বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৯ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক:
পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে কলেজের অফিস করনিক রেজাউল করিম রিপন (৪২) হত্যাকান্ডে হতবাক এলাকাবাসী। সবার চোখের সামনে এ ধরনের একটি লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে যাবে তা মাথায়ই আসেনি কারো। শত শত জনতার সামনে এ নারকীয় হত্যাকান্ডে পুরো এলাকা যেন থমকে গেছে। রিপনের এ মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে এলাকাবাসী সহ স্বজনরা একপ্রকার বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।এধরনের প্রকাশ্যে পৈশাচিক হত্যাকান্ড দু’চার যুগে এ এলাকায় ঘটেছে বলে কারো জানা নেই। তাই রবিবার বিকালে এঘটনা ঘটার সাথে সাথে রিপনের মাথায় কুঠার বিদ্ধ রক্তাক্ত দেহ সড়কের উপর পরে থাকতে দেখে থ’খেয়ে যান প্রত্যক্ষদর্শীরা। মানুষ এতটা পাষন্ড হতে পারে তা ভেবে কুল পাচ্ছে না অনেকেই। ঘটনার পর রাত ৯টা অবদী বিভিন্ন গ্রাম থেকে দল বেধে নারী পুরুষ ছুটে আসেন চন্ডিপুর বাজারে।
নিহত রিপনের স্ত্রী সহ একটি ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে। স্ত্রী সন্তানরা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেননা পৃথিবী ছেড়ে এভাবে রিপনের চলে যাওয়াকে। রিপন স্থানীয় চন্ডিপুর কে.সি টেকনিক্যাল কলেজের অফিস করণিক ছিলেন। স্বদালাপী ও ঠান্ডা স্বভাবের এ মানুষটির উপর এমন দুর্যোগ নেমে আসবে তা বিশ্বাসই করতে পারছেন না ঐ কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী সহ এলাকার জন সাধারণ।খুনী কাঞ্চন সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানাযায়, আগে থেকেই সে বদমেজাজী ও বখাটে টাইপের ছিল। সংসারের কোন কাজ কর্ম করত না। সারাদিন রাস্তাঘাট ও হাটবাজারে আড্ডা দিত। প্রায়ই এলাকায় লোকজনের সাথে মারামারিতে লিপ্ত থাকত সে। মাঝে মাঝে নেশাও করত। কাঞ্চনের মা স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তার তিন ছেলের মধ্যে কাঞ্চনই সবার বড়। ভাই এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে কাঞ্চনের সম্পর্ক ভাল ছিল না। পিতামাতার অবাধ্য সন্তান ছিল কাঞ্চন।
ঘটনার দিন সকালে বাড়ি থেকে একটি কুড়াল নিয়ে বের হয় সে। বিকালে চন্ডিপুর বাজারে একটি কামাড়ের দোকানে কুড়ালটি সান দেয়। ঘটনার আগে কাঞ্চনকে হাতে কুড়াল নিয়ে বাজারে ঘোরাফেরা করতে দেখে স্থানীয় জনতা। তখনও বিষয়টি আচ করতে পারেনি কেউ। ঘটনা চক্রে রিপন নিজ বাড়ি থেকে একটি ভ্যান যোগে চন্ডিপুর বাজারে মজনুর মিষ্টির দোকানের সামনে আসা মাত্রই পেছন থেকে আক্রমন করে কাঞ্চন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চলন্ত অবস্থায় পিছন থেকে কুড়াল দিয়ে কোপাতে শুরু করলে প্রথম দুটি কোপ লক্ষভ্রষ্ট হয়। এসময় প্রতিরোধ করার চেস্টা করলে প্রথমে রিপনের হাতে, পায়ে ও পিঠে কয়েকটি কোপ লাগে।এতে এক হাতের ৩টি আঙ্গুল বিছিন্ন হয়ে যায়। পরে মাথায় কুড়াল দিয়ে কোপ দিলে এক কোপেই ঘটনা স্থলেই রিপন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। কিছুক্ষনের মধ্যেই ছটফট করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ঘটনার সময় অসংখ্য জনতা দর্শকের মত স্বচক্ষে বিষয়টি দেখলেও কেউ প্রতিরোধ করতে এগিয়ে আসেনি। ঘটনার পর ঘাতক কাঞ্চন বেপারী (৩৫) কে স্থানীয় জনতা ধরে চন্ডিপুর পুলিশ ক্যাম্পে সোপর্দ কারে।
পরে রাত ৯টার দিকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সোমবার সকালে নিহতের লাশ ময়না তদন্তের জন্য পিরোজপুর মর্গে পাঠানো হয়। রোববার রাতেই এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহতের স্ত্রী হাসি বেগম বাদী হয়ে কাঞ্চন বেপারী (৩৫) কে আসামী করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ইন্দুরকানী থানায় মামলা নং ৪/১৮, তারিখ ১৮/১১/১৮ ধারা ৩০২। মামলার আসামী গ্রেফতারকৃত কাঞ্চন বেপারীকে সোমবার জেলহাজতে প্রেরন করা হয়।
নিহত রিপনের চাচাতো ভাই জাকির হোসেন হাওলাদার জানান, খোলপটুয়া গ্রামের আবুবক্কর বেপারীর ছেলে কাঞ্চনের সাথে চরবলেশ্বর গ্রামের খালেকের মেয়ে মুনিয়া আক্তারের সাথে ৩/৪ বছর আগে বিবাহ হয়। কিছুদিন যেতে না যেতেই তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হয়। তাদের ঘরে একটি সন্তান রয়েছে। কাঞ্চন প্রায়ই মুনিয়াকে মারধর করত। এ কারনে গত ৫/৬ মাস যাবত স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়িতে অবস্থান নেয় মুনিয়া। কিছুদিন আগে থেকে মুনিয়ার পরিবারের পক্ষ হতে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন কাঞ্চন। আর এঘটনায় রিপনকে দোষারপ করে কাঞ্চন। রিপন সম্পর্কে কাঞ্চনের চাচা শ্বশুর হয়। তবে রিপন তাদের পারিবারিক এ কলহের ব্যাপারে কোন নাগ গলাননি বলে তার চাচাতো ভাই জাকির জানান।
ইন্দুরকানী থানার ওসি হাবিবুর রহমান জানান, রবিবার বিকাল ৫ টার দিকে চন্ডিপুর বাজারে স্থানীয় একটি কলেজের অফিস করণিককে প্রকাশ্যে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহতের স্ত্রী। ঐ যুবককে ঘটনার পরপরই আটক করা হয় এবং তাকে সোমবার পিরোজপুর জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
Leave a Reply