সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৫ অপরাহ্ন
পটুয়াখালী প্রতিনিধি॥ স্বামী-স্ত্রীর বিরোধের ঘটনায় সালিস করতে গিয়ে কিশোরী বয়সের অন্যের স্ত্রীকে বিয়ে করলেন চেয়ারম্যান। নিজ স্ত্রীকে প্রভাবশালী চেয়ারম্যান জোর করে বিয়ে করার ঘটনায় ঘুমের অষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী। গতকাল শুক্রবার ঘটনাটি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কনকদিয়া ইউনিয়নে ঘটে।
জানাগেছে, কনকদিয়া ইউনিয়নের নারায়নপাশা গ্রামের রমজান (২৫) নামের এক যুবকের সঙ্গে ইউনিয়নের চুনারপুল এলাকার নাজমিন আক্তার ওরফে নছিমনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত তিন মাস আগে উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের তাঁতেরকাঠি গ্রামের সোহেল আকনের সঙ্গে নছিমনের বিয়ে হয়। বিয়ের সাতদিনের মধ্যে নছিমন সোহেলকে তালাক দিয়ে রমজানকে বিয়ে করে সংসার শুরু করে।
নছিমনের বাবা নজরুল ইসলাম জানান, বিয়ের সময় নছিমন রমজানের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গোপন রাখে এবং বিয়ের পর তিনি বিষয়টি জানতে পারেন। রমজানের সঙ্গে নছিমনের প্রেম সংক্রান্ত বিষয়ে স্বামী সোহেলের বিরোধ সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে তালাক হয়ে যায়।
রমজানের বড় ভাই আলী ইমরান জানান, নছিমনের সঙ্গে সোহেল আকনের তালাক হওয়ার পর ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী রমজান ও নছিমনের বিয়ে হয়। কনের বয়স কম হওয়ায় বিয়ের কাবিন হয়নি।
কয়েকদিন আগে নছিমন তাদের বাড়ি যায়। এ বিয়ে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান নছিমনের বাবা নজরুল ইসলাম। ফলে রমজান ও নসিমনের পরিবারে মধ্যে টানাপোড়নের শুরু হলে ঘটনাটি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহিন হাওলাদারের কাছে নজরুল ইসলাম মিমাংসার জন্য দারস্থ হন। গতকাল শুক্রবার দুই পক্ষকে চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারের আয়লা বাজারস্থ বাসায় যেতে বলেন। সেখানে আলোচনার একপর্যায়ে চেয়ারম্যান নিজেই নছিমনকে বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরপর সালিস বৈঠক পণ্ড হয়।
এ ঘটনার পর রমজান ক্ষোভে কষ্টে ঘুমের অষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। রমজান বর্তমানে বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
নছিমনের স্বামী দাবিদার মো. রমজান বলেন, ‘আমি এক বছরেরও বেশি সময় আগে নছিমনের নানা বাড়ি সামনে আল মামুন জামে মসজিদে ইমাম ছিলাম। নানা বাড়ির কাছেই নছিমনের বাড়ি। সে আমার কাছে কোরআন শিখত। সেখান থেকে তার সাথে আমার সম্পর্ক। একপর্যায়ে বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে নছিমনকে তার বাবা জোর করে অন্যত্র বিয়ে দেন। নছিমন সেখানে সংসার করেননি। ওই স্বামীকে তালাক দিয়ে আমাকে বিয়ে করে।’
তিনি আরো বলেন, এনিয়ে আমার শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে আমার সম্পর্কের অবনতি হয়। একপর্যায়ে তারা চেয়ারম্যানের কাছে বিচার দেন। তিনি সালিস বৈঠকের নামে আমার স্ত্রীকে দেখে নিজেই জোন করে বিয়ে করেন চেয়ারম্যান। আমার স্ত্রীকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন। ওকে ছাড়া আমি বাঁচব না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারের ঘনিষ্ট কয়েক ব্যাক্তি জানান, শুক্রবার জুমাবাদ তার বাসভবনে বসে পাঁচ লাখ টাকা কাবিনে নছিমনের বিয়ে হয়। স্থানীয় আবু সাদেক নামের এক ব্যক্তি বিয়ে পড়ান। বিয়ে রেজিস্ট্রি করেন মাওলানা আইউব কাজী। বিয়ের সময় বরের পক্ষে স্বাক্ষী ছিলেন স্থানীয় নজরুল ইসলাম ও ছালাম হাওলাদার। বরের উকিল ছিলেন পলাশ এবং কনে পক্ষে উকিল ছিলেন সুমন হাওলাদার। বিয়ের কাবিন নামায় কনের বয়স উল্লেখ করা ১৮ বছর ২ মাস ১৫দিন বছর।
এদিকে, এটি চেয়ারম্যান শাহীনের দ্বিতীয় বিয়ে। চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারের প্রথম স্ত্রী সন্তানরা পটুয়াখালী শহরের বসবাস করেন। তার বড় ছেলে বিবাহিত এবং মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী।
শাহিন হাওলাদার গত সোমবার (২১ জুন) অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা মার্কা নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর আগেও তিনি চেয়ারম্যান ছিলেন। দ্বিতীয়বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করে উপজেলায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।
এ ব্যাপারে শাহিন হাওলাদার বলেন, ‘মেয়েটিকে দেখে আমার পছন্দ হয়েছে তাই তাকে বিয়ে করেছি। তাছাড়া আমার প্রথম স্ত্রী থাকলেও আমার বিয়ের প্রয়োজন ছিল। আমার দ্বিতীয় স্ত্রীর বিয়ের বয়স হয়েছে। আমার দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি নিয়ে আনন্দিত।
ইউএনও মো. জাকির হোসেন বলেন, ’চেয়ারম্যানের তার দ্বিতীয় স্ত্রীর কাগজপত্র পর্যালোচনা হচ্ছে সে কিশোরী হলে অবশ্যই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
Leave a Reply