শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৯ পূর্বাহ্ন
ভোলা প্রতিনিধি:
স্কুলঘর আছে।নেই দরোজা-জানালা।বিভিন্ন স্থান দিয়ে ভেঙে পড়েছে ঘরের বেড়া।মাথার ওপর একাধিক ছিদ্রযুক্ত টিনের চালা।তাও রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ।এমনকি অতি জোয়ারের পানিতে ডুবে যায় বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ।হালকা বাতাস হলেই ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে যেকোনো সময়।এমনই নানা সমস্যা নিয়ে ক্লাস করছে ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।যেখানে সরকার তৃণমূল পর্যায়ে শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে,সেখানে এই বিদ্যালয়টির এমন জরাজীর্ণ অবস্থার ফলে অভিভাবক ও শিক্ষকরা রয়েছেন আতঙ্কের মধ্যে।শিশুদের নিরাপদে ভেড়ে ওঠার জন্য স্কুলটি সংস্কার করা জরুরি বলে জানিয়েছেন শিশুদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো।আর জেলা প্রথমিক শিক্ষা অফিসার বলছে,স্কুলের ভবন নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে পিডিবি-৪ তালিকা পাঠানো হয়েছে।অচিরেই বিল্ডিং নির্মাণ করা হবে।ভোলা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত এলাকায় নির্মিত শ্যামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।বছরের পর বছর পার হয়ে গেলেও জরাজীর্ণ ও ভাঙাচোরা টিনশেড ঘরে চলে বিদ্যালয়ের পাঠদান।প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ২৩২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।এদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত গড়ে তুলতে মাত্র চারটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে।এর মধ্যে একটি অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হয়।বাকি তিনটি শ্রেণিকক্ষ কোনোরকম জোড়াতালি দিয়ে সব শ্রেণির পাঠ কার্যক্রম চালানো হয়।শ্রেণিকক্ষগুলোর টিনের চালে ফুটো,বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে,দরোজা-জানালা ভাঙাচোরা।বৃষ্টি হলে শিক্ষার্থীদের বইখাতা ভিজে যায়।ফলে ছুটির ঘন্টাবাজে প্রায়সময়ই।নেই পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা।কখনও জোয়ারের পানি এসে শ্রেণিকক্ষ ডুবে যায়।এমন পরিস্থিতিতে কোমলমতি শিশুরা একরকম জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাসে বসতে বাধ্য হচ্ছে।স্কুলের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান, আকাশ, ফারুক, মুক্তা, ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী জুয়েল, শরীফুল ইসলাম, রাবেয়া, তামান্নাসহ আরো অনেক শিক্ষার্থী জানায়,তাদের স্কুলে দালান না থাকায় বৃষ্টি এলে তারা ঠিকমতো ক্লাস করতে পারে না।বইখাতা ভিজে যায়।অনেক সময় জোয়ারের পানি এসে শ্রেণিকক্ষে পানি উঠে।শ্রেণিকক্ষের নেই কোনো পরিবেশ,সবসময় স্যাঁতস্যাতে থাকে।ফলে পার্শ্ববর্তী মাদ্রাসায় তাদের ক্লাস করতে হয়।এমনকি মাঠে পানি জমে থাকায় স্কুলমাঠে নিয়মিত পিটি ও খেলাধুলা করা হয় না।স্কুলের সহকারী শিক্ষক মো:কবির হোসেন বলেন,২০১৩ সালে স্কুলটি জাতীয়করণ হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত স্কুলটিতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ আমাদের স্কুলমাঠে এক জনসভায় এসেছিলেন।তখন তিনি বলেছিলেন,আমাদের একটা ভবন করে দিবেন।কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের ভবন হয়নি।তাই মাননীয় মন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি,আমাদের সমস্যার কথা চিন্তা করে ভবনটি নির্মাণ করে দেবেন।স্কুলের আরেকজন সহকারী শিক্ষক নাছিমা আক্তার জানান,স্কুলভবন না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর ডিআরএম স্পেশালিস্ট মো:আব্দুর রহিম কাজল জানান,প্লান ইন্টারন্যাশনালের সহায়তায় একীভূত দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় আপদ,বিপদাপন্নতা ও সক্ষমতা যাচাইকরণ প্রকল্পের সার্ভের মাধ্যমে আমরা এই স্কুলটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।এই স্কুল শিশুদের জন্য নিরাপদ নয়।তাই শিশুদের নিরাপত্তার স্বার্থে ভবনসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণ করা জরুরি।এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিখিল চন্দ্র হাওলাদার বলেন,বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়েছে।সেক্ষেত্রে বিদ্যালয়টিতে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।আশা করি খুব শীঘ্রই নতুন ভবনের কাজ শুরু হবে।উল্লেখ্য,২০০৫ সালে ৩৩ শতাংশ জমির উপর স্কুলটি নির্মাণ করা হয়।২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়।বর্তমানে ২ শিফটে বিদ্যালয়ে চারজন শিক্ষক দিয়ে পরিচালিত হয়।
Leave a Reply