রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৪ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার:বৃদ্ধা সালেহা বেগম (৭৭) বড়ই অসহায়। তার ভিক্ষার টাকায় চলে দুই নাতী সাজ্জাত হোসেন (১২) ও সাব্বির হোসেনের (৯) পড়াশুনা ও সংসারের যাবতীয় খরচ। দীর্ঘদিন থেকে ওই দুই শিশুর বাবার খবর নেই। তাদের (শিশু) মা মানসিক ভারসাম্যহীন। কয়েকদিন আগে রান্নার জন্য লাকড়ি সংগ্রহ করতে গিয়ে গাছ থেকে পরে সাজ্জাতের বাম হাত ভেঙ্গে গেছে।
টাকার অভাবে তারও চিকিৎসা চলছেনা। নেই তাদের বসতঘর। একখানা বসতঘরের অভাবে চার সদস্যর ওই পরিবারটি চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ঘটনাটি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার দক্ষিণ গোবর্ধন গ্রামের।
বৃদ্ধা সালেহা বেগম বলেন, মোর স্বামীর ভিটা খালি পরে থাকলেও সেখানে নাই বসতঘর। এ কারণে দক্ষিণ গোবর্ধন গ্রামের আবদুল গনি মীরের পরিত্যক্ত একটি তুলার মিলে মানসিক ভারসাম্যহীন কন্যা রেখা বেগম (৩২) ও তার দুই পুত্র (সালেহা বেগমের নাতি) সাজ্জাত ও সাব্বিরকে নিয়ে গত চার বছর থেকে বসবাস করছি।
সালেহা বেগম ভিক্ষা করলেও স্বপ্ন দেখেন তার দুই নাতীকে পড়াশুনা করিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার। সাজ্জাত স্থানীয় একটি প্রাইমারী স্কুলে পঞ্চম শ্রেনীতে ও সাব্বির তৃতীয় শ্রেনীতে পড়াশুনা করছে। সালেহা বেগম প্রতিদিন সকালে ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিয়ে বের হন। দুপুরের পরপরই তাকে ফিরে আসতে হয়।
কারণ রান্নার কাজ তাকেই করতে হয়। মানসিক ভারসাম্যহীন রেখার উৎপাত ঠেকাতে প্রায়ই তাকে মিলের খুঁটির সাথে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। নানারোগে আক্রান্ত সালেহা এখন বড়ই ক্লান্ত। জীবনের শেষ সময়ে তিনি স্বামীর ভিটায় ফিরতে চান।
সূত্রমতে, উপজেলার দক্ষিণ গোবর্ধন গ্রামের জবেদ আলী মীরের কন্যা সালেহা বেগমের বিয়ে হয়েছিলো পাশ্ববর্তী আগৈলঝাড়া উপজেলার মুরিহার গ্রামের বেল্লাত আলী সরদারের সাথে। কন্যা রেখা, সীমা ও স্ত্রীকে (সালেহা) রেখে ১৮ বছর আগে সালেহার স্বামী মারা যান।
এ কারণে তার সংসারে নেমে আসে দৈন্যতা। মেয়ে রেখার বিয়ে হয়েছিল গৌরনদীর বানিয়াশুরী গ্রামের ইয়াকুব আলী ঘরামীর পুত্র কামাল ঘরামীর সাথে। ওই ঘরে জন্মগ্রহণ করে সাজ্জাত, সাব্বির ও কন্যা মিম। ছয় বছর আগে রেখার স্বামী গোপনে আরও একটি বিয়ে করে আত্মগোপন করে।
এরপর থেকেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন রেখা। স্বামীর গৃহ থেকে বিতাড়িত হয়ে তিন সন্তানসহ রেখার আশ্রয় হয় বৃদ্ধ মা সালেহার কাছে। চরম আর্থিক দৈনত্যার মধ্যে নিরুপায় হয়ে কন্যা মিমকে অন্যের কাছে দত্তক দেয়া হয়েছে।
বৃদ্ধা সালেহা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, মোর মাইয়া রেখা পাগল। নাতি সাজ্জাত কয়দিন আগে গাছ থেকে পইর্যা বাম হাত ভাইঙ্গা গেছে। টাহার অভাবে মুই অসুস্থ রেখা ও সাজ্জাতকে ডাক্তার দেহাইতে পারতেছিনা। ছয় বছর পূর্বে মোর স্বামীর দোচালা টিনের বসত ঘরখানা ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়। টাকার অভাবে ঘরখানাও আর মেরামত করতে পারিনি।
এরপর থেকেই পাগল রেখা ও দুই নাতীকে নিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পরেন সালেহা বেগম।
স্থানীয়দের সহায়তায় তিনি আশ্রয় নেন তুলার মিলে। বৃদ্ধা সালেহা বেগম মরার আগে তার স্বামীর ভিটায় ফিরে যেতে চান।
সালেহার জীবনের শেষ ইচ্ছে দুই নাতীকে পড়াশুনা করানো। এজন্য তিনি (সালেহা) প্রধানমন্ত্রীসহ বিত্তবানদের সহযোগীতা কামনা করেছেন।
Leave a Reply