বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ০২:০৫ পূর্বাহ্ন
এম.কে. রানা ॥ বাংলাদেশ পুলিশ দেশের মানুষের জানমালের হেফাজত, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ নানাবিধ কার্য সম্পাদন করতে হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, পুলিশ হবে জনগণের বন্ধু।
সত্যিকারার্থে জনগণের বন্ধু হওয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন তা করতে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ।
আইজিপি বেনজির আহমেদ দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বলেছেন, তিনি কলঙ্কমুক্ত পুলিশ বাহিনী এবং পুলিশকে জনগণের বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে চান। গত ৯ জুলাই আইজিপি বেনজির আহমেদ দেশের ৬শ’ ৬০টি থানার অফিসার ইনচার্জদের সাথে প্রায় তিনঘন্টা ব্যাপী ভিডিও কনফারেন্স করেন। ওই কনফারেন্সে আইজিপি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা ব্যক্ত করেন।
সমসাময়িক বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালে পুলিশের মানবিকতা ফুঁটে ওঠে। করোনা মোকাবেলায় সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে কাজ করে সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে আজ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে গোটা পুলিশ বাহিনী।
ফেনীর নুসরাত হত্যা, বরগুনায় সিফাত হত্যার পর সর্বশেষ মেজর (অবঃ) সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর ফের আলোচনায় উঠে আসছে পুলিশের অপরাধের নানান ফিরিস্তি। এ কারণে বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালীন সময়ে বাংলাদেশ পুলিশ যে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে তা যেন নিমিষেই ভুলতে বসেছে এ দেশের মানুষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে দুর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্যদের তালিকা করে তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।
আইজিপি’র নির্দেশনা বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান (বিপিএম-বার)। আর এটিকে সুযোগ হিসেবে ধরে নিচ্ছে একটি অসাধু চক্র। নিজেদের দোষ ঢাকতে তারা ব্যবহার করছেন সাধারণ কিছু মানুষকে। অনুসন্ধানে জানা যায়, যে সকল মানুষদের দিয়ে দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের ইমেজ নষ্ট করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে তারা নিজেরাই কোন না কোনভাবে অসৎ কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত।
স্থানীয় পর্যায় এবং পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তা নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্য একে অপরের বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়ানো শুরু করেছেন। কেননা বর্তমান বিএমপি’র ৪টি থানার অফিসার ইনচার্জগণ (ওসি), সংশ্লিষ্ট জোনের দায়িত্বে থাকা সহকারী পুলিশ কমিশনারগণ, উপ-পুলিশ কমিশনারগণ রয়েছেন তাদের প্রত্যেকেই দক্ষ, সৎ ও নিষ্ঠাবান। অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বর্তমান বিএমপি অনেকটাই পরিচ্ছন্ন। আর এ কারণেই অসাধু লোকদের আনাগোনা কমেছে থানাগুলোতে। প্রত্যেকটি থানাই এখন দালালমুক্ত। তবে বরাবরের মতোই অসাধু চক্রটি থেমে নেই। অনুসন্ধান করলে ওই সকল অসাধু ব্যক্তি/পুলিশদের চিহ্নিত করা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
একাধিক কর্মকর্তার সাথে আলাপকালে জানা যায়, বর্তমান বিএমপি কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খানের দিক নির্দেশনায় প্রত্যেকটি থানার অফিসার ইনচার্জগণ থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি সদস্য পেশাদারিত্ব মনোভাব নিয়ে কাজ করছেন। ফলে গত ৮ মাসে ভাল কিছু অর্জনও হয়েছে। বিশেষ করে মাদক উদ্ধার, ক্লুলেস/ক্লুসেস মামলার রহস্য উদঘাটন উল্লেখযোগ্য।
‘ঘরের শত্র“ বিভিষণ’ প্রবাদ বাক্যটি সর্বকালেই প্রচলিত। সেই ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমাদের সন্তানরাই নাম লিখিয়েছিল রাজাকারের খাতায়। ঘরের শত্র“ হয়েই সেদিন তারা হাত মিলিয়েছিল পাকিস্তানী হায়েনাদের সাথে। দেশের নিরীহ নারী পুরুষের উপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাট করেছে তারা। সেই সব ঘরের শত্র“র কারণেই কল্পনাতীত ক্ষতিসাধণ হয়েছিল আমাদের।
স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ঘাতকদের (যারা এদেশেরই সন্তান) বিশ্বাসঘাতকতার কারণেই প্রাণ হারিয়েছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
সম্প্রতি কাউনিয়া থানার ওসি আজিমুল করিমকে নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকসহ দু’একটি অনলাইন পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদে যে তথ্য উপাত্ত তুলে ধরা হয়েছে তা নিছক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় ৪ বছর বরিশাল পুলিশের সবচেয়ে বড় রেশন স্টোরে অত্যান্ত সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। আর ভাল কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ক্রেস্টও পেয়েছেন তিনি। ওসি আজিমুল করিমের কর্মকাণ্ডে কোনঠাসা হয়ে পড়া দুর্বৃত্তরা সংবাদকর্মীকে ভুল তথ্য দিয়ে এ ধরণের সংবাদ প্রকাশ করেছে বলে দাবী করছেন সংবাদ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। পত্রিকাটির সম্পাদক বরাবর তারা সঠিক তথ্যসহ একটি প্রতিবাদলিপিও পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে বরিশালে যোগদান করার পরপরই পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান (বিপিএম-বার) বিএমপিতে আমূল পরিবর্তন আনার কাজ শুরু করেন। যার ধারাবাহিকতায় কমিউনিটি পুলিশিং সভা, কিশোর গ্যাং কালচার বন্ধ করা, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাউন্সিলিং, বিট পুলিশিং এবং প্রতিটি থানায় একটি নির্দিষ্ট তারিখে প্রতিমাসে ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠানসহ নানাবিধ কার্যক্রম চালু করেন।
ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠানে তিনি ভুক্তভোগীদের কথা সরাসরি শুনেছেন এবং সমাধানও হয়েছে অনেকের সমস্যা। তিনি পুলিশ সদস্যদের বলেছেন, সুনির্দ্দিষ্ট তথ্য ও প্রমান ছাড়া কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করা যাবে না। সেই নির্দেশনা মোতাবেক বিএমপি’র প্রতিটি সদস্যই কাজ করে যাচ্ছেন। তবে দু’একটি ব্যতিক্রম ঘটনা থাকতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশের রয়েছে অসংখ্য সাহসিকতা ও মানবিকতার ইতিহাস। ১৯৭১ সালে পুলিশ সদস্যরাই প্রথম পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নিয়েছিল। দেশের মুক্তিকামী মানুষের পাশে দাড়িয়েছিল। তবে কেন আজ এই পুলিশ সদস্যরাই নানা সমালোচনার জন্ম দিচ্ছে?
পুলিশ হচ্ছে সমাজের দর্পণ। সমাজ ভাল হলে পুলিশও ভাল হতে বাধ্য। প্রত্যেকটি স্তরে যেমন ভাল মানুষ আছে, তেমনি খারাপ লোকও রয়েছে। পুলিশের সমালোচনা করুন। যে সমালোচনা দেশ ও দশের উপকারে আসবে। কারো দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করুন। পুলিশে যারা চাকরি করেন, তাদের কর্মকাণ্ড খেয়াল করলে দেখবেন একমাত্র তারা-ই ২৪ ঘন্টা অন-ডিউটি করছে। যা অনুধাবন করলে তাদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাড়বে। আর সেই শুরুটা হোক আপনার মাধ্যমে। আপনি পুলিশের না হলেও পুলিশ আপনার পাশে থাকবে।
Leave a Reply