সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৮ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে করোনাভাইরাসের টিকা নিতে আসা স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটার ঘটনা ঘটেছে। এতে অনেক শিক্ষার্থী টিকা না নিয়ে বাড়ি ফিরে ফিরে গেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবকেরা শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করেছে বলে অভিযোগ একাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের।
এতে বিশৃঙ্খলা, হুড়োহুড়ি আর লাঠিপেটার ঘটনায় টিকা নিতে না পেরে অনেক শিক্ষার্থীই হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন বলে জানাগেছে।
ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের টিকা কিন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী এসেছে করোনা টিকা নিতে। টিকা দেয়া শুরু হলে আগে টিকা নিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের নিয়োজিত ১০-১২ জন স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা শুরু করেন। লাঠিপেটা থেকে বাঁচতে শিক্ষার্থীরা দিগ্বিদিক ছুটোছুটি করতে থাকে। অনেকেই পাশের নর্দমায় পড়ে আহত হয়। ওই কেন্দ্রে রেড ক্রিসেন্টের পোশাকধারী আরও ১০-১২ জন স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করছিলেন। সেসময় টিকা না নিয়েই বিরক্ত হয়ে আবার কেউ অসুস্থ হয়ে ফিরে যায় বাড়ির দিকে।
আখানগর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিরিন আকতার বলে, সকাল ৬টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়েছি। আমাদের স্কুল থেকে প্রায় ৩০টি ইজিবাইকে করে আমরা হাসপাতালে এসেছি। ৯টার দিকে এসে দেখি প্রচুর ভিড়। লাইনে দাঁড়াতেই শুরু হলো লাঠিপেটা। লাঠিপেটা থেকে বাঁচতে আমার তিন সহপাঠী নর্দমায় পড়ে আঘাত পায়।
গড়েয়া ইউনিয়নের চকহলদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহিমা ইসলাম। বড় ভাইয়ের সাথে এসেছে টিকা নিতে। কিন্তু টিকা কেন্দ্রে ভিড় আর স্বেচ্ছাসেবীদের হাতে থাকা লাঠি দেখে ভয় পায় সে।
ফাহিমার বড় ভাই স্বজল বলেন, টিকা কেন্দ্রে হাজার হাজর শিক্ষার্থী টিকা নিতে আসছে কিন্তু এখানে টিকা নিতে এসে শিক্ষার্থীদের নাকাল অবস্থা। অনেক ভিরের কারণে স্বেচ্ছাসেবীরাও সামাল দিতে হিম সিম খাচ্ছে।
এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, দিনের পর দিন টিকা কেন্দ্রে এসেও করোনা টিকা না নিতে পেরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এতে টিকা নিতে আগ্রহ হারাচ্ছে অনেকে।
পারপুগী উচ্চ বিদ্যালয়ের তানিশা মিম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, এখানে শৃঙ্খলতার কোনো বালাই নাই। স্বেচ্ছাসেবীদের হাতের লাঠি দিয়ে কেউ একজন আঘাত পেয়েছে। এ নিয়ে অনেক্ষণ এখানে দৌড় ঝাপের ঘটনা ঘটেছে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। আসলে এমন পরিস্থিতিতে যে কেউ টিকা না দিয়ে বাড়ি চলে যাবে। আমিও চলে যাচ্ছি।
টিকা প্রদান কাজে নিয়োজিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বেচ্ছাসেবী বলেন, আমাদের কিছু করার নাই। এত শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ৬টা বুথে ১৯ জন মানুষ টিকা দিয়ে কাভার করা সম্ভব না। আমরা হিমশিম খাচ্ছি। এখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। কয়েক দফা তারা ঠেলাঠেলির কারণে হাতাহাতিও করছে। উঠতি বয়সের ছেলেরা অল্পতেই রেগে যাচ্ছে। যখন তখন ঝামেলা বাঁধছে।
ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন ডা. নূর নেওয়াজ আহমেদ বলেন, সদর হাসপাতালে শিক্ষার্থীদের ফাইজার টিকা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও পুরাতন সদর হাসপাতালে বুস্টার ডোজ ও করোনা টিকা দেয়া হচ্ছে। বুথ সংখ্যা কম থাকায় কেন্দ্রের পাশে ভিড় জমছে। তবে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া শিক্ষার্থীদের লাঠি পেটার ঘটনা দুঃখজনক।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, করোনার টিকা নিতে আসা শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এটা কেন ঘটল তা খতিয়ে দেখব। আর শিক্ষার্থীদের সুশৃঙ্খলভাবে টিকা দিতে কেন্দ্র বাড়ানোর বিষয়টি ভেবে দেখছি।
উল্লেখ্য, সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও জেলায় ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১ লাখ ৬২ হাজার ৮৫৯ জন শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর জেলায় শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। জেলায় বুধবার পর্যন্ত ১ লাখ ১৫ হাজার ৫০২ শিক্ষার্থীকে প্রথম ডোজ ও ৬২ হাজার ৮৮ শিক্ষার্থীকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রে বুধবার ৩ হাজার ১০০ শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়া হয়। আজ ওই কেন্দ্রে টিকা নিতে আসা শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়।
Leave a Reply