মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৫ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধি॥ বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে ২০১৯ সালের এইচএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র জালিয়াতির অভিযোগে বরিশাল মেট্রোপলিটন এয়ারপোর্ট থানায় ১৯ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত শিক্ষা বোর্ডের রেকর্ড সাপ্লায়ার গোবিন্দ চন্দ্র পাল এবং ১৮ পরীক্ষার্থীকে আসামি করা হয়েছে।
শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আনোয়ারুল আজিম বাদী হয়ে সোমবার (২৬ আগস্ট) বিকালে মামলাটি দায়ের করলেও তা এজাহারভুক্ত করা হয় রাতে। মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওসি কাজী মাহাবুবুর রহমান।
ওসি বলেন, ১৯ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের হলেও আসামির সংখ্যা ৩০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই ঘটনার সঙ্গে শিক্ষা বোর্ডের আরও অনেকে জড়িত রয়েছে। আমরা প্রমাণ স্বরূপ জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল কাগজপত্র বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে চেয়েছি। কাগজপত্র দেওয়ার অধিকতর তদন্ত শেষে যারা যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের সকলকেই এ মামলার আসামি করা হবে।
নিরীক্ষক নলছিটি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আবু সুফিয়ান বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় রেকর্ড শাখায় কর্মরত বেশ কয়েকজন কর্মচারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) উচ্চতর গণিতের প্রধান পরীক্ষক পিরোজপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের সহযোগী অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, আমার (নিরীক্ষক নলছিটি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আবু সুফিয়ান) এবং পরীক্ষক বরিশাল নগরীর মানিক মিয়া মহিলা কলেজের শিক্ষক মনিমোহনের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ে বসে তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এ সময় পরীক্ষক মনিমোহনকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সদস্যরা মনিমোহনের কাছে জানতে চান ‘পরীক্ষকের খাতায় নাম না থাকার পরেও আপনি কীভাবে খাতা পেলেন। শুধু তাই নয়, সবাই খাতা পেয়েছে ২০০ আর আপনি কীভাবে ২৬৯টি খাতা পেলেন’। কিন্তু কোনো প্রশ্নেরই সঠিকভাবে জবাব দিতে পারেন নি মনিমোহন। এক পর্যায়ে তিনি তদন্ত কমিটির সামনে অসংলগ্ন কথা বলা শুরু করেন। তিনি কমিটির কাছে বলেন ‘কীভাবে খাতা পেয়েছি আমার মনে নেই। আমাকে কেন খাতা বেশি দেওয়া হয়েছে জানি না।’
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বরিশাল অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর মো. মোয়াজ্জেম হোসেন ও সদস্য শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক লিয়াকত হোসেন সিকদার এবং বিদ্যালয় পরিদর্শক আব্বাস উদ্দীন মুখ খুলতে রাজি হননি।
বরিশাল শিক্ষাবোর্ড সূত্র বলছে, মনিমোহন সবই জানেন, কিন্তু মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী সেজে সব দোষ এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করছেন। অপর দিকে উচ্চতর গণিত ছাড়াও অন্য সব বিষয়ে জালিয়াতি হলেও সেগুলো সামনে আসছে না। ওই ১৮ শিক্ষার্থী কেবল উচ্চতর গণিত বিষয়ে নয় ১৩টি বিষয়েই জালিয়াতি করেছে বলে জানা গেছে। কিন্তু উচ্চতর গণিত ছাড়া অন্য বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে তদন্ত কমিটিও কথা বলছেন না।
শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস জানিয়েছেন, তদন্তে সবকিছুই বেরিয়ে আসবে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, উচ্চতর গণিত বিষয়ে উত্তরপত্র ফাঁস হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ার পর ১৮ পরীক্ষার্থীর চলতি বছরের পরীক্ষা বাতিল করা হয়। এছাড়া তাদের আগামী তিন বছর পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি না দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। এছাড়া এর সঙ্গে জড়িত রেকর্ড সাপ্লায়ার গোবিন্দ্র চন্দ্র পালকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এখন এ ঘটনার সঙ্গে আর কারা জড়িত রয়েছে তা খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
Leave a Reply