বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৮ অপরাহ্ন
পটুয়াখালী প্রতিনিধি॥ পটুয়াখালীর দুমকিতে প্রকল্প-২ এর আওতায় ভিটি আছে, ঘর নেই- এমন হতদরিদ্র গৃহহীন অসহায় পরিবারকে সরকারি বরাদ্দে ঘর নির্মাণ করে দেয়ার তালিকা প্রণয়নে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। রাজনৈতিক প্রভাবে অসচ্ছল পরিবারগুলোর সহজপ্রাপ্যতা ব্যাহত করে অপেক্ষাকৃত ধনী ও সম্পদশালীরা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত সরকারি বরাদ্দের ঘর নির্মাণ তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করিয়ে নিয়েছে। এতে প্রকৃত অসচ্ছল গৃহহীন পরিবারগুলো তাদের ন্যায্য প্রাপ্তি (সরকারি বরাদ্দের ঘর) সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, প্রকল্প-২ এর আওতায় স্থানীয় প্রশাসন প্রণীত তালিকায় দুমকি উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের তিন শতাধিক গৃহহীন অসচ্ছল পরিবারকে সরকারি বরাদ্দে বসতঘর নির্মাণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। জুন মাসে দুমকি উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল-ইমরান, লেবুখালী ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা (তহসিলদার) মো. সেলিম ও সার্ভেয়ার মো. মজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত তালিকাটি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। প্রেরিত তালিকার দুই-তৃতীয়াংশই সচ্ছল পরিবার এবং প্রত্যেকেরই বসবাসের উপযোগী পাকা, আধপাকা ও টিনশেডের বসতঘর থাকার অভিযোগ উঠেছে।
একই পরিবারের একাধিক সদস্যের নামও ওই তালিকায় রয়েছে। এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা না হলেও পিত্রালয়ের ঠিকানা ব্যবহার করে এ তালিকায় নাম ওঠানো হয়েছে। কেউ কেউ অঢেল ধনসম্পদের মালিক হলেও ছেলেমেয়ের নামে সরকারি বরাদ্দের পাকা ঘর পাওয়ার লোভ সামলাতে পারেননি।
চিহ্নিত দালাল চক্রের মাধ্যমে ২০-২৫ হাজার ক্ষেত্রবিশেষে আরও বেশি টাকা লেনদেনে জরাজীর্ণ গোয়ালঘর কিম্বা পাকের ঘরের ছবি দেখিয়ে ওই তালিকায় নাম দেয়া হয়েছে। তবে ভয়ে কেউ ওই দালাল চক্রের নাম প্রকাশ করছেন না।
উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের চরবয়ড়া গ্রামের বাসিন্দা বাবুল হাওলাদার, মুরাদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মোতালেব ফকিরের ছেলে রিপন ফকির, একই এলাকার মিজানুর শরীফ বলেন, বসবাসের উপযোগী ঘর না থাকলেও টাকা না দিতে পারায় আমাদের নাম ঘরের তালিকায় আসেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চরবয়েড়া গ্রামের জনৈক বাসিন্দা অভিযোগ করেন, প্রণীত তালিকায় একাধিক ব্যক্তির নাম রয়েছে যারা সচ্ছল ব্যক্তি এবং দালান কোঠার মালিক। টাকার বিনিময়ে একই পরিবারের দুই তিনজনের নামেও সরকারি ঘর পাওয়ার তালিকায় ঢুকানো হয়েছে। এভাবে শুধুমাত্র শ্রীরামপুর বা মুরাদিয়ায় নয়, পুরো উপজেলার ৫ ইউনিয়নের তালিকা প্রণয়নেই অনিয়ম দেখা যাচ্ছে।
মুরাদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাফর উল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, সরকারি খরচে ঘর বরাদ্দের তালিকা ভূমি অফিস করেছে। আমার ইউনিয়ন থেকে তালিকা চেয়েছিল। ৭৫ জনের একটি তালিকা জমাও দিয়েছিলাম। কিন্তু চূড়ান্ত তালিকায় মাত্র ৭-৮টি নাম আছে, বাকিদের নাম বাদ গেছে।
শ্রীরামপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম সালাম জানান, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। কারা তালিকা করেছে তাও জানি না। তবে আমরা যদি কোনো তালিকা দেই তা কখনই বাস্তবায়ন হয় না।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল ইমরান বলেন, প্রকল্পের বিধিবিধান অনুসরণেই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। বিশেষত করোনাকালীন দুর্যোগের কারণে শতভাগ যাচাই-বাছাই সম্ভব হয়নি। এতে দুই-একটি ভুলত্রুটি থাকতে পারে।
আর্থিক লেনদেন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার জানা নেই- এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কেউ কারও বিরুদ্ধে আমার কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে এবং অভিযুক্তের প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শঙ্কর কুমার বিশ্বাস বলেন, প্রকল্প-২-এর ঘর বিতরণ তালিকা তৈরির বিষয়টি আমি অবগত। করোনা পরিস্থিতির কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শতভাগ যাচাই করা সম্ভব হয়নি। দুই-একটা ত্রুটি থাকলে বা বের হলে তা বাতিল করা যাবে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট হারুন অর রশিদ হাওলাদার এ প্রসঙ্গে বলেন, জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিরা সুপারিশ করবে- এটা স্বাভাবিক ঘটনা। সুপারিশ আমলে নেয়া না নেয়ার এখতিয়ার তাদের। নিয়মবহির্ভূত কাজ করলে তার দায় তালিকা প্রণয়নকারীদের এবং জবাবদিহিও তারা করতে বাধ্য।
Leave a Reply