শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৯ পূর্বাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি: ঝালকাঠিতে চলছে মা ইলিশ নিধনের মহোৎসব। সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে দিনরাত চলছে মা ইলিশ শিকারের প্রতিযোগিতা। স্থানীয় প্রায় চার শতাধিক জেলে আধারে আবডালে প্রতিদিন নদীতে শিকার করছেন। আর ওইসব ইলিশ বিক্রিও হচ্ছে প্রকাশ্যেই। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায়। এক ফেজবুক ব্যাবহারী তার টাইম লাইনে লিখেছে ‘নলছিটিতে মাছের কেজি ১০০ টাকা’। বাস্তবেও এমন তথ্য মিলেছে উপজেলার ভৈরবপাশা এলাকায় নদীতে রাতের আধারে মাছ ধরে গোপনে পানির দামে বাড়ি বাড়ি পৌছে দিচ্ছে জেলেরা।
স্থানীয় মৎস্য বিভাগের অদূরদর্শিতা ও দায়সারা অভিযানের কারণে অসাধু জেলেরা এ বছর অবাধে চালাচ্ছে মা ইলিশ নিধন। আবার মৎস বিভাগ ও পুলিশের প্রেরচনায় মাছ শিকারের অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। মাছ সহ আটক করে উৎকোচের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ হরমেশাই পাওয়া যায়। রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া গ্রামের বিষখালী নদীতে স্থানীয় প্রভাবশালীদের তত্তাবধায়নে মাছ শিকার বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছে প্রকাশ্যে। থানা থেকে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার পূর্বেই মাছ ভাগ ভাটয়ারা হয়ে যায় বলে নিরীহ গ্রামবাসীর অভিযোগ। এই এলাকায় কেউ অপরাধ করে ফেসে গেলে প্রভাবশালী এক জনপ্রতিনিধির মধ্যস্থতায় সমাযোতা হয়ে যায়। ফলে অনেকেই পার পেয়ে যান তার বধান্যতায়। শনিবার দুপুরে রাজপুর ও নলছিটিতে ৩ জেলেকে মাছ ধরার সময় আটক করে কারাদন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমান আদালত।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রকাশ্য দিবালোকে এবং রাতের অন্ধকারে জেলেরা অবাধে মা ইলিশ ধরছে। জেলার নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদীর সরই, মাটিভাঙ্গা, ফেরিঘাট, নাইয়াপাড়া, খোঁজাখালী, অনুরাগ, দপদপিয়া পুরাতন ফেরিঘাট, ভবানিপুর, হদুয়া, বিষখালী নদীর ভেরনবাড়িয়া ও নলবুনিয়া খেয়াঘাট, রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া, বাদুরতলা এলাকার নদীতে শত শত জেলেকে উৎসবমুখর পরিবেশে মাছ ধরতে দেখা গেছে। তাদের নেই কোন আতঙ্ক। যদিও মাঝেমাঝে সরকারিভাবে দু’একটি ট্রলার মহড়া দিলেও এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যেতে না যাওয়ার পূর্বেই খবর পেয়ে যায় জেলেরা। ঘন্টা খানেক জাল পেতে রাখলেই শত শত ইলিশ ধরা পড়ছে জালে। জেলেরা প্রতিদিন এসব এলকায় শত শত মণ ইলিশ শিকার করে নির্বিঘ্নে বিক্রি করছে।
স্থানীয়রা জানান, সরকারিভাবে কড়াকড়ি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও এক শ্রেণীর লোভী জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ ধরছে। সকাল ১০টায়, দুপুর ৩টায়, রাত ১০টায় ও ভোর ৪টায় প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে অবাধে এ মা ইলিশ নিধন করছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিগত বছরগুলোতে যেভাবে অভিযান পরিচালিত হতো, এ বছর তেমনটা হচ্ছে না।
এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যার দিকেএলাকাবাসী উপজেলার ভৈরবপাশা এলাকায় সুগন্ধা নদী সংলগ্ন একটি খাল খেকে নৌকা ও জালসহ তিন জেলেকে আটক করে মৎস্য কর্মকর্তার হাতে তুলে দেন স্থানীয়রা। পরে তাদেরকে রহস্যজনক কারণে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
নলছিটির ভৈরবপাশা ইউনিয়ন সাবেক চেয়ারম্যান নলছিটি উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা আ. হক চেয়ারম্যানের ভাই দুলাল, রুহুল আমিন মল্লিক, পারভেজ মল্লিকের নেতৃত্বে ভৈরবপাশা এলাকায় অসাধু জেলেরা অবৈধভাবে মৎস স্বীকার করে বলে এলাকাাবসী জানিয়েছে।
জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ও ভৈরবপাশা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিব হোসেন জানান, এলাকাবাসীদের সাথে নিয়ে আমরা মাছ ধরার সময় ২জেলেকে নৌকা ও জালসহ আটক করে নলছিটি থানার এসআই আজিজের হাতের তুলে দেই। নলছিটি ফেরীঘাটে ওসি (তদন্ত) আ. হালিম তালুকদারের উপস্থিতিতে তাদের জাল পুড়িয়ে ফেলা হয়। পরে থানা থেকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা তদ্বীর করে আটক ২ জেলেকে ছেড়ে দেন ওসি। মৎস স্বীকার করার সময় জেলেদের আটক করায় উল্টো এলাকাবাসীদের উপর ক্ষেপে যান নলছিটি থানার ওসি শাখাওয়াত হোসেন।
এ ব্যাপারে নলছিটি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমাদের বরাদ্দ কম এবং একটি মাত্র ট্রলার ও জনবল কম, তা দিয়ে অভিযান চালানো কষ্টসাধ্য।
নলছিটি থানার ওসি শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘শুভ নামে এক ছাত্রলীগের কর্মীর নামে জোর করে মাছ ধরার জন্য চাপ প্রয়োগ করার অভিযোগে এক জেলে নলছিটি থানা অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগটি এসআই আজিজ তদন্ত করে দেখছেন। আটক ২ জেলের কথা তিনি জানেন না’।জেলা মৎস কর্মকর্তা বাবুল কৃষ্ণ ওঝা শনিবার বিকেলে বলেন, ‘বর্তমানে দিয়াকুল, বাদুরতলা, জাঙ্গলিয়া, নলছিটি ফেরীঘাটে অভিযান চলছে। সাত দিনে ৫০টি অভিযানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা হয়েছে ২৪টি, ১১৪৫কেজি ইলিশ ও ১,২৫০০০ মিটার জাল আটক করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ১৩টি, জরিমানা করা হয়েছে ২৫ হাজার টকা, ১২ জন জেলের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত’।
Leave a Reply