বুধবার, ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২৬ অপরাহ্ন
রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি॥ নারায়ণগঞ্জের মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর শিশু জুবায়েরের লাশ গ্রামের বাড়িতে দাফনের প্রস্তুতি চলছিল তখন। সে সময় খবর আসে, তার বাবা সলেমান জুলহাসও (২৮) না-ফেরার দেশে চলে গেছেন। হূদয়বিদারক এই খবরে স্বজনরা আরো শোকাতুর হয়ে ওঠে।
জুলহাস ও তাঁর ছেলে জুবায়ের গত শুক্রবার এশার নামাজ আদায় করতে নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত মসজিদে যান। সেখানে বিস্ফোরণের ঘটনায় বাবা ও ছেলে দগ্ধ হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুজনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হলে ওই দিন মধ্যরাতে সাত বছরের শিশু জুবায়ের মারা যায়। চিকিত্সাধীন বাবা লড়ছিলেন মৃত্যুর সঙ্গে।
এদিকে জুবায়েরের লাশ তার মায়ের কাছে হস্তান্তরের পর গতকাল রবিবার ভোরে গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর বাহেরচর গ্রামে এসে পৌঁছে। লাশ দাফনের প্রস্তুতির সময় খবর আসে, তার বাবা জুলহাসও মারা গেছেন।
গতকাল সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির উঠানে মাটিতে লুটিয়ে বিলাপ করছেন স্বামী-সন্তানহারা রাহিমা বেগম। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে ও নাতির শোকে বাকরুদ্ধ জুলহাসের মা। এ সময় কেঁদে কেঁদে রাহিমা বেগম বলছিলেন, ‘স্বামী-ছেলে সব হারিয়েছি। আর কেউ রইল না।
স্থানীয়রা জানায়, ছোটবেলায় জুলহাসের বাবা বাচ্চু ফরাজী মারা যান। মায়ের সংসারের খরচ জুলহাসকেই চালাতে হতো। অভাবের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন জুলহাস। বিয়ের পর আরো সংকটে পড়েন। তাই ১০ বছর আগে স্ত্রীসহ ঢাকায় পাড়ি জমান তিনি। সেখানে পোশাক শ্রমিকের কাজ করতেন জুলহাস। বাস করতেন নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকায়। সেখানকার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশু শ্রেণিতে এবার জুবায়েরকে ভর্তি করান।
এদিকে জুলহাস ও তাঁর ছেলে জুবায়ের ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ মসজিদে বিস্ফোরণের ওই ঘটনায় রাঙ্গাবালীর আরো দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কাউখালী গ্রামের বেলায়েত রাঢ়ীর ছেলে পোশাক শ্রমিক জামাল রাঢ়ী (৪০) ও সদর ইউনিয়নের হাপুয়াখালী গ্রামের সাজাহান প্যাদার ছেলে পোশাক শ্রমিক নিজাম প্যাদা (৩৫)।
এর মধ্যে শিশু জুবায়ের, জামাল রাঢ়ী ও নিজামের লাশ নিজ বাড়িতে পৌঁছানোর পর জানাজা শেষে দাফন দুপুরের মধ্যে শেষ হয়েছে। জুবায়েরের বাবা জুলহাসের লাশ ঢাকা থেকে নিজ বাড়িতে আনার প্রক্রিয়া চলছিল।
Leave a Reply