সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪১ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ পটুয়াখালীতে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কলেজ ছাত্র তমাল বেপারীকে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাকরি দেয়ার কথা বলে ৫ লাখ টাকা নিয়েও চাকরী দিতে না পারায় সেই টাকা ফেরত চাওয়া-ই কাল হয় নিহত তমালের। কুয়াকাটা যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে মাঝপথে মাইক্রো চাপা দিয়ে হত্যা করা হয় তমালকে। ২০২০ সালের ১৩ নভেম্বর আমতলী সদর ইউনিয়নের খুড়িয়ার খেয়াঘাট নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। এমন অভিযোগ এনে বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করেন বাউফল থানার সিংহেরকাঠি গ্রামের মন্টু বেপারীর স্ত্রী হতভাগ্য মা তৃণা বেপারী।
মামলায় আসামী করা হয় বাউফল থানার সিংহেরকাঠি গ্রামের শান্তিঞ্জন বেপারীর ছেলে উজ্জল বেপারী (২২) ও একই থানার চররঘনদ্দিন গ্রামের বিধান বিশ^াসের ছেলে শুভ বিশ^াসকে। বিজ্ঞ আদালত একই ঘটনায় পূর্বে একটি ইউডি মামলা হওয়ায় (মামলা নম্বর ২৯/২০২০) সিআর মামলাটি (মামলা নম্বর ১১৩/২০২১) স্থগিত করেন। ফলে ইউডি মামলা তদন্তাধীন থাকে। যদিও ঘটনার ৬ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেননি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আমতলী থানার এসআই ইমাম।
এ ব্যাপারে এসআই ইমাম মুঠোফোনে বলেন, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট তাদের পৌছেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে সময়ের কোন বাধ্যবাধকতা নেই। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালতে যে হত্যা মামলাটি দায়ের করা হয়েছে তা স্থগিত করেছেন বিজ্ঞ আদালত।
বাদী পক্ষের আইনজীবী এ্যাড. হরিহর বলেন, যে কোন মামলার তদন্ত রিপোর্ট ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে আদালতে জমা দেয়ার বিধান থাকলেও আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে সময় বাড়ানো যেতে পারে। তবে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে গাফিলতির অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে আমতলী থানার অফিসার ইনচার্জ শাহআলম হাওলাদার আদালতে দায়েরকৃত হত্যা মামলার বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। তাছাড়া ওই মামলার আসামীদের বাড়ি অন্য থানা এলাকায় হওয়ায় এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয়া কস্টসাধ্য বলেও জানান তিনি।
অপরদিকে সন্তানহারা মা তৃণা নিহত তমালকে গড়ে তোলার জন্য ঢাকায় গিয়ে ঝি’এর কাজ নেন। তমাল এসএসসি পাস করার পর কলেজে ভর্তি হওয়ায় খরচ আরো বেড়ে গেলে এবং ছেলের সামাজিক দিক বিবেচনা করে ঝি’ এর কাজ ছেড়ে গার্মেন্টস-এ চাকুরি নেন তৃণা। ঘাম ঝড়ানো টাকায় ছেলে তমালকে এইচএসসি পাসও করান।
তমালের হতভাগ্য মা তৃণা বেপারী বলেন, সন্তান গর্ভে নিয়ে বাবার সংসারে আসলেও জন্মের পর বাবার অভাব বুঝতে দেননি সন্তান তমাল। একমাত্র সন্তানকে ঘিরে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতেন তৃণা বেপারী। কিন্তু সেই স্বপ্ন বেশি দূর এগুতে পারেনি। ছেলেকে চাকরি দেয়ার কথা বলে ৫ লাখ টাকা নিয়েও চাকরি দেননি আসামী উজ্জল বেপারী। পরে টাকা ফেরত চাওয়ায় উজ্জল বেপারী ও শুভ বিশ^াস পরিকল্পিতভাবে তমালকে হত্যা করে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
কান্নাজড়িত কন্ঠে সন্তানহারা তৃণা বেপারী প্রশ্ন রাখেন, মটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যদি তার ছেলে মারা যায় তাহলে একই মটরসাইকেলে থাকা অপর দু’জনের শরীরে একটু আচঁড়ও লাগেনি কেন? আর তারা যদি হত্যা না করে থাকে তাহলে তমাল মারা যাওয়ার পর তাকে দেখতে পর্যন্ত আসেনি উজ্জল বা শুভ।
সন্তান হারা তৃণা বেপারী তার একমাত্র অবলম্বন সন্তান তমালের হত্যাকারীদের সুষ্ঠু বিচার দাবী করেন প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদের প্রতি।
এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তমাল হত্যা মামলার আসামী উজ্জল ও শুভ তথ্য গোপন রেখে বর্তমানে সরকারি চাকরি করছে।
তমাল হত্যার নেপথ্য জানতে চোখ রাখুন ….
Leave a Reply