বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৭ অপরাহ্ন
তন্ময় তপু॥ বরিশালে মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের কড়াকড়িতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চলাচল করলেও ব্যতিক্রম দৃশ্য দেখা যায় থ্রি হুইলার মাহিন্দ্রা ( আলফা )গুলোতে। ছোট একটি থ্রি হুইলারে আট-নয়জন যাত্রী পরিবহন করা হলেও এ বিষয়ে নজরদারি নেই প্রশাসনের ।
অভিযোগ রয়েছে-থ্রি হুইলার মাহিন্দ্রা মেট্রোপলিটন পুলিশ রিকুজিশনে নিয়ে কাজে লাগানোর কারণে এসব যানের দিকে সুনজর রয়েছে পুলিশের। যে কারণে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মহাসড়কে ধূরপাল্লার রুটে এবং আন্তজেলা সড়কগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এ থ্রি হুইলার মাহিন্দ্রা।
যদিও এসব যান মহাসড়কে যাতে না চলাচল করতে পারে সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ।
বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান জানান, অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে মহাসড়ক থেকে শুরু করে আন্তঃসড়কগুলোতেও চলাচলের সুযোগ নেই।
লকডাউনের পূর্বে চলেছে সেটা ভিন্ন বিষয়, কারণ তখন পরিবহন চালু হয়নি তাই জরুরিভিত্তিতে কিছু কিছু থ্রি হুইলার চলেছে।
কিন্তু এখন পরিবহন চলছে তাই থ্রি হুইলার মাহিন্দ্রা মহাসড়কে তো চলতেই পারবে না। আর যেগুলো চলাচলের চেষ্টা করবে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বরিশাল মেট্রোপলিটন ও জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে ১৪টি রুটে চলাচল করে থাকে ১৮০টি বাস। কিন্তু ১ জুন থেকে নতুন ভাড়া নির্ধারণের পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস চলাচলের নিয়ম চালু হয়।
বাস মালিকরা নিয়ম মেনে বাস চালনোর চেষ্টা করলেও যাত্রী সংখ্যা না থাকার কারণে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। এক ট্রিপ দেয়ার পর মালিকদের হাতে তেল খরচের টাকাও থাকছে না।
এর কারণ হিসেবে বাস মালিকরা জানান, টার্মিনালের যেখান থেকে বাস ছাড়া হয় ঠিক তার বিপরীতে থ্রি হুইলার মাহিন্দ্রা ছাড়া হয় বিভিন্ন রুটের উদ্দেশে। আমরা একটি বাসে ১৬ থেকে ১৮ জন যাত্রী পরিবহন করতে পারি।
কিন্তু একটি মাহিন্দ্রাতেই যাত্রী পরিবহন করা হয় আট থেকে নয়জন। গাদাগাদি করে এমন ভাবে যাত্রী পরিবহন করায় স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন হলেও প্রশাসন এদের কিছু বলছে না।
সব নিয়ম বাসের ব্যাপারে কিন্তু এসব থ্রি হুইলার যান চলাচলের পেছনে কিছু শ্রমিক নেতার হাত থাকায় পুলিশ-প্রশাসনও কিছু করতে পারছে না।
এছাড়া এ থ্রি হুইলার মাহিন্দ্রা বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন থানায় রিকুজিশনে নেয়ার কারণে পুলিশও এ যানের বিরুদ্ধে নরম অবস্থানেই থাকে বলে বেশ কয়েকজন বাস মালিকের দাবি।
এক বাসচালক জানান, বাসে যাত্রী উঠানো যাবে ১৬ জন। ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে এ সুযোগে মাহিন্দ্রা চালকরা বাস ভাড়া থেকে কমপক্ষে ২০ থেকে ৪০ টাকা কমিয়ে বিভিন্ন রুটে যাত্রী পরিবহন করছে। এতে যাত্রীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে কম ভাড়ায় চলাচল করছে।
ফলে যাত্রী না পাওয়ার অভিযোগ বাসচালকদেওর। এ কারণে নিয়ম অনুযায়ী ফাঁকা বাস চলাচল করতে হচ্ছে রুটে । এমনকি তারা ৫শ’ টাকা করে মাওয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত যাচ্ছে ৮ থেকে ৯০ যাত্রী নিয়ে।
স্বাস্থ্যবিধির তো বালাই নেই বরং ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কে দাপিয়ে চলছে এ মাহিন্দ্রা।
একাধিক মাহিন্দ্রা চালক স্বীকার করেছেন এসব কথা। রিয়াজ নামে ওই মাহিন্দ্র্ চালকের নথুল্লাবাদ বসে কথা হলে সে জানায়, ৫৫০ টাকা করে মাওয়া যাওয়া যাবে। তবে আরও ৭ যাত্রীর জন্য আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে বলে তিনি জানান।
বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. ইউনুস বলেন, পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসককে একাধিকবার বিষয়টি আমি বলেছি। ১ জুন গাড়ি চলাচল শুরু পূর্বেও ডিসি স্যারকে মাহিন্দ্রা চলাচলের বিষয়ে বলেছি। পরেও বারবার পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তাদের বলেছি।
তারা সব সময়ই বলেছে দেখছি এবং দেখব। আসলে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আমরা দেখিনি। টানা ৬৭ দিন বাস চলাচল বন্ধ থাকার কারণে বাস মালিকদের এমনিতেই বেহাল দশা।
এর মধ্যে বাস চলাচল শুরু হয়েছে কিন্তু যাত্রী না থাকায় আরও খারাপ অবস্থা। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়ি চলাচল করাচ্ছি। কিন্তু থ্রি হুইলার মাহিন্দ্রাগুলো গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করছে কম ভাড়ায়। এ কারণে বাস মালিকদের অবস্থা খুবই খারাপ।
যেখানে থ্রি হুইলার গাড়িগুলো শহরের অলিগলিতে চলার কথা সেগুলো মহাসড়কে চলাচল করছে। এসব বিষয়ে একাধিকবার বলেছি আমরা মালিক সমিতির পক্ষ থেকে।
কিন্তু কোনো কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। অদৃশ্য এক ক্ষমতার কারণে কয়েক হাজার মাহিন্দ্রা মহাসড়কে চলাচলে আমাদের ব্যবসাও ক্ষতির সম্মুখীন।
এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার জাকির আলম মজুমদার বলেন, আমরা বিষয়টি তদারকি করছি। প্রতিনিয়ত নির্দেশনা দিচ্ছি যাতে কেউ অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করে।
Leave a Reply