শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৬ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক//
ভয়েস অব বরিশাল অনলাইনে সংবাদ প্রকাশের পর আটকে রাখা শিশুটির প্রতি মানবিক আচরণ করেছে এ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শিশুটিকে অন্যত্র চিকিৎসার জন্য তার মায়ের কাছে বুধবার রাত ১১ টায় ছাড়পত্র তুলে দেওয়া হয়েছে।
ছাড়পত্র পাওয়ার পর ১১ মাস বয়সী শিশু ইয়াসমিন আলমের মা দিলু আক্তার সন্তানদের নিয়ে চট্টগ্রামে পৌঁছেছেন।
শিশুটির মা দিলু আক্তার আজ বৃহস্পতিবার , হাসপাতালের বিল বাবদ ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা মওকুফ করে দিয়েছেে এ্যাপোলো কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে শিশুটিকে রিলিজ করে দেওয়া হয়েছে।
শিশুটি ছাড়পত্র পাওয়ায় মা তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সংবাদ প্রকাশের ফলেই তারা শিশুটিকে ছাড়পত্র দিয়েছে। এজন্য একুশে কর্তৃপক্ষকে জানাই ধন্যবাদ।
গত ১ অক্টোবর ‘টাকা শোধ করতে না পারায় সন্তান আটকে রেখেছে হাসপাতাল’ শিরোনামে ভয়েস অব বরিাশাল অনলাইনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও এ্যাপোলো হাসপাতালের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা হতে দেখা যায়। তারই ফলশ্রুতিতে অবশেষে সেই শিশুটিকে ছাড়পত্র দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ্যাপোলো হাসপাতালের ফিন্যান্সিয়াল অপারেশন বিভাগের ডিজিএম- একেএম রাকিব আহসান জানান, গতরাত পর্যন্ত দিলু আক্তারের ( শিশুটির মা) কাছে হাসপাতালের প্রাপ্য ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। পুরো টাকাটাই মওকুফ করে দিয়ে শিশুটিকে (ইয়াসমিন আলম) রিলিজ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দিলু আক্তার ও বাদশা আলম দম্পতির সন্তান ইয়াসমিন আলম। তাদের ছয় বছর বয়সী আরেকটি সন্তান আছে। বাদশা আলম সৌদি আরবে থাকেন দীর্ঘদিন। সৌদি আরবে তার একটি দোকান এক সময় থাকলেও বছর কয়েক আগে নানা আর্থিক টানাপোড়েনে দোকানটি বিক্রি করতে হয়। এখন তিনি অন্যের দোকানে চাকরি করেন।
মাস খানেক আগে দিলু আক্তার ও বাদশা আলম দম্পতির মেয়ের হঠাৎ করে জ্বরে আসে। এরপর দেখা দেয় খিঁচুনী। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় রাঙ্গুনিয়া হাসপাতালে নেওয়া হলে তারা চট্টগ্রাম ডেলটা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। সেখান থেকে বিভিন্ন জনের পরামর্শে মেয়েকে এনে ভর্তি করান রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালে। তখনো জানতেন না তিনি কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আদরের সন্তানকে।
একজন মা, যিনি এর আগে কখনো ঢাকায় আসেননি, পৃথিবীর অন্য কোন জটিল সংগ্রামের সাথে যিনি পরিচিত নন, তিনি একা মেয়েকে কোলে নিয়ে, এক হাতে ব্যাগ অন্য হাতে ছেলেকে নিয়েই গত আট সেপ্টেম্বর চলে আসেন এ্যাপোলো হাসপাতালে। তারপর লড়াই। মেয়ের অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে বাড়ী থেকে আনা সামান্য টাকা খরচ হয়। তারপর শেষ সম্বল সামান্য অলংকার বিক্রী করা হয়। সৌদি আরব থেকে বাদশা আলম ও টেনে টুনে দেশে টাকা পাঠান। এভাবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খরচ হয় ৩ লাখ একুশ হাজার টাকা। এরপর হাত খালি!
হাসপাতালের হিসেব অনুযায়ী তার বিল প্রতিদিনই বাড়তে থাকে। গত ১ অক্টোবর তার কাছে হাসপাতালের প্রাপ্য বিল দাঁড়ায় ৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। এত টাকা দিতে অপারগ মা সিদ্ধান্ত নেন, তিনি তার সন্তানকে নিয়ে গ্রামে ফিরে যাবেন। নিজেকে ছেড়ে দেন নিয়তির হাতে। যা হওয়ার হোক। আল্লাহ যা করবে তাই হবে! কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাকি যে টাকা পাবে ( ৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা) তা পরিশোধ না করলে সন্তানকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র ( রিলিজ) দিতে আপত্তি জানায়। শর্ত দেয়, টাকা পরিশোধ না করলে শিশুকে রিলিজ দেওয়া হবেনা। কড়ায় গন্ডায় টাকা শোধ করেই শিশু রিলিজ নিতে হবে।
Leave a Reply