সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪০ অপরাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর বরগুনা সদর উপজেলার এক উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে মারধর করা হয়েছে। মারধরের শিকার ওই প্রকৌশলী নাম মো. মিজানুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (৬ মে) বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে নিজ কার্যালয়ের সামনে স্থানীয় ঠিকাদার মো. ফরহাদ জোমাদ্দার তাকে মারধর করেন। তবে ঘটনার পর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
এদিকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত ঠিকাদারের দাবি, ঘুষ ছাড়া কোন কাজই করেন না প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান। তাই মারধরের পর তার পা ধরে মাফ চেয়েছন তিনি। প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমানের দাবি, ঠিকাদার ফরহাদ জোমাদ্দার তার এলাকার বড় ভাই। কিছু ভুল বোঝাবুঝির কারনে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে নিজ কর্যালয়ের সামনে প্রকৌশলীকে মারধরের ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা যায়, নিজ কার্যালয়ে সামনে মোটরসাইকেলে বসা ছিলেন প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান। এসময় ঠিকাদার তাকে ঘুষখোর বলে গালাগাল দিতে থাকেন। পরে এর প্রতিবাদ করলে ঠিকাদার ফরহাদ জোমাদ্দার তাকে মোটরসাইকেলসহ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন।
এরপর প্রকৌশলী মিজানুর রহমান উঠে দাঁড়ালে ঠিকাদার ফরহাদ জোমাদ্দার তাকে কিল ঘুষি ও লাথি মেরে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করেন। এ সময় ঘটনাস্থলে সদর উপজেলা পরিষদের ও উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বেশ কয়েকজন কর্মীসহ সদর উপজেলার বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। পরে তারা পরিস্থিতি শান্ত করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বরগুনা সদর উপজেলা পরিষদের সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম আহমদ সোহাগ বলেন, উপজেলা পরিষদে আমাদের একটি মিটিং ছিল। মিটিং শেষ করে ভবন থেকে নামার সময় আমরা দেখি মারামারি। পরে আমিসহ সেখানে আরও বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। পরে আমরা পরিস্থিতি শান্ত করি। তবে কি নিয়ে ঘটনা ঘটেছে তা তিনি জানেন না।
ঘটনার অপর প্রত্যক্ষদর্শী সদর উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা কামাল টিটু বলেন, আমি উপজেলা পরিষদের ভবনের দ্বিতীয় তলায় দাঁড়ানো ছিলাম। তখন অফিসের সামনের রাস্তায় ঠিকাদার ফরহাদ জমাদ্দার ও প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের মধ্যে বাকবিতণ্ডা দেখতে পাই। ঠিকাদার ফরহাদ জমাদার প্রকৌশলী মিজানুর রহমানকে বলতেছিলেন- অফিসে চলেন। স্বাক্ষর করবেন আর সাইট পরিদর্শনে যেতে হবে। তখন প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন- আমি ডিসি অফিসে যাচ্ছি জরুরী কাজে। এ কথা নিয়ে তাদের দু’জনের মধ্যে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে মারামারি শুরু হয়। পরে আমরা কয়েকজন নিচে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি।
এ বিষয়ে ঠিকাদার মো. ফরহাদ জোমাদ্দার বলেন, প্রকৌশলী মিজানুর রহমান একজন অসৎ কর্মকর্তা। ঘুষ ছাড়া তার কলম চলে না। ঘুষের জন্য তিনি আমার জামানতের টাকা আটকে রেখেছেন। বরগুনার অনেক ঠিকাদারের টাকা তিনি আটকে রেখেছেন আবার অনেকে ঘুষ দিয়ে জামাতের টাকা পেয়েছেন। আমি ঘুষ দিতে রাজি না হওয়ায় তিনি আমার কাজ করবেন না। এজন্য আমি তাকে মেরেছি। পরে আবার তার পা ধরে মাফ চেয়েছি। ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে বরগুনার আমতলী পাড় এলাকায় প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন বলেও জানান এই ঠিকাদার। এছাড়াও এ ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে এ প্রকৌশলী অঢেল সম্পত্তি গড়েছেন বলেও অভিযোগ এই ঠিকাদারের।
এ বিষয়ে প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, ফরহাদ জমাদ্দার আমার এলাকার বড় ভাই। ভুল বোঝাবুঝির কারণে এ অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনা ঘটে।
তবে এ ঘটনার বিষয়ে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি বরগুনার এলজিইডি এর নির্বাহী প্রকৌশলী এস কে আরিফুল ইসলাম।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। একজন সরকারি কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনা সহ্য করার মতো নয়। এ বিষয়ে আমি এখনই খোঁজ নিচ্ছি।
বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম তরিকুল ইসলাম বলেন, এরকম কোন ঘটনা আমি অবগত নই। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply