মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ পূর্বাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥ ঝালকাঠি স্টেডিয়ামে গরুর হাট মানুষ দেখতে আসলেও ক্রেতা কম বলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারী, ব্যাপারী ও ইজারাদাররা।
ঝালকাঠির বিকনা এলাকায় শহীদ ক্যাপ্টেন বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গির স্টেডিয়ামে রোববার বিকেল থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোরবানির পশু আসতে শুরু করে। বিভিন্ন আকার ও সাইজের গরু এবং ছাগলের হাট শুরু হলেও সবাই আসেন হাট দেখতে, কিন্তু ক্রেতা নেই এ হাটে।
অন্যদিকে রাজাপুর উপজেলায় প্রতি রোববার ও বৃহস্পতিবার বসে বাগড়ি হাট। এরই একটা অংশে সকালে ছাগলের হাট এবং বিকেলে গরুর হাট বসে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সড়ক পথে ট্রাক ও নৌ পথে ট্রলারে করে গরু আনেন বেপারীরা। হাটে পর্যাপ্ত পশু থাকলেও এখনো কেনাবেচা তেমন শুরু হয়নি। ক্রেতা থাকলেও গরু দেখে, দাম-দর করে ঘুরেফিরে চলে যাচ্ছেন। দেশি গরুর পাশাপাশি ভারতীয় গরু বিভিন্নভাবে হাটে এসেছে বলে জানিয়েছেন বেপারীরা।
হাটের ইজারাদার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, হাট বসার বিষয়ে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। তারপরও হাটে ক্রেতা কম। করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানানো হচ্ছে মাইকে। কিন্তু হাটের প্রধান গেটে স্বাস্থ্যবিধি কিছুটা মানলেও হাটের ভিতরে স্বাস্থ্যবিধি কেউই মানছেন না। মাস্ক থাকলেও মুখে নেই থুতনিতে ঝুলছে। করোনার কারণে কোরবানি দেওয়ার ব্যাপারেও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এক রকম সিদ্ধান্তহীতায় ভুগছেন। এ কারণেই হাটে পর্যাপ্ত পশু উঠলেও ক্রেতাদের তেমন একটা দেখা নেই।
হাটে আসা বিক্রেতা জমির আলী বলেন, ‘লোকজন আসেন, গরু দেখেন। কিন্তু ন্যায্য মূল্য কেউ বলছেন না। গরু বিক্রি করতে না পেরে খুব হতাশ হয়ে পড়ছি। এই হাটে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে দুই লাখ টাকারও বেশি দামের গরু উঠেছে।
স্থানীয় গরুর বেপারী দেলোয়ার জানান, ঝালকাঠিতে অনেক খামারী আছেন, যারা কোরবানিতে বিক্রির জন্য গরু লালন-পালন করছেন। কিন্তু বাজারের যে অবস্থা তাতে খামারীরা লোকসানে পড়ার আশঙ্কা রয়েছেন।
বাগড়ির সাপ্তাহিক স্থায়ী পশুর হাটে নিয়মিত গরু বিক্রেতা মোহাম্মদ লিটন হোসেন বলেন, ‘হাটে নিয়মিত গরু, ছাগল বিক্রি করে থাকি। করোনার কারণে গত কয়েক মাস ধরে ক্রেতা খুব কম। আমরা কোরবানির আগে গরু আনার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকি। কিন্তু এবার হাটে কেনাবেচা নিয়ে আমরা খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। ‘করোনার কারণে ক্রেতা যেমন কম, ঠিক তেমনি পশুর দামও অনেক কম।
বাগড়ি হাটের ইজারাদার মো. ফজলুর রহমান সিকদার জানান, হাটে এবার দেশি গরুর প্রাধান্যই বেশি। অল্প কিছু ভারতীয় গরু বিভিন্নভাবে এসেছে। কিন্তু বেচাকেনা খুবই খারাপ। মৌসুমের শেষ পর্যায়ে এসেও গরুর হাট জমে উঠেনি। এই অবস্থায় যারা দেশীয় পদ্ধতিতে খামারে গরু মোটাতাজা করেছেন, তারা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। ঈদের মধ্যে গরুগুলো বিক্রি করতে না পারলে অনেকেই ক্ষতির মুখে পড়বেন। তবে শেষ মুহূর্তে কোরবানির পশু কেনাবেচা জমে উঠবে বলেও প্রত্যাশা করেন এই ইজারাদার।
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) আহমেদ হাসান জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী লোকালয়ে, আবাসিক এলাকায় এবং মহাসড়কের পাশে মৌসুমী কোরবানি পশুর হাট বসানোর অনুমোদন দেওয়া হয়নি। যাচাই-বাছাই করে নির্জন ও খোলা মাঠে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ইজারাদারকে। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম ঝালকাঠি শহরের বিকনা পশুর হাট পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি হাটে আগত সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনা কাটার আহ্বান জানান। এছাড়াও নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেন।
Leave a Reply