বুধবার, ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩০ অপরাহ্ন
বাউফল প্রতিনিধি॥ করোনাকালীন সময়ে শিক্ষা প্রতষ্ঠান বন্ধ থাকায় সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নির্ধারিত কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। কিন্ত ক্লাস নেওয়া ও শিক্ষকদের পাঠদান করার পদ্ধতী দেখে শিক্ষার্থীদের অভিবাবকদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে অনলাইন ক্লাস।
অভিবাবক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ বলছেন, বর্তমানে উপজেলায় যে পদ্ধতীতে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চলছে তা অনেকটা দায়সারা।
বাউফল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ৬০ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৬৭ টি মাদ্রাসা ও ১২ টি কলেজ রয়েছে। এরমধ্যে মাত্র ২০টি মাধ্যমিক, ১২ টি মাদ্রাসা এবং ৩টি কলেজে অনলাইন ক্লাস নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।
সূত্র জানায়, সংসদ টেলিভিশেনে প্রচারিত শ্রেণি কার্যক্রমের সঙ্গে সমন্বয় করে অনলাইন শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ফেইসবুক লাইভ, জুম অথবা বিদ্যালয় শিক্ষকগন কর্তৃক পরিচালিত মানসম্মত রেকর্ডকৃত ভিডিও ক্লাস সমুহ ইউটিউবে আপলোড করে ভিডিও লিংক মাউশির (মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের) নির্ধারিত মেইলে প্রেরণ করতে হবে।
নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলার কিছু শিক্ষক অনলাইন ক্লাস করছেন তবে তা ফেইসবুকে লাইভ ভিডিও কিংবা জুম সফ্টওয়ারের মাধ্যমে না। তারা নিজেরা ভিডিও রেকডিং করে নিজেদের ফেইসবুক ওয়ালে পোষ্ট করছেন। ওই পোষ্টে লক্ষ করে দেখা গেছে বানানে ভুল। কোন কোন ভিডিও অপরিচ্ছন্ন, শব্দ অস্পষ্ট ও কাঁপে। যা মান সম্মত নয় বলে দাবী করেন অভিবাবক ও শিক্ষার্থীগন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, যাদের উদ্দেশ্যে এই ক্লাসগুলো করা হচ্ছে তাদের মধ্যে শতকরা ৫ জন শিক্ষার্থীও সেগুলো দেখেন না। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, গ্রামাঞ্চলের অনেক শিক্ষার্থীরই দরিদ্র পরিবারের তাই তাদের স্মার্ট ফোন নেই, যাদের আছে তারা অর্থ ব্যয় করে ডাটা কিনে দেখারও সুযোগ কম।
অপর দিকে যেসকল স্বচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীদের স্মার্ট ফোন রয়েছে তারা জানতে পারছে না কোন শিক্ষক কোন সময়ে অনলাইন ক্লাস নিবেন। আবার অনেক শিক্ষার্থীই জানিয়েছেন ফেইসবুকে শ্রেণি শিক্ষকদের সাথে বন্ধুত্ব করাটা অনেকটা বিব্রতকর অবস্থা হয়ে দ্বাড়ায়।
শিক্ষার্থীরা জানায়, অনলাইন ক্লাস একমূখী। না বুঝলে স্যারের কাছে প্রশ্ন করা যায়না। ফলে অনলাইন ক্লাসের প্রতি আগ্রহ কম। এর থেকে বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য বিধি অনুসরন করে প্রতিদিন একেক শ্রেণির জন্য এক একটি ক্লাস চালু করলে তাদের সুবিধা হতো।
উপজেলার বীরপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম রাসেল বলেন, গ্রামে এখনো মোবাইল ইন্টারনেটে অনেক দুর্বল। অনেক সময় বাসা-বাড়িতে বসে ক্লাসের বক্তব্য রেকর্ড করে নিতে হয়। নেটের জন্য প্রতিমাসে প্রায় দুই হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। এরপরেও এর সুফল শিক্ষার্থী পর্যায়ে পৌঁছে না।
ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তি ঘোষ বলেন, অনলাইন ক্লাসে সিংহভাগ শিক্ষার্থীই অনুপস্থিত থাকে। পরে লিংক খুঁজেও তাদের ক্লাস শোনার সুযোগ হয়না। অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করার সুযোগ নাই। ফলে এটি একমূখী বলেও তিনি স্বীকার করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক কলেজ, মাদ্রাসা ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধানগণ জানান, আমরা শুধু সরকারের নির্দেশনা পালন করছি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, গ্রামা লের শিক্ষার্থীরা এর সুফল কতটা পাচ্ছে সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। শিক্ষকরা এটাকে উলুবনে মুক্তা ছাড়ানোর সঙ্গে তুলনা করেছেন।
বাউফল উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো. নূরুন্নবী জানান, ক্রমান্বয়ে সকল বিদ্যালয়, মাদ্রাসা এবং কলেজগুলোতে অনলাইন ক্লাস চালু করার প্রচেষ্ট চলছে। তবে অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ হিসেব করার মতো হচ্ছেনা বলে তিনি স্বীকার করেন। এবিষয়ে আরো বাস্তব উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
Leave a Reply