মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৫ পূর্বাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥ রোগীদের করোনা চিকিৎসায় উৎসাহ ও সাহস যোগাতে সরকার চিকিৎসকদের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করলেও ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা এতে উৎসাহিত হতে পারেনি। জরুরী বিভাগে রোগীদের সেবা দিচ্ছে নার্স এবং ওয়ার্ডবয়।
কর্তব্যরত চিকিৎসক দরজার মাঝে দড়ি টানিয়ে ওপাশ থেকে রোগীর সমস্যা শুনে শরীরের তাপমাত্রা, প্রেসার, পালস না দেখেই ব্যবস্থাপত্র দিয়ে দায়সারা দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিদিন সার্জিক্যাল কর্মকাণ্ড সেলাই থেকে শুরু করে কুকুর বিড়ালের কামড়ে আহত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে নার্স ওয়ার্ডবয়রা। যদিও সিভিল সার্জন বলছেন চিকিৎসকদের এ আচরণ মোটেই কাম্য নয়।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের দরজায় দড়ি বাঁধা। যাতে রোগী চিকিৎসকের কাছে বা রুমে যেতে না পারে। ভিতরে কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার ডা. জাহিদুল ইসলাম বসা। রোগী এলে দূরত্ব বজায় রেখে রোগের ধরন শুনে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে পাঠাচ্ছেন নার্সদের কাছে। কোন রোগী দড়ি ঘেঁষে দাঁড়ালেও তাকে দূরে সরে দাড়াতে বলেন তিনি। অপরদিকে জরুরী বিভাগে আগত কাটাছেড়া রোগীদের সেলাই থেকে শুরু করে সার্বিক সেবা দিচ্ছেন নার্স ওয়ার্ডবয়।
পাশের অন্যরুমে কুকুর বিড়ালের কামড়ে আহত রোগীদের ভ্যাকসিন দিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে সিনিয়র স্টাফ নার্স মনিন্দ্র নাথ দত্ত। রোগীর চিকিৎসা সেবায় আপনারা কেন? জানতে চাইলে মনিন্দ্র বলেন, বাধ্য হয়ে আমাদের এখন সার্বিক কার্যক্রম সামাল দিতে হচ্ছে। চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় সুযোগ সুবিধার ঘোষণা দেয়া হলেও রোগীদের সেবা দিতে হচ্ছে আমাদের। প্রতিদিন রোগীদের পরীক্ষা নিরীক্ষা, ভাঙ্গা, কাটা ছেড়ার সেলাই ব্যান্ডেজ, প্রেসার পর্যন্ত মাপতে হচ্ছে। ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিলেও আমাদের নিরাপত্তার কথা ভাবছেনা কেহ।
হাসপাতালের জরুরী বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন গাবখান ইউনিয়নের রূপসিয়া গ্রামের খালেদা বেগম। তার কান কেটে যাওয়ায় তাকে স্পর্শ না করে প্রেসারসহ কোন কিছু না দেখে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে চিকিৎসক সেলাইয়ের জন্য পাঠালেন নার্সের কাছে। এ প্রসঙ্গে রোগী খালেদা জানান, দড়ির ওপাশে বসে আমার ক্ষত না দেখেই ডাক্তার ওষুধ লিখে সেলাই করাতে পাঠালেন।
সরকার চিকিৎসকদের সুযোগ সুবিধার ঘোষণা সত্তেও দূরত্ব রেখে ব্যবস্থাপত্র দেয়া হচ্ছে কেন জানতে চাইলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মানুযায়ী দরজায় দড়ি দিয়ে সামাজিক দূরত্ব বাজায় রাখছি। প্রয়োজন হলে রোগীকে কাছে এনে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছি।
এ প্রসঙ্গে ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. শ্যমল কৃষ্ণ হাওলাদার বলেন, আমি চিকিৎসক নার্সসহ সবাইকে পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোভস দিয়েছি সুরক্ষার জন্য। কিন্তু তারপরেও চিকিৎসকদের দায়িত্বে অবহেলার সুযোগ নেই। মাঝে দড়ি রেখে রোগী দেখা, সেলাইসহ সার্জিক্যাল কর্মকাণ্ড না করার কোন যৌক্তিকতা নেই। এটা মোটেই ঠিক না। বিষয়টি আমি দেখছি।
Leave a Reply