সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৪ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক।। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জ্যারট এলাকার লেইঙ্গা খালটি পর্যায়ক্রমে প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে। সরকারি খাল দখল করে অবৈধভাবে বাড়িঘর ও দোকানপাটসহ পাকা স্থাপনা নির্মাণের মহোৎসব চলছে।
খালগুলো উপজেলা পরিষদ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও কোনো প্রকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে খাল দখলকারীরা অনেকেই কোনো অনুমতি নেয়নি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, পাকা বা কাঁচা দোকান ঘর নির্মাণের কোনো বন্দোবস্ত দেওয়া হয়নি। তবে প্রশাসনের নাকের ডগায় সরকারি জায়গা দখল করলেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে।
এছাড়া মইজ্জ্যারটেক হতে ব্রিজঘাট যাওয়া সড়কের সিএনজি স্টেশন সংলগ্ন খালটি দখলে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। প্রথমে খালের ওপর ছাপরা ও মাচা করে অস্থায়ী দোকান নির্মাণ এবং পর্যায়ক্রমে খাল ভরাট ও পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এতে মিয়া সওদাগরের চায়ের দোকান, রফিক সওদাগরের হার্ডওয়্যার দোকান, মিজান সওদাগরের চায়ের দোকান, ইসমাইল সওদাগরের চায়ের দোকান অনেকটা খালের উপর দাঁড়িয়ে আছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, কিছু কিছু জায়গায় খাল বন্ধ করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন। যে খালের ওপর দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে এটি একটি প্রবাহমান লেইঙ্গা খাল। কিন্তু গত কত বছর ধরে দেখা যাচ্ছে খালটির মালিক এখন প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। রাতারাতি দোকানপাট নির্মাণ করে ভাড়াও তুলছেন কেউ কেউ। এ কাজে তাদের কেউ বাধা না দেওয়ায় নতুন করে আরো বেশ কয়েকটি দোকানপাট নির্মাণ করছেন।
স্থানীয়রা বলেন, ফলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মইজ্জ্যারটেক খালটির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা। পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার উপক্রম হচ্ছে। জোয়ারের সময় পাশের ক্যাফে ফরহাদ হোটেলেও পানি প্রবেশ করে। এ ছাড়া এই খালগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন ইরি চাষাবাদের পানি সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় দিন দিন কমে যাচ্ছে বোরো আবাদ।
স্থানীয়রা আরো বলেন, সরকারি খাল দখল করে দেয়াল, দোকানপাট এবং বাড়ি নির্মাণ করলেও প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। প্রশাসনের দুর্বলতা ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দিন দিন কর্ণফুলীর খালগুলো দখলসহ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনিকভাবে এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ফের একাধিক প্রভাবশালী খাল দখল করছেন। এখনও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ধীরে ধীরে দখল হয়ে যাবে মইজ্জ্যারটেক সরকারি খাল। এতে গ্রামে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে অদূর ভবিষ্যতে। মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করবে। বন্ধ হবে ইরি-বোরো আবাদ। দেখা দেবে খাদ্য ঘাটতি। বিলীন হয়ে যাবে দেশি মাছ।
উপজেলা ভূমি সার্ভেয়ার পেয়ার আহমেদ বলেন, ‘দখলদাররা প্রভাবশালী কিনা জানিনা। তবে সঠিক সময়ে বাধা দেওয়া সম্ভব হয়নি হয়তো। তাই খাল দখল অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া বিভিন্ন কারণে মামলা করতে পারিনি। বিষয়টি আমরা আমাদের সহকারি কমিশনার ভূমিকে জানাবো। আশা করি ব্যবস্থা নেবেন।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী মিন্টু বলেন, ‘সরকারি ওই খালটি দখল করে রাখায় আমাদের পয়ঃনিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাজারের বর্জ্য না নামায় মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এ বিষয়ে খাল দখলকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এসিল্যান্ডের কাছে আমরা দাবি জানাচ্ছি।’
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের এক কর্মকর্তা জানান জানান, খাল বন্ধ করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে এ কাজ করার জন্য কাউকে সরকার লিজ বা বন্দোবস্ত দেইনি। কোথাও লিজ দিয়ে থাকলে তা ব্যবসা করার জন্য, বাড়ি বা পাকা স্থাপনা নির্মাণ করার জন্য লিজ দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) শিরীন আক্তার বলেন, ‘যতদুর জেনেছি লেইঙ্গা খাল পূনঃখনন করা হচ্ছে। চাষাবাদে যাতে সহায়ক হয় কৃষকের। ধারাবাহিকভাবে উপজেলার সমস্ত সরকারি খাল গুলো উদ্ধার করে পানি চলাচল সচল রাখা হবে। আর মইজ্জ্যারটেকের পাশে খালও উদ্ধার করা হবে।’
Leave a Reply