মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২০ অপরাহ্ন
দশমিনা প্রতিনিধি॥ পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় কখানো সড়কের পাশে, কখনো বাড়ির উঠানে! কৈশর পেরিয়ে যৌবনের দিনগুলোর সকাল থেকে রাত অবধি রশি দিয়েই বাঁধা থাকেন বলহরি।
স্থানীয় ও পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার পূর্ব বাঁশবাড়িয়া গ্রামের রবিকান্ত দাসের ছোট ছেলে বলহরি। শিশু বয়সে চঞ্চল বলহরি বাঁশবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। মেধাবী ছাত্র বলহির জীবনে কখনো দেখা দেয় মাথা ব্যথার মতো ভয়াবহ রোগ। দেখানো হয় গ্রামের বিভিন্ন ডাক্তার। তাতেও কাজ না হওয়ায় ওঝা ফকির দিয়ে চলে চিকিৎসা। ঝাড়-ফুক, তাবিজ-কবজে রোগের নিরাময় না পেয়ে স্মরণাপন্ন হন নেদারল্যান্ড’র হাসপাতাল তেরে দেস হোমসে। চিকিৎসায় সাময়িক সুস্থ্য হওয়ার কিছু দিন পরে আবারো একই সমস্যা।
হোমসের চিকিৎসকরা জানায়, তখন খুব দেরি হয়ে গেছে। মানসিক প্রতিবন্ধকতা স্থায়ী বাসা বাঁধে বলহরির শরীরে। সর্বাগ্রাসী তেঁতুলিয়ার ভাঙন কবলিত কৃষক থেকে দিনমজুর বলহরির বাবা ছেলেকে বরিশাল নিয়ে মানসিক চিকিৎসক দেখান। অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসা সেবা পায়নি বলহরি।
ভাগ্যের উপর দোষ চাপিয়ে বলহরিকে বাড়ি ফিরিয়ে আনেন বাবা রবিকান্ত। মানসিক ভারসাম্য হারানোয় প্রতিবেশীদের উত্যাক্ত করেন বলহরি। প্রতিবেশীদের বিভিন্ন অভিযোগের মুখে রশিতে বাঁধা পড়ে বলহরি। ১২ বছর বয়সে রশিতে বাঁধা বলহরির আর যেন মুক্তি নেই। বয়সের ক্যালেন্ডারে ৩০ পা দিলেও রশিতে বাঁধা অবস্থায় বলহরির খাওয়া-দাওয়া ও মল-মূত্র ত্যাগ চলছে। পথচারীদের দেখলে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকেন। মাঝে মধ্যে আবার উত্তেজিতও হয়ে ওঠেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, রশিতে বাঁধা বলহরির জীর্ণশীর্ণ শরীর। কখনো হাসি, কখনো কান্নার ফাঁকে হাউমাউ করে কিছু বলার চেষ্টা করছে। এই প্রতিবেদকের উপস্থিতিতে মানুষের ভীড় ঠেলে সামনে আসা বৃদ্ধা, পরিধান বস্ত্র আর চেহারায় দারিদ্র্যপীড়িত কষ্টের ছাপ। তিনি জানায়, ‘আমি বলহরির মা।’
বেঁধে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গরিব পরিবার তাই ভালো চিকিৎসা করাতে না পেরে নিরুপায় হয়ে বেঁধে রাখছি।’
Leave a Reply