মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২২ অপরাহ্ন
আমজাদ হোসেন, বাউফল প্রতিনিধি॥ পটুয়াখালীর বাউফলে সেচ সংকটে বোরো ধানের চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। সরকারি সুযোগ না পেয়ে অধিকাংশ কৃষক চড়া দামে পাম্প ভাড়া নিয়ে বোরো ধানের চাষাবাদ করছেন। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে সেচনালা নির্মাণ করায় তা কৃষকের কোন উপকারে আসছে না।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছর (২০২০-২১) বাউফল উপজেলায় মোট ৫০০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর করোনা ভাইরাস ও অস্বাভাবিক জোয়ারের কারনে কাঙ্খিত আমন ধানের উৎপাদন হয়নি। তাই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বোরো ধান চাষাবাদের জন্য কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাউফলে মোট ১৩৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ করা হয়েছিল। দুর্যোগের ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য এ বছর ৩ গুণ বাড়িয়ে ৫০০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ করা হচ্ছে। কিন্তু বোরো ধান চাষাবাদের জন্য অন্যতম প্রধান উপাদান পানি পাওয়া যাচ্ছে না।
নওমালা ইউনিয়নের বটকাজল গ্রামের কৃষক ফারুক সিকদার বলেন, জৌতা-নওমালা-বগা খালটি খনন না করায় স্থানীয় কৃষকরা বোরো ধানের চাষাবাদ করতে পারছেন না।
জৌতা গ্রামের কৃষক রব খলিফা বলেন, বোরো ধানের চাষ করে এখন পানি পাচ্ছি না। কয়েকদিন আগে গ্রামের সবাই ওই খালটির কচুরিপানা পরিস্কার করেছি। কিন্তু নাব্যতা সংকটের কারনে পানি আসছে না। ওই এলাকায় এবার যারা কষ্ট করে বোরো ধানের চাষ করেছেন পানির অভাবে এখন তাদের মাথায় হাত পড়েছে। একই অবস্থার কথা জানান চন্দ্রপাড়া ব্রিজ সংলগ্ন সূর্যমণি গ্রামের মিজান গাজী। তিনি এ বছর দেড় একর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ করেছেন।
প্রতি ঘন্টায় ১৫০ টাকা পাম্প ভাড়া এনে তিনি ক্ষেতে পানি দিচ্ছেন। পানির কারনে বোরো ধানের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলে কৃষকরা লাভবান হতে পারবেন না বলে জানান তিনি। এদিকে বাউফলের বিভিন্ন এলাকায় অপরিকল্পিত ভাবে সেচনালা নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে সূর্যমণি ইউনিয়নের রামনগর ক্লাবঘর এলাকায় ভূগর্ভস্থ সেচনালা নির্মাণ করে বিএডিসি। নির্মাণের পর থেকে একদিনের জন্য ওই সেচনালা ব্যবহার হয়নি বলে জানান রামনগর সেচ প্রকল্পের সভাপতি হাফিজুর রহমান মুন্সি। একই অবস্থা বীরপাশা ও সূর্যমণি সেচ প্রকল্পের।
বিএডিসি সূত্র জানায়, বাউফল উপজেলায় মোট ২২ কিলোমিটার সেচনালা নির্মাণ করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ১৯ কিলোমিটার সেচনালা কৃষকের কোন উপকারে আসছে না। এভাবে নির্মাণের পর অধিকাংশ সেচ প্রকল্পই চালু করা হয়নি।
তবে অপরিকল্পিতভাবে সেচনালা নির্মাণের অভিযোগ অস্বীকার করে বাউফল বিএডিসি’র উপসহকারি প্রকৌশলী মোশারেফ হোসেন বলেন, শুধুমাত্র বিদ্যুত বিল দিয়ে কৃষকরা প্রতিটি সেচপ্রকল্পের সুবিধা নিতে পারেন। কৃষকদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব থাকায় তারা সেচ প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারছেন না বলে দাবী করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে বাউফলের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, সেচনালা নির্মাণের ক্ষেত্রে বিএডিসির সঙ্গে কৃষি বিভাগের কিছুটা সমন্বয়হীনতা রয়েছে। যেখানে সেচনালার চাহিদা বেশি সেখানে নির্মাণ করা হয় না।
Leave a Reply