রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৩ অপরাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥ ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের নির্বাচনী এলাকায় সফরে এসে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীদের নিয়ে বৈঠক করায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। সেই সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রক্ষা না করা এবং বৈঠকে তাদের আমন্ত্রণ না জানানোর অভিযোগ উঠেছে এমপির বিরুদ্ধে।
এ অবস্থায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ও তৃণমূল নেতাকর্মীরা এমপি হারুনের এসব কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে অবাঞ্চিত হিসেবে দেখছেন।
সূত্র জানায়, দীর্ঘ সাত মাস পরে তিনি গত বৃহস্পতিবার এলাকায় আসেন ঝালকাঠি-১ আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুন। এরপর উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কেন্দ্রের কারণ দর্শানো নোটিশপ্রাপ্ত দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ও তার সমর্থকদের নিয়ে বৈঠক করেন। এমনকি ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের কোনো আমন্ত্রণ জানাননি বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা সংসদ সদস্যের কোনো অনুষ্ঠানে যোগদান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমনকি এমপির সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীর যোগাযোগ না রাখারও ঘোষণা দেন তারা।
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট খাইরুল আলম সরফরাজ, যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সঞ্জিব কুমার বিশ্বাস, সদস্য ও রাজাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মনিরউজ্জামান মনির, ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা আক্তার লাইজু ও জিয়া হায়দার খান লিটন স্বাক্ষরিত নেতাকর্মীদের কাছে পাঠানো একটি চিঠি শনিবার সকালে এ প্রতিবেদকের হাতে আসে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ঝালকাঠি-১ আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেন। সেই নির্বাচনের পর থেকে তিনি দীর্ঘ নয় মাস ধরে এলাকায় অনুপস্থিত। তবে উপজেলা নির্বাচনের সময় তিনি তার পছন্দের প্রার্থীর (বিদ্রোহী) পক্ষে প্রশাসনকে ব্যবহার, আর্থিক সহযোগিতা ও ব্যক্তিগত লোকজনকে মাঠে নামানোর জন্য এক দিনের জন্য এসেছিলেন। কিন্তু দলীয় প্রার্থীর বিজয় ঠেকানো যাবে না বুঝতে পেরে তিনি ঢাকায় ফিরে যান। সেই থেকে তিনি আর এলাকায় আসেননি। কোনো স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগও রক্ষা করেননি তিনি।
দীর্ঘ দিন পরে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে কানুদাসকাঠি নিজের গ্রামের বাড়িতে আসেন। কিন্তু স্থানীয় নেতাকর্মীদের কোনো কিছুই জানাননি। এমনকি সরকারি কোনো সফরের চিঠিও ইস্যু করেননি এবং দলের কোনো কর্মসূচিও দেননি। তিনি এসেই দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কেন্দ্রের কারণ দর্শানো নোটিশপ্রাপ্ত মিলন মাহমুদ বাচ্চু ও তার কিছু সমর্থককে নিয়ে বাড়িতে বৈঠক করেন। এতে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানানো হয় চিঠিতে হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট খাইরুল আলম সরফরাজ অভিযোগ করে বলেন, সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুন কোনো জাতীয় দিবসে এলাকায় আসেন না। ১৫ আগস্ট শোক দিবসের কোনো অনুষ্ঠানেও তিনি যাননি। নয় মাস পরে এলাকায় আসলেও দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্তর সঙ্গে তিনি বৈঠক করেছেন। ফলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা এমপি হারুনের সঙ্গে সাক্ষাৎ না করার বিষয়ে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেন। সেই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করছি।
এ ব্যাপরে ঝালকাঠি-১ আসনের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের সঙ্গে তার মুঠোফোনে কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
তবে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার নিজ বাড়িতে বৈঠক করেন। সেই বৈঠককে তিনি সাংগঠনিক সভা দাবি করে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি আজ অত্যন্ত আবেগাপ্লুত। আমি আসলে আপনারা এত মানুষ যে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসবেন ভাবতেও পারিনি। আমি আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী, কারণ আমার আসতে একটু দেরি হয়েছে। আমি কোনো সরকারি সফরে আসিনি। আমার স্ত্রীর অনুরোধে একটি মসজিদ দেখার জন্য ব্যক্তিগত সফরে এসেছি। উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান যারা হয়েছেন, তাদের আমি স্বাগত জানাই। আমি বেঁচে থাকতে দলকে বিভক্ত হতে দেব না।
Leave a Reply