কুয়াকাটার পালতোলা সোনার নৌকাটি বৃষ্টিতে ভিজে ও রৌদ্রের তাপে সংস্কারের অভাবে নষ্ট হচ্ছে Latest Update News of Bangladesh

শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩৪ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




কুয়াকাটার পালতোলা সোনার নৌকাটি বৃষ্টিতে ভিজে ও রৌদ্রের তাপে সংস্কারের অভাবে নষ্ট হচ্ছে

কুয়াকাটার পালতোলা সোনার নৌকাটি বৃষ্টিতে ভিজে ও রৌদ্রের তাপে সংস্কারের অভাবে নষ্ট হচ্ছে




তানজিল জামান জয়, কলাপাড়া(পটুয়াখালী) প্রতিনিধি।।  কুয়াকাটার সোনার নৌকা ! শুনলেই যে কেউ চমকে ওঠার কথা। নামটি শুনে অনেকেই হয়তো টিপ্পনি কেটে বলবেন, নৌকা আবার সোনার হয় কি করে!। অবাক হওয়ার মতো হলে ও এটি উদ্ধার কালে তামার অসংখ্য পাত, ভাঙ্গা মৃৎপাত্রের টুকরা, লোহা দস্তার তৈরি ব্যালাস্ট, শিকল ও পাটখরি, মাদুরে, পাটের তৈরি ছালার নিদর্শন পাওয়া যায়। নৌকাটি ৭২ ফুট লম্বা ২৪ ফুট প্রস্থ এবং ১০ দশমিক ৬ ফুট উচু।

স্থানীয়ভাবে এ জাহাজটিকে সোনার নৌকা বলা হয়। কারণ এর বাইরের আবরণ তামার পাতে মোড়ানো ছিল বলে মানুষ এটি নামকরণ করে। কুয়াকাটায় আদিবাসী রাখাইনদের আড়াইশ বছরেরও বেশি পুরানো ঐতিহ্যবাহী পালতোলা নৌকা সংস্কারের অভাবে নষ্ট হাচ্ছে প্রতœতাত্বিক নিদর্শন স্বরুপ নৌকাটি সংরক্ষনের উদ্যোগ নেয় খুলনা প্রতœতত্ব অধিদপ্তর।

নৌকাটি নতুন করে পুর্বের আদলে তৈরী করে দর্শনার্থীদের জন্য কুয়াকাটা কেরানী পাড়ার বৌদ্ধ বিহারের পাশে স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যাদুঘর নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হয়। জমি অধিগ্রহন করে টিনসেট একচালা একটি ঘর নির্মান করে ২০১৩ ইং সালের ২১ আগস্ট প্রতœতত্ব অধিদপ্তর আনুষ্ঠানিক ভাবে উম্মুক্ত করে দেয় দর্শনার্থীদের জন্য। এর পর আর কোন তদারকি নেই সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের।

টিনের ওই একচালা ঘরটি ঝড় বাতাসে ভেঙ্গে পরে যাওয়ায় গত দুই বছর ধরে বৃষ্টিতে ভিজে ও রৌদ্রের তাপে নষ্ট হচ্ছে নৌকাটি। আস্তে আস্তে নৌকাটির অংশ বিশেষ খুলে গিয়ে আদিবাসিদের আদি স্মৃতি বিজড়িত কতিথ এই সোনার পালতোলা নৌকা।

রাখাইনদের ইতিহাস সুত্রে জানা যায়, ওই সময় নৌকাটি সমুদ্রের সাথে সংযুক্ত ছোট খালের মধ্যে ফেলে রাখা হয়। পরবর্তীতে জলোচ্ছাস ও বন্যায় নৌকাটি তলিয়ে গিয়ে আস্তে আস্তে পলি পরে মাটির নিচে হারিয়ে যায়। কালের বির্বতনে আড়াইশ বছর পরে আশির দশকে পালতোলা নৌকাটি গরু মহিষের পানির চাহিদা মিটাতে কুয়া খুড়ঁতে গিয়ে রাখালদের নজরে আসে। তখন স্থানীয়রা নৌকাটি উত্তোলনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। কথিত রয়েছে নৌকাটি তুলতে গিয়ে এক ব্যক্তি মারাও যান। নৌকাটি উদ্ধার নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে ভৌতিক ও কাল্পনিক নানা কল্প কাহিনীর গল্প শোনা গেছে। নৌকাটি আবার মাটির নিচে চাপা পরে যায়।

কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের কাছে আদি নিদর্শন হিসেবে অন্যতম পালতোলা এই নৌকাটি। রাখাইনদের আদি নিদর্শন ও ইতিহাস ঐতিহ্যের স্বাক্ষ্য বহনকারী নৌকাটির বেহাল দশা দেখে পর্যটকরা হতাশ হয়েছেন। পতœতত্ব বিভাগ দ্রুত এ যাদুঘরটি সংস্কারের এর ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই কালের স্বাক্ষী পালতোলা জাহাজটি হারিয়ে যাবে বলে এমনটাই মত পর্যটক ও স্থানীয়দের।

কুয়াকাটা সৈকতে জোয়ারের ঝাপটায় বালুর নিচ থেকে বেরিয়ে আসা প্রাচীণ আমলের পাল তোলা জাহাজটিকে স্থানীয়রা এ নামেই চেনেন। স্থায়ীভাবে এ জাহাজটি মূল আদলে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য অত্যাধুনিক দর্শনীয় স্থাপনা তৈরি করা হবে। প্রতœতত্ব অধিদফতর বিভাগ জাহাজটি সংরক্ষণে এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ওই অর্থবছরে কাজটি শুরু হওয়ার কথা ছিল।

বৈজ্ঞানিকভাবে জাহাজটি সংরক্ষণের এমন উদ্যোগ নেয়ায় পর্যটক-দর্শনার্থীসহ কুয়াকাটাবাসী উদ্বেলিত। প্রাথমিকভাবে এ জাহাজটি ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে কুয়াকাটা বৌদ্ধমন্দির সংলগ্ন বেড়িবাঁধের পাশে সংরক্ষণ করা হয়। প্রায় পাঁচ বছর পরে প্রতœতাত্বিক এই প্রাচীন নিদর্শনটি রক্ষার জন্য আধুনিক স্থাপনা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অতিসম্প্রতি এ কারণে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম কুয়াকাটায় জাহাজটি পরিদর্শণ করে এ সিদ্ধান্ত নেয়। প্রাচীণ এ জাহাজটি দর্শনে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক-দর্শনার্থী ভিড় করে। কিন্তু যথাযথ সংস্কারের অভাবে জাহাজটি অনেকটা বিবর্ণ হয়ে গেছে। অবকাঠামো ক্ষয়ে যেতে থাকে। তাই সংরক্ষণ করতে আধুনিক নান্দনিক স্থাপনার মধ্যে সংস্কারের পরে জাহাজটি স্থাপন করা হচ্ছে। এর ফলে কুয়াকাটায় পর্যটক-দর্শনার্থীর জন্য একটি দর্শনীয় প্রাচীন পুরাকীর্তি দেখার সুযোগ মিলবে। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর সুত্রমতে, পাল তোলা জাহাজটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রতœসম্পদ। এটি বালুর নিচ থেকে তোলার কাজে নগরবাড়ি থেকে ১০জন দক্ষ শ্রমিক ছাড়াও ৪২ জনের একটি শ্রমিক দল কাজ করেছে। পাঁচ সদস্যের কপিকল দল ছিল সার্বক্ষণিক। সাতটি কপিকল ব্যবহৃত হয়। এর সঙ্গে আরও যুক্ত হয় স্থানীয় ২০ জন শ্রমিক।

রাখাইনদের দাবি এ জাহাজটি তারা ২০০ বছর আগে ব্যবহার করেছেন। সাধু সওদাগরে ধান-চালের সওদার কাজে ব্যবহৃত নৌকা। কেউ কেউ পর্তুগীজদের ব্যবহৃত পাল তোলা ছোট্ট জাহাজ। বাংলাদেশে ইতোপুর্বে এই ধরনের জাহাজ এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। এটি কমপক্ষে দু’শ বছরের পুরনো। জাহাজটি জারুল কাঠের তৈরি। কাঠের পুরত্ব সাড়ে ছয় সেন্টিমিটার। কাঠ, লোহা ও তামার পাত দিয়ে তৈরি। জাহাজটি অবিকলভাবে সংরক্ষণ করে কুয়াকাটায় আধুনিক স্থাপনার মধ্যে স্থাপন করলে পর্যটকের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় হবে।

২০১২ সালের জুন মাসের শেষ সপ্তাহে কুয়াকাটা সৈকতের ঝাউবাগান সংলগ্ন বেলাভূমের নিচ থেকে স্থানীয় জেলেরা প্রথমে প্রাচীণ এ জাহাজটি দেখতে পায়। সৈকতে জোয়ারের ঝাপটায় বালুর নিচ থেকে বেরিয়ে আসা প্রাচীন আমলের জাহাজটি বেরিয়ে আসে। পর্যটকসহ স্থানীয় লোকজন জাহাজটির বাইরের পিতলের প্রলেপ কেটে নিয়ে যায়। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এটি সংরক্ষণে পুলিশি পাহারা বসানো হয়। একই বছরের আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে জাহাজটি পরিদর্শন করেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ ইভাস মারে। চট্টগ্রামের কালুরঘাটের তাড়াতাড়ি শিপিং ইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইভাস মারে জাহাজটির খুটিনাটি বিষয়গুলো পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করেন।

স্বচক্ষে এটির বিভিন্ন দিক পর্যবেক্ষণ শেষে ইভাস মারে তখন বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এই নৌকাটি অসাধারণ এবং প্রাচীণকালের স্মৃতিবিজড়িত। নৌকাটির বয়স সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে পারেন নি তিনি। তবে তার ধারনা এটি শত বছরের বেশি পুরনো। নৌকাটি গরান কাঠ দিয়ে তৈরি বলেও তিনি অনুমানের উপরে বলেছিলেন। নৌকাটি বালুর নিচ থেকে পুরোটা উত্তোলন করে কুয়াকাটায় জাদুঘর করে সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। যাতে এটি হারিয়ে না যায়। নৌকাটির সঙ্গে এখানকার রাখাইন সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যের সম্পর্ক রয়েছে মন্তব্য করে একারণে অন্য কোথাও না নেয়ার পরামর্শ ছিল মারের। তার মতে প্রাচীণ এই নৌকাটি যে অবস্থায় রয়েছে এভাবেই সংরক্ষণ করলে দেশি-বিদেশি পর্যটক কুয়াকাটার প্রতি ভ্রমণে আকৃষ্ট হবে।

একই বছরের ১০ জুলাই প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী গবেষক গোলাম ফেরদৌস, একজন সিনিয়র ড্রাফট্সম্যান, একজন আলোকচিত্রকর এবং কলাপাড়ার তৎকালীন ইউএনও দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী (বর্তমানে উপ-সচিব) নৌকাটি পর্যবেক্ষণ করেন। ওই টিমের প্রধান গোলাম ফেরদৌস বলেন, এটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রতœœসম্পদ। বাংলাদেশে ইতোপুর্বে এই ধরনের নৌকা এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। এটি অবিকলভাবে সংরক্ষণ করে কুয়াকাটায় স্থাপন করতে পারলে পর্যটকের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় হবে।

এর ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালের নবেম্বর মাসে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর বিভাগ জাহাজটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম কুয়াকাটায় এসে জাহাজটির অবস্থান শণাক্ত করে। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক বেগম শিরীন আক্তারকে প্রধান করে গঠিত টিমের অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন, সহকারী পরিচালক আফরোজা খান মিতা, আঞ্চলিক পরিচালক (খুলনা) মোঃ আব্দুল বাতেন, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক, আন্তর্জাতিক নৌকা বিশেষজ্ঞ ইভাস মারে, মিঃ আরনল্ড, নৌবাহিনীর একটি প্রতিনিধিদল।

জাহাজটি উত্তোলন করে যথাযথভাবে সংরক্ষণের কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বাংলাদেশী ট্র্যাডিশনাল বোট মিউজিয়াম ও চট্রগ্রামের তাড়াতাড়ি শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইভাস মারের নেতৃত্বে একটি সাব কমিটি গঠন করে নৌকাটি ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে বেড়িবাঁধের কান্ট্রি সাইডের স্লোপে একটি টিনশেড এর নিচে স্থাপন করা হয়। দুই দিকে তখন বাউন্ডারি দেয়াল করা হয়। জাহাজটি দেখাশোনার জন্য একজন নিরাপত্তা কর্মীর ব্যবস্থা রাখা হয়। প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক এ প্রাচীন পালতোলা জাহাজটি দর্শন করছেন। তবে জাহাজটির অবকাঠামো নড়বড়ে হয়ে গেছে অনেকটা। এর ফলে প্রাচীন এই মূল্যবাণ পুরাকীর্তি স্থায়ীভাবে সংরক্ষণে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। খুলনা বিভাগীয় প্রতœতত্ব অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, আড়াইশ বছর পুর্বে নৌকাটি যে আদলে গড়ে তোলা হয়েছিল গভেষণা করে নতুন করে ওই আদলে গড়ে তোলার জন্য গভেষক দল কাজ করছেন। কবে নাগাত গভেষনা শেষে আবার নৌকাটি নির্মাণ কাজ শুরু করবেন তা এখনও অধরাই রয়ে গেছে।

কালের স্বাক্ষী এই নৌকাটির এমন বেহাল দশায় রাখাইনরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কুয়াকাটা কেরানীপাড়ার শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহারের ঠাকুর (বানতে) জ্ঞানেত্র মহাথের বলেন, আদি পূর্ব পুরুষের এই নৌকাটি নিয়ে অনেক স্মুতি রয়েছে ও ইতিহাস রয়েছে আমদের রাখাইদের। নৌকাটি সংরক্ষনের জন্য কোটি টাকার জমি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে মন্দির কমিটির পক্ষ্য থেকে।

কুয়াকাটা ট্যুর অপারেটর এসোশিয়েশন সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, কুয়াকাটার আদিবাসী রাখাইনদের ইতিহাস ঐতিহ্যে ও সংস্কৃতির স্বাক্ষী বহনকারী এই নৌকাটি অযতেœ অবহেলায় পরে রয়েছে। পর্যটকদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপুর্ণ নিদর্শন। দ্রুত এটি সংরক্ষন করা প্রয়োজন হয়ে পরেছে।
বরিশাল ও খুলনার প্রততœ বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা বলেন, কুয়াকাটার পালতোলা জাহাজটির সংস্কার এবং যাদুঘরের ভবন নির্মাণের কাজ কিছু দিনের মধ্যেই শুরু হবে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD