মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৭ পূর্বাহ্ন
তানজিল জামান জয়, কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি।। সমুদ্র উপকূলের পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় উপজেলার চারদিকে এখন বাতাসে সোনালী ধানের শিষ দুলছে আর দোল খাচ্ছে সোনালী-সবুজের আভায় বোরো ধান। বোরো ধানের সবুজের সমারোহ দেখলে “ধানে ধানে পুস্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা ” কথাটির স্বার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায়। কৃষকগন বর্তমানে মওসুমে নানা প্রতিকুলতার মধ্যে বোরো পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
বীজতলায় পানি দেয়া, সার- কীটনাশক প্রয়োগ এবং পানি নিস্কাসনের ব্যবস্থা করাসহ বোরো পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষকগন কঠোর পরিশ্রমর মাধ্যমে জমির ধান গুলো নিবির পরিচর্যা করে পুর্নাঙ্গ বড় করার পর ধানের বাইল খুবই ভাল ছাড়ছে। উপজেলার অনেক মাঠে পামড়ি, মাজরা, শিশ কাটা, কারেন্ট, সাদাপোকা, কালোপোকা পোকায় বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। অনেক মাঠে পোকার আক্রামন রয়েছে, তারপরও ভালো ফলনের আশা করছে কৃষকেরা।
যেখানে যেটুকু রোপন করা হয়েছে সে টুকুই ভাল ফলন হচ্ছে। চলতি মৌসুমে রোপা বোরো ফলন ভালো হওয়ার আশা করছে কৃষকেরা। ক্ষেত জুড়ে উকি দিচ্ছে সোনালী ধানের শীষ। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সোনালী ধানের শীষ বের হয়ে আসছে। ফসল ঘরে তোলার আসায় প্রতিটি কৃষক পরিবারের চোখে মুখে লেগে আছে সোনালী স্বপ্ন পূরনের ছাপ। রোপা বোরো ধান বাম্পার ফলনের সম্ভবনায় কৃষকরা বেশ খুশি। ক’দিন পরেই পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষকরা ক্ষেতের স্বপ্নের সোনালী ধান কাটা শুরু করবে।
কৃষক-কৃষানীরা মনের আনন্দে চলতি মৌসুমের ফসল ঘড়ে তুলবে। বয়ে যাবে আনন্দের বন্যা। আর ফুটবে মুখে হাসি। বর্তমান নানা প্রতিকুলতার কারনে এখন আর আউস চাষ হয় না। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে কৃষক আবহাওয়া সাথে মিলিয়ে ধান চাষ করছে কৃষকেরা। চলতি বছর আমন ধানের ভালো দাম পাওযায় চাষীরা এখন বোরো মৌসুমে বোরো ধান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে।
কৃষি অফিসের তথ্য সূত্রে জানা যায়, কলাপাড়া উপজেলার আয়তন ৪৯২১০২ বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে পৌরসভা ২টি, ইউনিয়ন ১২ টি, গ্রাম ২৪৭টি। এখানে মোট জমির পরিমান ৪৯২১০ হেক্টর। যার মধ্যে কৃষি জমি ৪০৯৪০ হেক্টর। এ বছর ৪০০০ হাজার হেক্টার জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এ উপজেলার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ কোন না কোন পর্যায় কৃষি কাজের সাথে। চলতি বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন ও ভালো দাম আশা করছেন চাষীরা।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সত্যি সত্যিই ধান গাছের বুকচিরে বেরিয়ে কৃষকের স্বপ্ন। প্রত্যন্ত গ্রাম-গায়ের কৃষকরা তাদের ক্ষেতের ধান কাটার অপেক্ষায় রয়েছে। বাতাসে সোনালী ধানের শিষ দুলছে। ক্ষেতের মধ্যে পোতা বাঁশের কঁঞ্চি ও গাছের ডালের উপর ফিঙ্গে, শালিক, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসে আছে। সুযোগ বুঝে ধানক্ষেতের ক্ষতিকারক পোকা ওইসব পাখিরা খেয়ে ফেলছে। আবার অনেকে অধিক ধান পাওয়ার আশায় নিজ নিজ জমিতে রাসায়নিক ও জৈব সার প্রয়োগ করছে। কেউ আবার ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছে।
তবে কখন নতুন ধান ঘরে তুলবে এ স্বপ্নে বিভোর উপকূলের ওইসব কৃষকরা। তবে আর কিছু দিন পর ধান কাটা শুরু হবে। তাই আর কৃষি বিভাগ বলছে বোর আবাদে কৃষকদের আদর্শ চারা উৎপাদন ও জমিতে পারচিংসহ (ডাল পোতা) সবধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা দিচ্ছেন। তবে সার ও কীটনাশকের দাম কমানোর দাবি চাষীদের। কোন প্রকার প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে বোরো ধানের বাম্পার ফলনও আশা করছেন চাষীরা। কৃষকের দাবি যে সব খাল গুলো ভরাট হয়ে ও দখল হয়ে গেছে ওই খাল গুলো উদ্ধার করে খনন করলে পানির সমস্যা সমাধান হবে। অনেক জায়গায় বোরো চাষাবাদ করে পানির কারনে বোরা চারা রোদে পুড়ে মারা গেছে। শুধু পানির অভাবে আবার অনেক কৃষকের বোরো ধানের শিষ বেরা হচ্ছে না। জমি ফেটে চেীচির হয়ে গেছে।
ধুলাসার ইউনিয়নে চরচাপলী গ্রামের কৃষক মো. বশার শিকদার বলেন, আমন ধানের ভালো দাম পেয়েছি। আর সে কারণেই বোর ধান চাষ করছি। আশা করি বাজারে ধানের ভালো দাম পাওয়া যাবে। কিন্তু কৃষি অফিস থেকে কৃষকের সরকারী বরাদ্ধকৃত সার, বীজ প্রত্যক্ষ কৃষকেরা পায়না। রাজনৈতিক ছত্রছায়া যারা আছে তাদের নামে বরাদ্ধ করা হয় সার, বীজ। স্লুইজ নিয়ন্ত্রন ব্যাপারে পানি নিয়ে রয়েছে বড় সমস্যা। সরকার যদি অবৈধ খাল দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়া খাল খুলে খনন করলে কৃষকের বোরো চাষে আরো কৃষক উৎসাহিত হবে।
আরেক জন কৃষক আক্ষেপ করে বলে , সময়মত কোন কৃষি অফিসের লোককে খুজে পাওয়া যায় না। তারা সরকারী বেতন-ভাতা ঠিকই নিয়ে থাকে কিন্তু কাজ করে নিজের জন্যে কোন কৃষকের কাজ করে না। এরা কোন কৃষকের খোঁজ রাখেনা, এরা খোঁজ রাখে অফিসে ভুয়া ভাউচারের আর নিজেদের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকে, কৃষকের খোঁজ নেয়ার সময় কই?।
কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকতা আবদুল মান্নান বলেন, আমন ধানের ভালো দাম পেয়ে কৃষকেরা এ বছর গত বছর তুলনা ব্যাপকভাবে বোরো চাষ করেছে। এখন যদি বৃষ্টি হতো তা হলে কৃষকের পানি নিয়ে যে সমস্যা তা দুর হতো। বোরো ধানের গাছের অবস্থা খুবই ভাল আছে। আমরা কৃষি অফিস থেকে কৃষকের যত সম্ভব পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
Leave a Reply