রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩১ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল : সাম্প্রতি বরিশালে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে শোরগোল ফেলে দেয়া সেই যুবক মো. শাওনকে নিয়ে প্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। প্রকাশ্যে ক্যামেরার মুখোমুখি নিজেকে আওয়ামী লীগের লোক পরিচয় দিয়ে গোটা পুলিশ বাহিনীকে নিয়ে ‘খিস্তিখেউর’ করার বিষয়টি ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার খোরাক জুগিয়েছে। বিশেষ করে এই বিষয়টি একদিন পরে পত্র-পত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশ হলে বরিশাল পুলিশের ইমেজ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। ফলে পুলিশ এই বিষয়টিতে মোটেও ছাড় না দিয়ে অভিযুক্তকে হন্য হয়ে খুঁজছে বলে ভেতরকার একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। এমনকি এই ঘটনায় একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। যদিও পুলিশের দায়িত্বশীল মহল এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক মিডিয়াকে কোন কিছু অবহিত করেনি।
তবে অপর একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে- আটক মোটরসাইকেল ছাড়িয়ে নিতে জনসম্মুখে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করে নিজেকে মস্তবড় আওয়ামী লীগার দাবি করা যুবকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। শাওন নামে ওই যুবকের বাসা নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ আলেকান্দা এলাকার ‘নিউ হাউজ রোডে’। তিনি ওই এলাকার মৃত নজরুল ইসলামের পুত্র। রাজনৈতিক ভাবে তার কোন পদ পদবী না থাকলেও নিজেকে আওয়মী লীগ পরিচয় দিয়ে গোটা শহর দাপিয়ে বেড়ান তিনি।
ওই এলাকার একাধিক বাসিন্দা নিশ্চিত করেছে- যুবক শাওন বখাটে হিসেবে এলাকায় সমাধিক পরিচিত। এমনকি তিনি মাদকের সাথেও জড়িত। অনেকে তাকে মাদক বিক্রেতা হিসেবেও জানেন।
সূত্রমতে, এই যুবক শাওন পুলিশ সদস্যের ওপর চড়াও হওয়ার একটি ভিডিও চিত্র গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেজবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ১ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের সেই ভিডিওটি মুহূর্তের হাজার হাজার লাইক শেয়ারে পুরোপুরি ভাইরাল হয়ে যায়। সেই ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, দ্রুত গতিতে ছুটে আসা একটি মোটরসাইকেলকে থামিয়ে কোন পুলিশ সদস্য কাগজপত্র যাচাই-বাচাই করছেন। পাশাপাশি হেলমেট ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল বহনের হেতু কি জানতেও চেয়েছেন। অবশ্য মোটরসাইকেল চালোকও তার ভুল অনুমান করতে পেরে পুলিশ সদস্যকে সোজাসাপটা উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই সাথে আনফিড একটি মোটরসাইকেল চালানোর জন্য ক্যামেরার বিপরিতে থাকা পুলিশ সদস্যের কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করেন। কিন্তু বিধিবাম। খবর পেয়ে কোথাও থেকে সেখানে ছুটে আসেন তথাকথিত সেই আওয়ামী লীগের লোক শাওন। পুলিশ সদস্য তার সাথে প্রথমে কথা বলতে নারাজ দাবি করলেও তিনি মোটরসাইকেল চালককে সেখান থেকে ছিনিয়ে নিতে উদগ্রীব হয়ে ওঠেন।
একপর্যায়ে উত্তপ্ত পরিবেশে পুলিশ সদস্য কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই একের পর এক গালিগালাজ করেন। সর্বশেষ নিজেকে আওয়ামী লীগের লোক পরিচয় দিয়ে শাওন দম্ভোক্তি করে বলেন, আমি পুলিশ করিনা…! জনসম্মুখে পুলিশ সদস্যকে বেইজ্জতি করার সেই চিত্রপট স্থানীয়দের হতবাক-বাকরুদ্ধ করেছে। সম্ভবত বরিশালের ইতিহাসে কোন পুলিশ সদস্য পাবলিকলি ইজ্জত হারানোর এটাই প্রথম উদাহরণ। যে কারণে এই যুবককে পুলিশও অতি গুরুত্ব দিয়ে খুঁজছে কিভাবে লাগাম টেনে ধরা যায়। তবে এই ঘটনাটি প্রকাশ পাওয়ার পরপরই যুবক শাওন লাপাত্তা হয়ে গেছেন। শনিবার সারাদিনে এলাকায় তাকে কেউ দেখতে পায়নি।
এমন বাস্তবতায় বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেল থানার সেকেন্ড অফিসার মোস্তাফিজুর রহমানের ভাষ্য হচ্ছে, ভিডিও চিত্রে নিশ্চিত হয়ে ওই যুবকের পরিচয় পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম তৎপর রয়েছে।
Leave a Reply