সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৪ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নগরীর ড্রেন ও মরা খালগুলো দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত পরিস্কার না করার পাশাপাশি নগরবাসী খালগুলোকে ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার এবং কোন কোন স্থানে ফের খাল দখল করায় পানি প্রবাহ আটকে গিয়ে পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থায় মারাত্মক সংকট তৈরী হয়েছে। ফলে বেশীরভাগ ড্রেন ও মরা খালে ফের দখলদারিত্বে মেতে উঠেছে একটি মহল। ফলে ইতোমধ্যে দুর্গন্ধ আর মশার নিরাপদ প্রজনন ক্ষেত্রে পরিনত হচ্ছে খালগুলো। আর স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে নগরবাসী। তবে বর্তমান নগর পিতা সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কিছুটা শৃংখলা ফিরিয়ে এনেছেন। সূত্রে জানা গেছে, এক সময়ের ‘প্রাচ্যের ভেনিস’ খ্যাত নগরীর ৪৮টি খালের ১০৫ কিলোমিটার এলাকা সংস্কার সহ উন্নয়নে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে একটি ‘উন্নয়ন প্রকল্প-সারপত্র, ডিপিপি’ দাখিল করা হয়েছে বিগত নগর পরিষদের সময়ে।
বর্তমান পরিষদ এ লক্ষ্যে আরো একটি মেগা প্রকল্প দাখিল করেছে। কিন্তু তা এখনো পরিকল্পনা কমিশনের বিবেচনা লাভ করেনি। কীর্তনখোলা ও সন্ধ্যা নদীর সাথে যূক্ত এ নগরীর খালগুলোর সবই প্রবাহ সংকটে দিন দিন অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। উজানে প্রবাহ নিয়ন্ত্রনের ফলে নদীগুলোর পানির স্তন নিচে নেমে যাবার পাশাপাশি নগরীর মধ্যে দিয়ে বহমান খালগুলো কতিপয় বিবেকহীন নগরবাশীর অসত কর্মকান্ডে ভরাট হয়ে এর তলা উচু হয়ে যাচ্ছে।
ফলে নিকট অতীতের প্রবাহমান এসব খালে এখন আর জোয়ারÑভাটার পানি প্রবাহিত হচ্ছে না। নগরীর প্রায় সব খালই মরা নালায় পরিনত হয়ে তা মশার প্রজনন ক্ষেত্র সহ উৎকট দূর্গন্ধের আধারে পরিনত হয়েছে। সচেতন মহলের মতে, খালগুলোতে প্রবাহ না থাকায় নগরীর ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও ক্রমশ নিচে নামার পাশাপাশি পরিবেশের ওপরও নানামুখি বিরূপ প্রভাব পড়ছে। অথচ দু দশক অগেও এ নগরীর অভ্যন্তরে বটতলা বাজার, নতুন বাজার, সাগরদী বাজার ও বড়বাজার খালে যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌকা চলাচল করত। নগরীর অভ্যন্তরে খালগুলো দিয়ে বটতলা, নতুন বাজার, সাগরদী বাজার ও বড়বাজারে পণ্যবাহী নৌকায় বিভিন্ন মালামাল আনা নেয়া হত। নিয়মিত জোয়ারÑভাটার প্রবাহ অব্যাহত ছিল এসব খালে। এসব বিবেচনায় বৃটিস যুগে ইংরেজ শাষক বর্গ বরিশালকে ‘প্রাচ্যের ভেনিস’ নামে অবিহিত করেছিলেন। কিন্তু সে সুনাম এখন অতীত। নগরীর বেশ কয়েকটি খাল পাকা ড্রেনের রূপ নিয়েছে।
বড় বাজার সংলগ্ন জেল খালে ভরা বর্ষায়ও কীর্তনখোলা নদীর প্রবাহ চোখে পড়ে না। অথচ বছর দুয়েক আগে জেলা প্রশাসন থেকে এই জেল খাল সংস্কারে কয়েক দফায় ঢাক ঢোল পিটিয়ে নানা অনুষ্ঠান করা হয়েছে। এমনকি জেলা প্রশাসন থেকে জেল খাল সংস্কারে ২৩ কোটি টাকার প্রাক্কলনও দাখিল করা হয়। পরে সব কিছুই স্থিমিত হয়ে গেছে। বর্তমানে নগরীর নবগ্রাম রোড খাল, জেল খাল, সাগরদী খাল সহ সবগুলো খালই প্রায় অস্তিত্বহীন।
এসব খালের করুন অবস্থা সব বর্ণনার বাইরে। আর নবগ্রাম রোড সহ বেশ কয়েকটি খাল ময়লা আর্বর্জনা আর মশক প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে নগরীর মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুকি সৃষ্টি করে অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। সূত্রে জানা যায়, বরিশাল সিটি করপোরেশনের কনজার্ভেন্সী শাখার অধীনে সাড়ে ৯শ দৈনিক মজুরী ভিত্তিক শ্রমিক রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪শ ঝাড়–দার বা পরিচ্ছন্নতা কর্মী। এছাড়া নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে প্রায় সাড়ে ৩শ পরিচ্ছন্নতা কর্মী রয়েছে। ঐসব পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দায়িত্ব বন্টন সহ কাজের তদারকির জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে সুপরাভাইজারও রয়েছে।
কিন্তু এরপরেও নগরীর ড্রেন ও খালগুলো নিয়মিত পরিস্কার হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত অনুন্নত এলাকার ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন বিভাগের নজরদারী কম বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি ময়লা ও বর্জ্য পরিস্কারে কিছুটা শৃখলা ফিরে এলেও ড্রেন ও খাল পরিস্কার রাখার ক্ষেত্রে সফলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নগরবাসীর মধ্যে। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ইমতিয়াজ আহম্মেদ জুয়েল বলেন, খালের অবৈধ দখল ঠেকাতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বরিশাল সিটি করপোরশনের কনজার্ভেন্সী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাঃ রবিউল আলমের সাথে আলাপ করা হলে তিনি নগরীর পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম আগের চেয়ে অনেক ভাল অবস্থানে রয়েছে বলে দাবী করেন।
তবে অনেক এলাকার মানুষ ড্রেন ও খালগুলোতে ময়লা আবর্জনা ফেলে প্রবাহ রুদ্ধ করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তবে ‘ঐসব খাল ও ড্রেন নিয়মিত পরিস্কার করলে পরিস্থিতি এতটা অবনতি হতনা’, এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি সরেজমিনে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহনের কথাও জানান।
Leave a Reply