে দিয়ে পন্টুনে চলাচল স্বাভাবিক করা হবে।
এছাড়া পন্টুন সংকটের বিষয়টি কেন্দ্রীয় অফিসকে অবহিত করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে কোন উত্তর আসেনি। ফলে আপাতত ১০০ ফুটে তিনটি পন্টুনেই লঞ্চগুলো বার্দিং করতে হচ্ছে। যাত্রী ভোগান্তি বা দুর্ঘটনার সম্ভব্য বিষয়টি মাথায় রেখে লঞ্চগুলো আস্তে ধীরে নোঙর করতে উদ্যোগ নেবেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।
Leave a Reply