সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৯ অপরাহ্ন
বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি॥ পটুয়াখালীর বাউফলে অষ্টম শ্রেণীর সেই শিক্ষার্থী নাজনিন আক্তার (১৪) বিয়ের একদিন পরই চেয়ারম্যানকে তালাক দিয়ে প্রেমিক রমজানকে বিয়ে করেছেন। আজ রোববার সকালে প্রেমিক রমজানের মামা বাড়িতে বসে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। এরআগে শনিবার সন্ধ্যায় কনকদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদারকে (৬০) তালাক দেয় নাজনিন।
বর্তমানে কুম্ভখালী গ্রামের মামা শশুর পলাশ হাওলাদারের বাড়িতেই আছেন নাজনিন। এদিকে চেয়ারম্যানকে তালাক দেয়ার বিষয়টি নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
অনেকেই মনে করছেন, বিচারপ্রার্থী কিশোরীকে বিয়ে করে চেয়ারম্যান বিপাকে পড়েছেন। অবশ্য কিশোরী নাজনিন বলেছেন, রোববার ভোরে তার প্রেমিক রমজানের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে। এখন তিনি শৃংখলমুক্ত হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, মে মাসে কনকদিয়া ইউনিয়নের চুনারপুল এলাকার নজরুল ইসলাম হাওলাদারের মেয়ে নাজনিনের সঙ্গে নাজিরপুর ইউনিয়নের তাঁতেরকাঠি গ্রামের গার্মেন্টকর্মী সোহেলের বিয়ে হয়। ওই বিয়েতে সম্মতি ছিল না নাজনিনের। তাছাড়া নাজনিনের সঙ্গে তার গৃহশিক্ষক রমজানের প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন সোহেল, নাজনিন ও রমাজানের পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। গত শুক্রবার কনকদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কাছে মীমাংসার জন্য যান উভয় পরিবারের সদস্যরা। সেখানে সোহেল ও নাজনিনের বিয়ে বিচ্ছেদ করেন চেয়ারম্যান। শালিস বৈঠকে বসে নাজনিন রমজানের সঙ্গে সংসার করতে চায়। এ সময় চেয়ারম্যান নাজনিনকে দেখে পছন্দ করেন। তিনি নাজনিনের বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেন। এছাড়াও রমজান গরীব, তোমাকে খাওয়াবে কি, আমাকে বিয়ে করলে ভবিষ্যত ভাল হবে এসব কথা বলে নাজনিনকে নানা প্রলোভন দেখান চেয়ারম্যান।
নাজনিনের সম্মতি নিয়ে শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর কাজী ডেকে চেয়ারম্যান বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেন। চেয়ারম্যানের দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে বিয়ে করেছেন। চেয়ারম্যানের অসম বিয়ের পর এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
চেয়ারম্যানের একটি ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, বিয়ের পর সামাজিক ও পারিবারিকসহ নানা চাপে চেয়ারম্যান বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। তারপরই তিনি বিয়ে ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। একদিন পরেই শনিবার সন্ধায় কাজী ডেকে নাজনিনের কাছ থেকে তালাকনামা রাখেন তিনি। অবশ্য চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদার বলেন, মেয়েটি তার প্রেমিকের কাছে ফিরে যেতে চায়। সে সুখে থাকতে চায়। আমি জোড় করে কারও সঙ্গে সংসার করতে চাই না। বিয়ের পর আমার ঘরেই ছিল নাজনিন। তাকে একবারের জন্যও স্পর্শ করিনি।
নাজনিন বলেন, আমার সিদ্ধান্তেই চেয়ারম্যানকে বিয়ে করেছি। আবার আমিই তাকে তালাক দিয়েছি। আজ রমজানের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছে। আমার জন্য রমজান আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। সে হাসপাতাল থেকে ফিরে এসেছে। আমি এখন তাকে নিয়েই সংসার করতে চাই। আপনারা দোয়া করবেন।
এদিকে কিশোরীকে বিয়ে করার অপরাধে চেয়ারম্যানের কোন শাস্তি হবে কি না। এমন প্রশ্নে বাউফলের উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন বলেন, খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে, যদি বাল্যবিয়ের ঘটনা হয় তাহলে চেয়ারম্যানকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।
Leave a Reply