'ছেলেটা অনেক কষ্ট পেয়েছে, চোখে না দেখলে বোঝানো যাবে না’ Latest Update News of Bangladesh

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৭ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




‘ছেলেটা অনেক কষ্ট পেয়েছে, চোখে না দেখলে বোঝানো যাবে না’

‘ছেলেটা অনেক কষ্ট পেয়েছে, চোখে না দেখলে বোঝানো যাবে না’




ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ‘দীর্ঘদিন আমার ছেলেটা আইসিইউতে ছিল। সেখানে অনেক কষ্ট পেয়েছে, চোখে না দেখলে বোঝানো যাবে না। যদি সেদিন গুলি লাগার পর সেখানেই মারা যেতো, তাহলে হয়তো এতো কষ্ট পেতো না। আমি চাই না আর কোনো মায়ের বুক খালি হোক। সেদিন সকালে আমার ছেলে তার অফিসে যাওয়ার উদ্দেশে বাসা থেকে রওনা দিয়েছিল। সেই যাওয়াই তার শেষ যাওয়া হয়ে গেল। ‘আমার ছেলে নির্দোষ। তাকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও।’ কথাগুলো বলেই সেলিম তালুকদারের মৃতদেহের সামনে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মা সেলিনা বেগম। সান্ত্বনা দিতে আসা কেউই সন্তানহারা মাকে মাটি থেকে তুলতে পারছিলেন না। বাবাও নির্বাক। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে কথাও বলতে পারছিলেন না তিনি।

কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ জুলাই অফিসে যাওয়ার সময় রাজধানীর বাড্ডায় সহিংসতার মধ্যে পড়ে যান। সেখানেই মাথায় আর বুকে পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী সেলিম তালুকদার রমজান (২৬)।

আহত অবস্থায় ঢাকার ধানমণ্ডি পপুলার হাসপাতালে দীর্ঘ ১৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ১ আগস্ট সকালে তিনি না ফেরার দেশে চলে যান। সেলিম নলছিটি শহরের মল্লিকপুর এলাকার সুলতান তালুকদারের ছেলে।

তার স্বজনরা জানান, সেলিম ছিলেন বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয় অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউএফটি) ১৮১ ব্যাচের অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচার অ্যান্ড মার্চেন্ডাউজিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন। পাশাপাশি তিনি নারায়ণগঞ্জ বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে সহকারী মার্চেন্ডাইজার পদে চাকরি করতেন। তারা তিন বোন ও এক ভাই। তিনি ছিলেন মেজো। আন্দোলন চলাকালে অফিসে যাওয়ার সময় ঢাকার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মাথায়, বুকে, পিঠে ও ফুসফুসে গুলি লাগে সেলিমের। ঢাকায় কুমিল্লাপাড়া বাড্ডা লিংক রোডে তাদের বাসা। আট মাস আগে বিয়ে করেন সেলিম।

তার স্ত্রীর নাম সুমি আক্তার। পরিবারে তিনিই ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাকে হারিয়ে নির্বাক পরিবার। তার বাবা সুলতান পেশায় একজন গাড়িচালক। ৬০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি মাঝেমধ্যে নিজের গাড়ি ভাড়ায় চালান। মূলত ছেলের উপার্জনেই চলত তাদের সংসার।

 

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বিকেলে ঢাকার বাসার সামনে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর পরে লাশ অ্যাম্বুল্যান্সে করে ঝালকাঠির নলছিটি শহরের মল্লিকপুর এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে লাশবাহী গাড়ি মল্লিক বাড়িতে পৌঁছলে সেলিমের মৃতদেহ ঘিরে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। নিহতের পরিবারের কান্নায় চোখে পানি ধরে রাখতে পারেনি প্রতিবেশীরা। সেলিমের মা, বাবা, বোনসহ পরিবারের সবার আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে বাতাস।

ছেলের মৃতদেহ ধরে বিলাপ করে মা বলেন, ‘আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও’ বলে কান্না করেন তিনি। তার পাশেই বাবা সুলতান মূর্ছা যাচ্ছিলেন। কোনো কথাই বলছিলেন না তারা। ছেলেকে হারিয়ে শুধু কান্না করছিলেন। শুক্রবার সকাল ১০টায় বাড়ির উঠানে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। প্রতিবেশী ও স্বজনরা জানিয়েছেন, সেলিম খুব ভালো মানুষ ছিলেন। এলাকায় এলে স্থানীয়দের সম্মান করে চলাফেরা করতেন।

নিহত সেলিমের বাবা সুলতান তালুকদার জানান, ঘটনার দিন তিনি বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে কোটা বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। এসময় মাথায়, বুকে ও পিঠে তার গুলি লাগে। ফুসফুসেও লাগে গুলি। চার হাসপাতাল ঘুরে শেষে ধানমন্ডির পপুলারে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।

সেলিমের চাচা দুলাল তালুকদার কান্নার স্বরে বলেন, ‘আমার ভাতিজা অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিল। ওরা ঢাকাতেই বড় হয়েছে। সেখানেই পড়ালেখা করে চাকরি করছিল। এলাকায় এলে সবাই অনেক সম্মান করত। ওর মতো আরেকটি ভালো ছেলে আমি আর দেখিনি। আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করুন।’

সেলিমের জানাজায় এসেছিলেন তার সহপাঠী জয়নাল আবেদীন রানা। তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিক থেকে একসঙ্গে লেখাপড়া করেছি, বড় হয়েছি। আমাদের বন্ধুদের মাঝে অত্যন্ত বিনয়ী ও ভদ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। মেধাবী ছাত্র ছিল। বন্ধুত্বের টানে আজ তার গ্রামের বাড়ির জানাজায় ছুটে এসেছি।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD