রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০৬ পূর্বাহ্ন
বরগুনা সংবাদদাতা : নির্মাণ কাজ শেষ হবার আগেই ফাটল দেখা গেছে বরগুনার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে। স্থানীয়রা বলছেন, নিম্নমানের মালামাল দিয়ে ভবন নির্মাণ করায় কাজ শেষ হবার আগেই বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরেছে। আর ব্যবহারের আগেই ঝুকিপূর্ণ হয়ে গেছে বহুতল এ ভবনটি। তবে গণপূর্ত অধিদপ্তর বলছেন নির্মাণ কাজ শতভাগ নিশ্চিত করতে চেষ্টা করছেন তারা। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, ত্রুটিপূর্ণ ভবন গ্রহণ করবেন না তারা।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালকে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার লক্ষে গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে ৭তলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৩ সালে। ৩১ কোটি ৩১ লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৭ টাকা ব্যয়ে ভবনটি নির্মাণের কাজ পায় ভোলা জেলার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আ. খালেক এন্টারপ্রাইজ। ৩০ মাসের মধ্যে ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ করে হস্তান্তর করার কথা থাকলেও ৬ বছরেও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ। তবে কাজ শেষ হওয়ার আগেই ভবনটির চারপাশ থেকে বড় বড় ফাটল দেখা গেছে।
সচেতন নাগরিক কমিটি বরগুনার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন কামাল বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি ভবন নির্মাণে ব্যবহার করেছে নিম্ন মানের মালামাল। তাই নির্মাণ কাজ শেষ হবার আগেই ছাদ, দেয়াল ও বিমের বিভিন্ন অংশ ফেটে ঝুকিপূর্ণ হয়ে গেছে ভবনটি। যা রোগীদের জন্য নিরাপদ নয়। নতুন করে ভবন নির্মাণ না করলে এই ভবনে রোগী ও হাসপাতাল কতৃপক্ষ সবাই অনিরাপদ।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি অ্যাড. সঞ্জীব দাস বলেন, নির্মাণ কাজ শেষ হবার আগেই যে ভবনে ফাটল ধরে, সেই ভবন রোগীদের জন্য হতে পারে না। যারা তৈরি করেছে তাদের জন্য হওয়া উচিত। এই ভবনে রোগীরা নিরাপদ নয়। প্রয়োজনে তারা আন্দোলন করবে তবে এই ভবনে রোগী থাকবে না।
বরগুনার সামাজিক আন্দোলনের নেতা শুখ রঞ্জন শীল বলেন, এমন কিছু অসাধু ঠিকাদারের জন্য সরকারের মহৎ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয় না। কোটি কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে।
তবে এ বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, লবনাক্ততার জন্য কিছু কিছু জায়গায় ফাটল ধরেছে। তবে কাজে নিম্ন মানের মালামাল ব্যবহারের বিষয়টি অস্বিকার করে তিনি বলেন, ভবন পূর্ণ নির্মাণ সম্ভব নয় তবে ফাটল ধরা অংশগুলো মেরামত করা হবে।
নির্মাণ কাজ শেষ হবার আগেই ফাটল ধরার খবর শুনে ভবনটি পরিদর্শনে আসেন বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা. মো. আবদুর রহিম। তখন তিনি সাংবাদিকদের বলেন নির্মাণ কাজ শেষ হবার আগেই ফাটল ধরায় হতাশ তিনি। এমন ক্রটিপূর্ণ ভবন গ্রহণ করবেন না তারা।
তবে এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু জাফর বলেন, শতভাগ কাজ হয়েছে। ফাটল ধরা জায়গাগুলো রিপেয়ারিং করা হবে।
সচেতন মহলের অভিযোগের প্রেক্ষিতে হাসপাতাল পরিদর্শন করেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পটুয়াখালী দুদক টিমের সহকারী পরিচালক মোজাম্মিল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল উদ্বোধন করেছেন। সেই হাসপাতালের এখনো সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয়নি। এরই মধ্যে দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা হাসপাতালটি পরিদর্শন করেছি। পরিদর্শনকালে দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে ফাটলের সত্যতা মিলেছে। তাই আমাদের অভিযান শেষে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট পাঠাবো।
গত বছরের ২৭ অক্টোবর বরগুনার তালতলীতে এক জনসভাকালে ভবনটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু ভবনটি উদ্বোধনের ৬ মাসেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
Leave a Reply