বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩২ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক॥ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও জমি অবৈধভাবে দখলে নিতে একের পর এক মামলা দিয়ে পটুয়াখালি সদর উপজেলার একটি মামলাবাজ চক্র ৩০টি পরিবারকে নিঃস্ব করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চক্রটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন মো. বাকি বিল্লাহ নামে স্থানীয় এক যুবক। তিনি তার স্ত্রী তাজনুর আক্তারকে বাদি বানিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে প্রায় ডজনখানেক মামলা করেছেন। প্রতিটি মামলায় ৫-১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ চক্রের আরেকজন হলেন বাকি বিল্লাহর বন্ধু মো. শামীম খান। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি জন্মসূত্রে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা হলেও বর্তমানে পটুয়াখালিতে মামলাবাজিতে জড়িয়ে পড়েছেন। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বাকি বিল্লাহ এই শামীম খান ও তার আত্মীয়-স্বজনদের দিয়ে তাদের (বাকি বিল্লার প্রতিপক্ষ) বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করিয়েছেন। এসব মামলার প্রত্যেকটিতে ৮-২৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ মামলাবাজ চক্রের হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজিসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। ইতোমধ্যে নেসার মাওলানা, তাহের আলি ফকির, জালাল ফকির, নান্নু ফকির, আব্দুর রব ফকির ও এনামুল সিকদারের দায়ের করা অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। শনিবার ডিআইজি অফিস সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সদস্যদের অভিযোগ, সদর উপজেলার ইটবাড়িয়া এলাকায় শ্বশুরের টাকায় কয়েক শতাংশ জমি ক্রয় করেন বাকি বিল্লাহ। জমিগুলো তার স্ত্রী, শ্যালক ও নিজের নামে দলিল করেন। এরপর বাকি বিল্লাহ তার ক্রয়কৃত জমির আশেপাশের জমিগুলো সন্ত্রাসী বাহিনীর সহযোগিতায় জোরপূর্বক দখল করে ঘর ও স্থাপনা তৈরি করেন। পরে ওই ঘরে নিজের লোকজনের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়ে স্ত্রীকে বাদি বানিয়ে মামলা দায়ের করেন। এভাবে দায়ের করা মামলাগুলোতে তাদেরকেই আসামি করা হয়েছে; যাদের জমি তিনি অবৈধভাবে দখল করেছেন। এসব সাজানো মামলার ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়েছে ওই এলাকায় ৩০ পরিবার। আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল অনেকে হয়রানির ভয়ে বাকি বিল্লাহর সঙ্গে আপোষ করে তাদের জমি নামমাত্র মূল্যে তার নামে দলিল করে দিয়েছেন। আর কেউ কেউ মিথ্যা মামলার আসামি হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
বাকি বিল্লাহ আপন চাচাতো ভাই এনামুল সিকদার অভিযোগ করে বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে বাকি বিল্লাহ আপন চাচাতো বোন তাজনুর আক্তারকে বিয়ে করেন। অঢেল টাকা-পয়সা থাকায় তাজনুরের সঙ্গে প্রেম করে তাকে বিয়ে করেন বাকি বিল্লাহ। বিষয়টি তাজনুরের পরিবার ও চাচারা মেনে নেয়নি। এতে বিপাকে পড়ে যান বাকি বিল্লাহ। কিছুদিন পর তাজনুরের বাবা-মা সড়ক দুর্ঘটনায় সৌদিআরবে মারা গেলে বাকি বিল্লাহর কপাল খুলে যায়। এরপরই বিয়েতে রাজি না থাকা চাচা ও চাচাতো ভাইদের শায়েস্তা করতে স্ত্রী তাজনুরকে দিয়ে একের পর এক মামলা দায়ের করান বাকি বিল্লাহ।
তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি পটুয়াখালির বিসিক এলাকায় থাকা তার পরিবারের একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান জোরপূর্বক দখল করেন শামীম খান নামের এক লোক। এতে পেছন থেকে কলকাঠি নাড়েন বাকি বিল্লাহ। আমরা যাতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠাতে না যেতে পারি সেজন্য শামীম খান, তার স্ত্রী নার্গিস বেগম ও শ্যালক মমিন মৃধাকে বাদি বানিয়ে বাকি বিল্লাহ একাধিক মামলা দায়ের করিয়েছেন। বাকি বিল্লাহ এমন একজন লোক যিনি তার আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশি ও এলাকার নিরীহ মানুষদের মামলার ফাঁদে ফেলে হয়রানি অথবা জেল খাটিয়েছেন। এ থেকে তার আপন চাচা-মামাও রেহাই পায়নি।
বাকি বিল্লাহর আপন চাচা আলতাফ হোসাইন সিকদার বলেন, আমি তার বিরুদ্ধে কোন মন্তব্য করতে চাই না। একটি মামলায় আমিও জেল খেটেছি।
আপন মামা নেসার মাওলানা বলেন, বাকি বিল্লাহ একটি মামলায় আমাকেও হয়রানি করেছে। আমার আপন ভাগিনা হয়েও আমাকেও ছাড়েনি সে।
তবে অভিযোগগুলো মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে মো. বাকি বিল্লাহ বলেন, আমি কাউকে হয়রানি করছি না। উল্টো আমাকে ও আমার পরিবারকে হয়রানি করছে তারা।
Leave a Reply