সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৩ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক॥ ঝালকাঠী জেলার নলছিটি উপজেলার ২নং মগড় ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতা জসিম উদ্দীন হাওলাদারের যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন সাধারণ মানুষ। শালিস বিচারের নামে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, অন্যের জমি দখল, পুলিশের উপর হামলাসহ এমন কোন অপরাধ নেই যে তার দ্বারা সংগঠিত হয়নি। স্থানীয় চেয়ারম্যানতো দূরের কথা পুলিশ ও প্রশাসনকেও তোয়াক্কা করছেন না তিনি। শুধু সাধারণ জনগনই নয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বররাও তার কাছে বলতে গেলে অসহায়। তার যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে সাধারণ জনগনের পক্ষে ঝালকাঠী দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ওই অভিযোগের বর্তমানে তদন্ত হচ্ছে।
স্থানীয় বাসীন্দানের পক্ষে সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম মৃধা গত ২৮ মে অভিযোগটি দায়ের করেন। এতে সুস্পষ্টভাবে জসিম হাওলাদারের বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগের বিষয় উল্লেখ করা হয়। অভিযোগের প্রেক্ষিত্রে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক দেলোয়ার হোসেন মাতুব্বর বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন। বর্তমানে জসিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চলমান রয়েছে।
জসিম হাওলাদারের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ ঃ মেম্বর ও যুবলীগ নেতা জসিম সর্বশেষ সাবেক তিনবারের নির্বাচিত ইউপি সদস্য আব্দুস সালামের তের শতাংশ জমি জোর করে দখল করে সাইনবোর্ড লাগিয়েছে। আব্দুস সালামের অভিযোগ দাবীকৃত চাঁদা না দেয়ায় ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব দেখিয়ে ওই জমি দখল করা হয়। এছাড়া মুজাহার মীর বহর নামে এক ব্যক্তির ৪৪ শতাংশ জমি জোর করে দখলের অভিযোগ রয়েছে জসিমের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় জসিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে নলছিটি থানায় একটি চাঁদাবাজি মামলা করেণ আব্দুস সালাম। শুধু জমি দখল করে দলের নাম ভাঙ্গিয়ে অনেক লোকের সাথে প্রতারণা করেছেন জসিম উদ্দীন। প্রতারণা করে লন্ডন প্রবাসী মোস্তফা নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। ওই টাকা ফেরৎ পাওয়ার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মোস্তফা। বরিশাল নগরীর ২৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর হুমায়ন কবিরের নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নেয় জসিম। হুমায়ন কবীর নিজেও টাকা আদায় করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। স্থানীয় মগড় এলাকার বাবুল হাওলাদারের কাছ থেকে শালিসির নামে ২০ হাজার টাকা উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে যুবলীগ নেতা জসিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় আমীর হোসেন নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে মধ্য মগড় জামে মসজিদে টিউবওয়েল দেয়ার কথা বলে ৫০ হাজার টাকা নেন জসিম উদ্দীন। কিন্তু মসজিদে আজ পর্যন্ত টিউবওয়েল আসেনি। এ ব্যাপারে আমির হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেণ, ৫০ হাজার টাকা আমি জসিমের মাধ্যমে মসজিদে দান করেছি। এই টাকা দিয়ে একটি টিউবওয়েল বসানোর কথা ছিল। কিন্তু গত দুই বছরেও মসজিদে টিউবওয়েল বসানো হয়নি। বর্তমানে জসিমকে ফোন দিলেও রিসিভ করেনা। ঈদে আমি বাড়ীতে এসে বিষয়টি নিয়ে জসিমের ভাইদের সাথে কথা বলবো।
টিউবওয়েল দেয়ার কথা বলে লুডু গাজী নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৪০ হাজার, আমিরাবাদের পানের দোকানদার স্বপনের কাছ থেকে ৩৭ হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে জসিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মালামাল ক্রয় করে টাকা না দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে জসিমের বিরুদ্ধে। ব্রিকফিল্ড মালিক জুলফিকার আলীর কাছ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকার ইট নিয়ে দুই বছরেও ফেরৎ দেয়নি। এ ব্যাপারে ব্রিক ফিল্ড মালিক জুলফিকার আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এলাকায় ব্যবসা করি। আমরা বড়জোর টাকার জন্য তাগাদা দিতে পারি।
গত দুই বছর ধরে তাগাদা দিয়েও টাকা ফেরৎ পাইনি। এখন আল্লাহর আদালতে বিচার দেয়া ছাড়াতো আমার আর কোন উপায় নেই। এছাড়া আরেক ব্রিকফিল্ড মালিক মারুফ ৯০ হাজার টাকা পায় জসিমের কাছে। সিমেন্ট ব্যবসায়ী আলমগীরের কাছ থেকে ৪০ হাজার এবং রায়হানের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকার সিমেন্ট নিয়ে আজ পর্যন্ত ফেরৎ দেননি জসিম। জসিম উদ্দীনের মামাতো ভাই চন্ডিপুরের নিজাম সরদারের কাছ থেকেও এক লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে ফেরৎ দেয়নি জসিম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক শাহীনকে কোন ধরনের পাত্তা না দিয়ে নিজে একটি অফিস করে সেখানে গুন্ডা বাহিনী নিয়ে আড্ডা বসান জসিম। তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে কেউ কোন কথা বলতে সাহস পায়না। জসিম ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী মিলে এলাকায় মাদকের ব্যবসা করেন বলে দুদকে দেয়া অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ জসিম ও তার গুন্ডা বাহিনী নদীর পাড় ও সুজা বাদশার কেল্লার কাছে বসে ইয়াবা বিক্রী করে।
অন্যকে ঠকিয়ে একটি ভবন করেছেন জসিম। এছাড়া বরিশালে নামে-বেনামে কয়েকটি প্লট ক্রয় করেছেন। শুধু জসিম নয় তার পরিবারের সকল সদস্যদের বিরুদ্ধেই রয়েছে নানা ধরণের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের অভিযোগ। জসিম হাওলাদারের ছোট ভাই লিটন হাওলাদার কাঠিপাড়া গ্রামে ডাকাতি করতে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার হয়। তাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে স্থানীয়রা। ডাকাতি মামলায় লিটন ছয় মাস জেল খেটেছে। জসিমের বড় ভাই বাচ্চু হাওলাদার তিনটি ডাকাতি মামলার আসামী। শুধু তাই নয় মেয়ে সংক্রান্ত ঘটনায় অনেক জরিমানা গুনতে হয়েছে তাকে।
এছাড়া ২০১০ সালে পুলিশের কাছ থেকে আসামী ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় জসিমের বাবা-মায়ের ছয় মাস জেল হয়। এছাড়া জসিম আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। বরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনা ও ঢাকাগামী ট্রাক থেকে চাঁদা উত্তোলনেরও অভিযোগ রয়েছে জসিমের বিরুদ্ধে।
স্থানীয়রা বলছেন স্বাধীনতার পর এত বড় ধরনের প্রতারক, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী এই এলাকায় আমরা দেখিনি। শুধু স্থানীয়রা নয় নির্বাচিত অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরাও জসিমের যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। এ ব্যাপারে মগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনামুল হক শাহীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় অনেকেই আমার কাছে জসিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন।
Leave a Reply