পুলিশের কঠোর বহিরঙ্গের আড়ালে নরম একটা মন আছে Latest Update News of Bangladesh

মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:০৮ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩
সংবাদ শিরোনাম:
‘সরকারী ভিপি সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য কৌশলে লিটন চন্দ্র শীল হয়েছেন ভিপি কৌশলী’ বরিশালে ডেভিল হান্ট অভিযানে গ্রেপ্তার আ.লীগ নেত্রী সোমা বরিশালে তামিম-মুশফিকদের সংবর্ধনা, মুহূর্তেই রূপ নিল ক্ষোভে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এ দুই দিনে গ্রেপ্তার ১,৩০৮ জুলাই অভ্যুত্থান স্মরণে স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করলেন প্রধান উপদেষ্টা শেখ হাসিনার ফাঁদে না পড়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের রাজাপুরে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও মাদকের প্রতিবাদে মানববন্ধন সব দল ও গোষ্ঠীকে নিয়ে নিরপেক্ষ থাকতে চায় ইসি বিপিএল চ্যাম্পিয়ন বরিশাল ট্রফি নিয়ে বেলস পার্কে, বাধভাঙা উল্লাস দর্শকদের দীর্ঘ ছর পর বরিশাল পলিটেকনিকে ছাত্রশিবিরের নবীনবরণ অনুষ্ঠান




পুলিশের কঠোর বহিরঙ্গের আড়ালে নরম একটা মন আছে

পুলিশের কঠোর বহিরঙ্গের আড়ালে নরম একটা মন আছে




ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ পুলিশ মানেই রুক্ষ মুখ, নীল পোশাক আর লাঠিপেটা করার যন্ত্র নয়, পুলিশের কঠোর বহিরঙ্গের আড়ালে নরম একটা মন আছে। সেই ধারনার শাখা প্রশাখা ছড়াতে শুরু করেছে বরিশালের প্রতিটি অঞ্চলে। দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওবার পর তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। মানবিক পুলিশের আচরনে পুলিশের প্রশংসা এখন মানুষের মুখে মুখে।

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে চলছে সাধারণ ছুটি কিন্তু পুলিশ সদস্যদের কোন ছুটি নেই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে দিন রাত কাজ করার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাসহ সকল শ্রেনীর মানুষের জন্য সব রকমের কাজ করছেন পুলিশ সদস্যরা। সাধারণ মানুষের যাতে কষ্ট না হয় সে জন্য ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা।

এইতো কয়েকদিন আগের ঘটনা। করোনার কারণে সরকারের নির্দেশে ঘরে বন্দি হয়ে পরেন প্রতিবন্ধী গৌরী হালদারের দিনমজুর স্বামী মিলন হালদার। ফলে চার সদস্যর পরিবারে তাদের চরম খাদ্য সংকট চলতে থাকে। প্রতিদিন ত্রাণের আশায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাতের ওপর ভর করে চলা শারিরিক প্রতিবন্ধী গৌরী হালদার বাড়ির সামনের রাস্তায় বসে থাকেন। কিন্তু তার ভাগ্যে জোটেনি কোন ত্রাণের খাদ্য সামগ্রী। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেখে তাৎক্ষনিক প্রতিবন্ধী গৌরী হালদারের বাড়িতে পায়ে হেঁটে বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী নিয়ে হাজির হন জেলার আগৈলঝাড়া থানার চৌকস কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আফজাল হোসেন।

উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের ফুল্লশ্রী গ্রামের গৌরী হালদারের বাড়িতে গিয়ে ওসি যখন তার (গৌরী) হাতে চাল, ডাল, পিয়াজ, আলুসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী তুলে দিয়েছেন তখন হাউমাই করে কেঁদে ফেলেন প্রতিবন্ধী গৌরী। ওসি আফজাল হোসেন জানান, করোনায় জেলা পুলিশের বিশেষ উদ্যোগে আগৈলঝাড়ার শতাধিক পরিবারের মাঝে বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও তিনি তার বেতনের টাকায় বাকাল, জবসেন, দাসেরহাট, পূর্ব সুজনকাঠী গ্রামের হতদরিদ্র ভ্যান ও রিকসা চালক, চায়ের দোকানদারসহ শতাধিক দিনমজুর পরিবারের মাঝে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী বিতরন করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংকটময় মুহুর্তে গৌরনদী মডেল থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) গোলাম ছরোয়ারের উদ্যোগে থানা পুলিশ সদস্যদের বেতনের টাকায় কর্মহীন দুই শতাধিক পরিবারের মাঝে বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

গত ২৫ এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার গুজবে উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের পীরেরপাড় এলাকার রাস্তার পাশে পরেছিলো মানসিক ভারসাম্যহীন ৬০ বছরের অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মরদেহ। করোনা আতঙ্কের গুজবে অজ্ঞাত পরিচয়ধারী মুসলিম ওই ব্যক্তির মরদেহের দাফনের জন্য যখন কেউ এগিয়ে আসেননি তখন থানা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরত্বে ঘটনাস্থলে ছুটে যান উজিরপুর মডেল থানার ওসি জিয়াউল আহসান। ওসি তার নিজের টাকায় ওই ব্যক্তির দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করেছেন।

একইভাবে গত ১৮ এপ্রিল নগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ডের আমবাগান এলাকায় করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যায় ১৮ মাস বয়সী এক শিশু। নিজ ঘরে শিশুটির মৃত্যুর খবরে পাড়া-প্রতিবেশী কেউ এগিয়ে আসেনি। বাবা শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তিনি তার শিশু পুত্রের লাশ নিয়ে পরেন বিপাকে। আশপাশের বাসিন্দাদের কাছে আকুতি মিনতি করলেও ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি।

উপায়অন্তুর না পেয়ে প্রতিবন্ধী পিতা বাসার বাইরে অবস্থান নিয়ে কাঁদতেছিলেন। এমন সময় কোতয়ালি মডেল থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) মোঃ নুরুল ইসলাম পিপিএম’র নির্দেশে মৃত্যুর ছয় ঘন্টা পর থানা পুলিশ শিশুর লাশের গোসল করিয়ে জানাজা শেষে দাফন করেন।

অপরদিকে প্রাণঘাতী মহামারী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে রিকশা চালক ও সাধারণ পথচারীদের মাঝে মাক্স বিতরন করেছেন উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মোঃ জাকির হোসেন মজুমদার, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) জাকারিয়া রহমান জিকু, সহকারী কমিশনার ট্রাফিক (দক্ষিণ) মাসুদ রানা, সহকারী কমিশনার (উত্তর) একেএম ফয়েজুর রহমান, টিআই আবদুর রহিম, বিদ্যুত চন্দ্র দে,সার্জেন্ট রানা ও হাসান।

এদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কিংবা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হওয়া ব্যক্তিদের দাফন কার্য সম্পাদনের জন্য ১৭ শতক জমি দান করে মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন জেলার বানারীপাড়া থানায় কর্মরত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জাহিদুল ইসলাম জাহিদ। মঙ্গলবার সকালে তিনি (জাহিদুল ইসলাম) জানান, তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার সুবিদখালি ইউনিয়নের দেউলি গ্রাম।

যেখানে তার বাবা মরহুম ইসমাইল সিকদারের নামে একটি কল্যাণ ফাউন্ডেশন রয়েছে। সেই ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোঃ জাহিদুল ইসলাম ও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা ১৭ শতক জমি দান করেছেন কবরস্থানের জন্য। যারমধ্যে জাহিদুল ইসলাম নিজে ও তার অনুপ্রেরণায় চাচা আবদুল হাই, ইউসুফ সিকদার, মাওলানা আবদুস ছালাম এবং চাচা মরহুম ডাঃ ইসহাক সিকদারের পরিবারের সদস্যরা একমত হয়ে কবরস্থানের জন্য এ জমি দান করেছেন।

তিনি আরও জানান, প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার মধ্যে যদি কোনো মানুষ মারা যায় তাদের দাফনের জন্য জমি না থাকলে তাদের এই কবরস্থানে দাফন করা যাবে। এছাড়াও করোনা ভাইরাস মহামারি ব্যতীত নদী ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের মরদেহ এবং বেওয়ারিশ মরেদহও এই কবরস্থানে দাফন করা যাবে।

এএসআই জাহিদুল ইসলাম এর আগে বানারীপাড়ায় করোনা ভাইরাসের বিস্তৃতিরোধে লকডাউন ও হোম কোয়ারেন্টিনে থাকায় কর্মহীন হয়ে পরা হতদরিদ্রদের মাঝে নিজের বেতনের টাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী এবং শিশুসহ কর্মহীনদের জন্য ধর্মীয় গ্রন্থ ও খেলার সামগ্রী বিতরণ করেছেন।

জানা গেছে, জেলা পুলিশ সুপারের উদ্যোগে ইতোমধ্যে জেলার দশটি থানার প্রত্যেকটিতে শতাধিক পরিবারের মাঝে বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। সূত্রমতে, গোটা বরিশালজুড়ে লকডাউন ও হোম কোয়ারেন্টিন সফল করতে কাজ করে যাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। দিন রাত এক করে কাজ করা পুলিশ সদস্যদের মধ্যেও করোনা আতঙ্ক বিরাজ করছে। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় অধিকাংশ থানার পুলিশ সদস্যদের যারা মাঠে কাজ করছেন, তাদের নিজ নিজ পরিবার থেকে আলাদা রেখে অফিস কোয়ারেন্টিনে থেকে গত এক মাস ধরে কাজ করতে হচ্ছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে বিষয়টি স্পষ্ট এত বড় সংকট পূর্ণ মুহুর্তে নিজের জীবন বাঁজি রেখে মাঠপর্যায়ে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছেন পুলিশ সদসদ্যরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে শুধু লাঠি হাতেই নয়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে, কখনও কখনও পলায়নকৃত করোনা রোগীকে ধরে আনা, করোনা আক্রান্তের বাসা, ভবন ও এলাকা লকডাউন করা, ত্রাণ বিতরণসহ নানা কাজে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা। সূত্রমতে, পুলিশের সুরক্ষার বিষয়ে এখনও পর্যাপ্ত পরিমাণ সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহ করা হয়নি। এতে ঝুঁকিও বাড়ছে। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরী হয়ে পরেছে।

সচেতন বরিশালবাসীর মতে, বিশ্বের এমন পরিস্থিতি একসময় বদলে যাবে। বদলে যাবে বাংলাদেশও। শুধু মানুষের চাওয়া পুলিশের ভাবমুর্তি অক্ষুন্ন থাকুক করোনার বিপদ কেটে গেলেও।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD