মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪১ পূর্বাহ্ন
ভোলা প্রতিনিধি॥ ভোলায় বিদেশি সবজি ক্যাপসিকাম চাষে চরাঞ্চলের কৃষকদের ভাগ্য বদল হতে শুরু হয়েছে। মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলগুলোতে মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় এ সবজি আবাদে আগ্রহী হচ্ছে কৃষকরা। ফলে বিগত বছরের তুলনায় এ বছর ক্যাপসিকাম আবাদ হয়েছে দ্বিগুণ। তাই বিদেশি এ সবজি চাষ করে ভাগ্য বদল করেছে অনেক চাষি। তবে ক্যাপসিকাম চাষে সরকারি সহযোগিতা পেলে এ সবজির বিপ্লব ঘটানো সম্ভব বলে মনে করছেন চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর ভোলা জেলায় ক্যাপসিকাম চাষের লক্ষমাত্রা ছিলো ১৪ হেক্টর। আর আবাদ হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। অর্থাৎ ৩০ হেক্টর। এর মধ্যে ভোলা সদর উপজেলায় ১৫ হেক্টর ও দৌলতখান উপজেলায় ১৫ হেক্টও জমিতে ক্যাপসিকামের আবাদ হয়েছে।
কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, ভোলা সদরের মাঝের চরে প্রায় ৬-৭ বছর আগে কাচিয়া ইউনিয়নের মনির পাঠান নামের এক কৃষক প্রথমে ১০ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ক্যাপসিকাম চাষ করেন। আর পরীক্ষামূলক চাষেই সফলতা পেয়েছেন তিনি। এর পরের বছরই তিনি বড় পরিসরে চাষ শুরু করেন এবং তিনি সফল হন। এরপর থেকে তার দেখা-দেখি অন্যান্য চাষিরাও ক্যাপসিকাম চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
ক্যাপসিকাম চাষে তেমন কোন পোকা-মাকরের আক্রমণ না থাকা ও অধিক লাভজনক হওয়ায় স্বাবলম্বী হচ্ছেন কৃষকরা। আর দিন দিনই বাড়ছে চাষিদের সংখ্যা। ভোলার মাঝের চরে বর্তমানে দের থেকে দুই’শ জন চাষি ক্যাপসিকাম চাষ করছেন। এ বছরও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ব্যাপক ফলন হয়েছে। আর পাইকারি বাজারেও এর ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষকরা।
ভোলা সদরের কাচিয়া মাঝের চরের ক্যাপসিকাম চাষি মো. হান্নান পূর্বপশ্চিমকে জানান, এবছর তিনি প্রায় দুই একর জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করেছেন। এতে তার প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করেছেন। ক্ষেতে আরও যে ফসল আছে তাতে আরও ৫ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন।
একই এলাকার চাষী হাসেম কেরানী জানান, এই বিদেশি সবজি চাষ করে অনেক লাভ হয় শুনে তিনি এবছর তিন একর জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, বীজ, সার-ওষদ ও জমির লগ্নীসহ সব মিলিয়ে ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত তিনি সাত লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করেছেন। আরও সাত লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন।
ক্যাপসিকাম চাষি মো. সিদ্দিক পূর্বপশ্চিমকে জানান, আগে ভোলার এ চরে ২৫-৩০ জন চাষি এ সবজি চাষ করতেন। এখন এখানে দেড় থেকে দুই’শ জন চাষি রয়েছে। দিন দিন এ বিদেশি সবজির চাষে কৃষকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
হাসেম নামের এক বেপারী জানান, আমরা এ সবজি খেত থেকে তুলে প্যাকেট করে ঢাকার পাইকারি বাজারে বিক্রি করি। পাইকারি বাজারের এ সবজির চাহিদা অনেক। প্রতি কেজি বর্তমানে দেড় থেকে দুই’শ টাকায় বিক্রি হয়।
তিনি আরও জানান, ঢাকার থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় এমনকি বিদেশেও এ সবজি রফতানি করা হয়। এছাড়াও এ সবজি চাষ করে অনেক কৃষক তাদের ভগ্য পরিবর্তন করেছেন।
ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ দেবনাথ ভয়েস অব বরিশালকে জানান, মাঠ পর্যায়ে আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সময়োপযোগী সঠিক পরামর্শ দেওয়ার ফলে ভোলা জেলায় প্রতি বছরের মত এবারও ব্যাপক ফলন হয়েছে। এবছর ক্ষেতে কোন প্রকার পোকা পাকর আক্রমণ নেই। তাই চাষিরা আগের চেয়ে অনেক লাভবান হবে বলে আমরা আশা করছি। এ সবজি চাষ করে চরাঞ্চলের অনেক মানুষ তাদের ভাগ্য বদল করেছেন বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
Leave a Reply