আকতার ফারুক শাহিন॥ করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে চলমান লকডাউন এবং জনসাধারণকে ঘর থেকে বেরুতে সরকারিভাবে নিরুৎসাহিত করার সময়ে অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বরিশালের জনপ্রতিনিধিরা।

যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকার কারণে শুরুর দিকে কিছুটা জটিলতা হলেও বর্তমানে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া প্রায় সব জনপ্রতিনিধিই রয়েছেন যার যার নির্বাচনী এলাকায়।

চরম বিপদে পড়া দিন এনে দিন খাওয়া মানুষকে তারা দিচ্ছেন নিয়মিত খাদ্য সহায়তা। সম্মান বাঁচিয়ে গোপনে মধ্যবিত্তের ঘরে ঘরে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিতে খোলা হয়েছে একাধিক হটলাইন। সেই সঙ্গে করোনা মোকাবেলায় চলছে নানা সচেতনতামূলক কার্যক্রম।

বরিশালে নিন্ম আয়ের ৪০ হাজার মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন। বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে রোগীর স্বজনদেরও খাদ্য সরবরাহ করছে বিসিসি।

সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, ‘কেবল এ ৪০ হাজার নয়, যতদিন প্রয়োজন ততদিন খাবারের জোগান দেব আমরা। নগরীর ১২টি স্থানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি নিয়মিত জীবাণুনাশক স্প্রে ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা তাদের দৈনন্দিন দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন রাখছেন নগর।’

হটলাইনে আসা ফোন অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন বরিশাল-৫ (সদর) আসনের এমপি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিম। এভাবে এ পর্যন্ত ৭ হাজার পরিবারকে খাবার দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

বরিশাল সদর উপজেলার চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টুও ঘুরে ঘুরে খাবার বিতরণ করছেন দরিদ্র মানুষের মধ্যে।

একইভাবে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার অসহায় মানুষকে সহায়তা প্রদান করে চলেছেন বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনের এমপি পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদায় পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, বরিশাল-২’র এমপি শাহে আলম, বরিশাল-৪’র এমপি পঙ্কজ দেবনাথ ও বরিশাল-৬’র এমপি জাতীয় পার্টির রত্না আমিন।

এখনও এলাকায় আসেননি বরিশাল-৩ আসনের এমপি জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু।

‘মানুষ মানুষের জন্য’ নামে কর্মসূচির আওতায় নির্বাচনী এলাকা ভোলা-৪’র চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলায় নিজস্ব অর্থায়নে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করছেন সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। পরিস্থিতি ভালো না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ভোলা-৩ নির্বাচনী এলাকায় ‘ঘর থেকে না বেরোলে খাদ্য সহায়তা’ শিরোনামে ত্রাণ বিতরণ করছেন এমপি নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন।

ভোলা-২ আসনের এমপি আলী আজম মুকুলও এলাকায় উপস্থিত থেকে অসহায় মানুষের মধ্যে বিতরণ করছেন খাদ্য সহায়তা।

ভোলা-১ (সদর) আসনে ত্রাণ বিতরণ চলছে সেখানকার এমপি সাবেক মন্ত্রী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা তোফায়েল আহম্মেদের নামে।

ঝালকাঠি-২ আসনের এমপি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক মন্ত্রী আমীর হোসেন আমুর নামে চলছে সদরে ত্রাণ বিতরণ।

শনিবার পর্যন্ত এলাকায় আসেননি ঝালকাঠি-১ আসনের এমপি বিএইচ হারুন। এলাকায় না থাকলেও পিরোজপুর-১ (সদর) আসনে সেখানকার এমপি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের উদ্যোগে চলছে ত্রাণ বিতরণ।

সদর আসনের সাবেক এমপি একেএমএ আউয়ালের উদ্যোগেও সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে দরিদ্রদের। নিজে এলাকায় না থাকলেও এমপি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর প্রতিষ্ঠিত দুস্থ সমাজকল্যাণ সংস্থার নামে ত্রাণ বিতরণ চলছে পিরোজপুর-২ (ভাণ্ডারিয়া-কাউখালী) আসনে।

এখন পর্যন্ত এলাকায় আসেননি পিরোজপুর-৩ আসনের এমপি জাতীয় পার্টির রুস্তুম আলী ফরাজী। লকডাউনের আগে থেকেই এলাকায় অবস্থান করা পিরোজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজের উদ্যোগে পুরো জেলায় প্রায় ৩০ হাজার পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে খাদ্য সহায়তা।

পৌর মেয়র রাফিউদ্দিন ফেরদৌস ও আবদুল মালেকের উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ চলছে মঠবাড়িয়া ও পিরোজপুর পৌরসভায়। এলাকায় অবস্থান করে দরিদ্র মানুষকে সহায়তা দিচ্ছেন পটুয়াখালী-৩ আসনের এমপি শাহজাদা সাজু ও পটুয়াখালী-৪’র মহিব্বুর রহমান মুহিব। এলাকায় নেই পটুয়াখালী-২ আসনের এমপি সাবেক চিফ হুইপ আসম ফিরোজ।

বাউফলে তার নামে ত্রাণ বিতরণ করেছে সেখানকার আওয়ামী লীগ। এলাকায় থাকলেও খুব একটা বাইরে বের হন না পটুয়াখালী-১ (সদর) আসনের এমপি শাহজাহান মিঞা।

পৌর মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল, মহিউদ্দিন আহম্মেদ, মতিউর রহমান, বিপুল চন্দ্র হালদার ও বারেক মোল্লার উদ্যোগে নিয়মিত ত্রাণ বিতরণ চলছে বাউফল, পটুয়াখালী, আমতলী, কলাপাড়া ও কুয়াকাটা পৌরসভায়।

এলাকায় থেকে ত্রাণ বিতরণ করছেন বরগুনা-১ ও ২ আসনের এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এবং শওকত হাচানুর রহমান রিমন। সাগর পাড়ের তালতলী উপজেলায় ২ হাজারের বেশি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান রেজভিউল কবির।

রাজধানী ঢাকার এমপি হলেও শনিবার পর্যন্ত জন্মস্থান বরিশালের বাবুগঞ্জে আসেননি সাবেক মন্ত্রী ওয়ার্কার্স পার্টির এমপি রাশেদ খান মেনন।

বুধবার তার দলের দুই নেতা ত্রাণ কেলেংকারীর ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে কারাদণ্ডের শিকার এবং ত্রাণ আত্মসাৎ মামলার আসামি হয়েছেন। বাবুগঞ্জে রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি অসহায়দের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছেন গত জাতীয় নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক।

দক্ষিণের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী নির্বাচিত এমপিদের অনেকেই যেমন চলমান করোনা পরিস্থিতিতে সহায়তা প্রশ্নে নিশ্চুপ তেমনি গত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়া নেতাদেরকেও দেখা যাচ্ছে না এলাকায়।

আবার কিছু সংসদ সদস্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা না দিয়ে কেবল সরকারি সহায়তাই দিচ্ছেন এলাকায়। সরকারি সহায়তার চাল-ডাল নিজে উপস্থিত থেকে বিতরণ করে এমন ভাব দেখাচ্ছেন যেন এগুলো তারাই দিচ্ছেন। বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছে নির্বাচনী এলাকাগুলোয়।