শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:০৬ অপরাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট ॥ বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে দীর্ঘদিন প্রভাব বিস্তারকারী ছাত্রশিবির এবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে চমকপ্রদ সাফল্য পেয়েছে। শীর্ষ ৪টি পদের মধ্যে ৩টিসহ মোট ২৫টি পদে ২১টিতেই জয় নিশ্চিত করেছে শিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নির্বাচন কমিশন ফলাফল ঘোষণা করে। এতে ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) পদে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু। তবে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে বিজয়ী হয়েছেন শিবির মনোনীত প্রার্থী মো. মাজহারুল ইসলাম। যুগ্ম সম্পাদক পদে ফেরদৌস আল হাসান ও আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা নির্বাচিত হয়েছেন, দুজনই শিবির সমর্থিত প্যানেলের।
অন্যদিকে সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে শুরু করে নাট্য, সাহিত্য, ক্রীড়া, তথ্যপ্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, পরিবহনসহ প্রায় সব পদেই জয়ী হয়েছে শিবির প্যানেল। শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও ক্রীড়া সম্পাদক (পুরুষ) পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেন।
কার্যকরী সদস্য (নারী ও পুরুষ) পদেও শিবির প্রার্থীরাই বিজয়ী হয়েছেন। নারী সদস্য পদে নাবিলা বিনতে হারুন, ফাবলিহা জাহান ও নুসরাত জাহান ইমা জয়ী হন। পুরুষ সদস্য পদে জয় পান মো. তরিকুল ইসলাম, আবু তালহা ও মো. আলী চিশতী।
নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ১১,৭৫৯। এর মধ্যে প্রায় ৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থী ভোট দেন।
এ নির্বাচনে ছাত্রদল বড় ধরনের ভরাডুবির সম্মুখীন হয়েছে। ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলসহ প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের জোট, ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফ্রন্টের প্যানেলসহ কয়েকটি প্যানেল ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করলেও শিবির সমর্থিত জোটের এই ঐতিহাসিক সাফল্য দেখিয়েছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যাকে বলা হয় দেশের রাজনৈতিক সূতিকাগার, সেখানে ছাত্রশিবির কখনো জয়ী হয়নি। অথচ এবারের নির্বাচনে পুরো প্যানেল নিয়েই জয় পেয়েছে তারা। এবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জাকসু নির্বাচনেও ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায় শিবিরের অকল্পনীয় উত্থান। এই ফলাফল শুধু একটি ক্যাম্পাস নির্বাচনের প্রতিচ্ছবি নয়—এটি জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যতেও প্রবল প্রভাব ফেলতে পারে, এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা হতাশা প্রকাশ করে বলেন:
“স্বপ্নেও ভাবিনি শিবির ডাকসুতে জিতবে। এবার জাকসুও তাদের আধিপত্য। সারা দেশে বিএনপির মধ্যে এখন এমন কোনো অপরাধ নেই, যেটা দেখা যাচ্ছে না—টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, খুন… সবই চলছে। তারেক রহমান লন্ডন থেকে নির্দেশনা দিলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। স্থানীয় নেতারা নিজেদের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নিষিদ্ধ আওয়ামী নেতাদের সঙ্গেও আঁতাত করছে।
ঘোষিত ফলাফল নিন্মরূপ:
১/ভিপি- আব্দুর রশিদ জিতু (স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী প্যানেল)
২/জিএস- মো: মাজহারুল ইসলাম (শিবির প্যানেল)
৩/এজিএস (পুরুষ)- ফেরদৌস আল হাসান (শিবির প্যানেল)
৪/এজিএস (নারী)- আয়েশা সিদ্দীকা মেঘলা (শিবির প্যানেল)
৫/শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক- আবু ওবায়দা ওসামা (শিবির প্যানেল)
৬/পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক- মো. শাফায়েত মীর (শিবির প্যানেল)
৭/সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক- মো. জাহিদুল ইসলাম (শিবির প্যানেল)
৮/সাংস্কৃতিক সম্পাদক- মহিবুল্লাহ শেখ জিসান (স্বতন্ত্র) / আলী জাকি শাহরিয়ার (শিবির প্যানেল)
৯/সহ সাংস্কৃতিক সম্পাদক- মো: রায়হান উদ্দীন (শিবির প্যানেল)
১০/নাট্য সম্পাদক- মো রুহুল ইসলাম (শিবির প্যানেল)
১১/ক্রীড়া সম্পাদক-মাহমুদুল হাসান কিরন (স্বতন্ত্র)
১২/সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (নারী)- ফারহানা আক্তার লুবনা (শিবির প্যানেল)
১৩/সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (পুরুষ)- মো. মাহাদী হাসান (শিবির প্যানেল)
১৪/তথ্য প্রযুক্তি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক- মো. রাশেদুল ইসলাম লিখন (শিবির প্যানেল)
১৫/সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক- আহসাব লাবিব (গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ-বাগছাস)
১৬/সহ-সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক (নারী)- নিগার সুলতানা (শিবির প্যানেল)
১৭/সহ-সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক (পুরুষ)- মো. তৌহিদ হাসান (শিবির প্যানেল)
১৮/স্বাস্হ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক- হুসনী মোবারক (শিবির প্যানেল)
১৯/ পরিবহন ও যোগাযোগ সম্পাদক- মো. তানভীর রহমান (শিবির প্যানেল)
২০/কার্যকরী সদস্য—
পুরুষ-১: মো. তরিকুল ইসলাম (শিবির প্যানেল)
পুরুষ-২: মো. আবু তালহা (শিবির প্যানেল)
পুরুষ-৩: মো. মহসিন (শিবির প্যানেল)
নারী-১: নাবিলা বিনতে হারুণ (শিবির প্যানেল)
নারী-২: ফাবলিহা জাহান (শিবির প্যানেল)
নারী-৩: নুসরাত জাহান ইমা (শিবির প্যানেল)
Leave a Reply