শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫০ পূর্বাহ্ন
একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর থেকে মানসিকভাবে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার (বিসিক) মহাব্যবস্থাপক শরিফুল ইসলাম (৫৮), যিনি গত এক সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ রয়েছেন।
এর আগে গত মে মাসেও একবার নিখোঁজ হয়েছিলেন তিনি। তখন বরিশাল লঞ্চঘাট থেকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করেছিল। শরিফুলের এবারের নিখোঁজের ঘটনায় তার স্ত্রী লাইলা ইয়াসমিন পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শরিফুল ইসলাম স্ত্রী লায়লা ইয়াসমিনকে নিয়ে রাজধানীর শান্তিনগরের ৬৭/৩ প্যারাডাইস মোগল হাউজের ১/বি’তে বসবাস করেন। একমাত্র মেয়ের বিয়ের পর তারা স্বামী-স্ত্রী ছাড়া কেউ তাদের সঙ্গে ছিলেন না। স্বামীর নিখোঁজের পর স্ত্রী একাই সেখানে বসবাস করছেন। বাবার নিখোঁজের খবরে মেয়েও আমেরিকা থেকে দেশে ফিরছেন।
এদিকে জানা গেছে, এর আগেও শরিফুল এভাবে নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন। তবে এবার সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও তার কোনও হদিস না মেলায় চিন্তিত তার স্ত্রী। তিনিও বিসিকের ডেপুটি ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। তিনি ও তার স্বামী একই অফিসে চাকরি করেন। তাদের একমাত্র মেয়ে রেদওয়ানা বিনতে শরীফ হৃদির গত জানুয়ারিতে বিয়ে হয়েছে। এরপর সে স্কলারশিপ পেয়ে আমেরিকায় চলে যায়। তখন থেকে শরিফুল মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
শরিফুল ইসলামের স্ত্রী লায়লা ইয়াসমিন জানান, ‘গত বুধবার নিখোঁজের পর থেকে এখনও তার কোন খবর মেলেনি। এতে মানসিকভাবে ভীষণ ভেঙে পড়েছি আমরা। আত্মীয়-স্বজন, তার বন্ধুমহল, হাসপাতাল সব জায়গায় খোঁজ নিয়েছি কোথাও খোঁজ মেলেনি এখনও। তার শরীরে প্রেসারের পাশাপাশি ডায়াবেটিকস ও কোলস্টেরল বেশি ছিল।’ ‘জানুয়ারিতে একমাত্র মেয়ের বিয়ের পর সে হাসপাতালে ভর্তি ছিল। তখন থেকে অফিসে যেতেন না। মাঝে আট দশ দিন অফিসে জয়েন করার পর আবারও ছুটিতে ছিলেন। সর্বশেষ গত সপ্তাহে অফিস করা শুরু করেন। নিখোঁজের আগের রাতে বলছিলেন অফিসের কাজ করা তার জন্য কষ্ট হচ্ছে, বলেছিলাম চাকরিটা ছেড়ে দাও; কারণ ছুটিও পাওয়া যায়। এসব কথাতে আগের রাতে ঘুমে তার একটু সমস্যা হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘তার জন্য তো কাপড়চোপড় পরিবর্তন না করে এভাবে চলে যাবে চিন্তা করিনি। সকালে তার সাথে কথা হয়েছিল ডাক্তার দেখানো শেষে অফিসে আসবে। সেখান থেকে দুইজন এক সাথে বাড়িতে ফিরব। বারবার তার ফোনে ফোন করছি ফোন ধরছিল না; ভাবছিলাম ভুলে হয়ত ফোন রেখে গেছে। পরে বেলা আড়াইটার দিকে বাসায় গিয়ে দেখি সে বাসায় নেই। দারোয়ান বললো স্যার তো লুঙ্গি পড়ে বের হয়েছেন। এরপর থেকে তার কোনও সন্ধ্যান আমরা করতে পারছি না।’
কান্না জড়িত কণ্ঠে তার স্ত্রী বলেন, ‘আজ সাতটা দিন হয়ে গেল কোনও খবর পেলাম না। আপনারা নিউজ করেন যাতে আমি স্বামীকে খুঁজে পাই। বাবার নিখোঁজ খবর পেয়ে মেয়ে আমেরিকা থেকে গতকাল রওনা দিয়েছে। আল্লাহ আমার স্বামীকে বাঁচিয়ে রাখলে কোনও ভাবে যদি তার কানে যায় মেয়ে আসছে তাহলে আবার বাসায় ফিরে আসবে।’
অফিস (বিসিক) থেকে সোমবার র্যাবকে জানানো হয়েছে। আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করা হবে বলে জেনেছি। ’
থানার অভিযোগ পত্রে তার স্ত্রী লিখেছেন, নিখোঁজের দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি কাউকে ফোন না করে বাসা থেকে বের হন। আমি অফিসে ছিলাম। বের হবার সময় আমাকে কল করার কথা থাকলেও তিনি তা করেননি। স্বাভাবিক লুঙ্গি ও হাফ হাতা শার্ট ও সেন্ডেল পড়ে বের হন বলে জেনেছি। তার মানিব্যাগ, মোবাইল, চশমাও সাথে নেননি। তিনি কিছুটা মানসিক অশান্তিতে ভুগছিলেন। এর আগেও ২২ মে সন্ধ্যায় বাসা থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন। তবে ২৩ মে ভোরে তাকে বরিশাল লঞঘাট থেকে থানা পুলিশ উদ্ধার করেছিল।
পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হক বলেন, ‘তার স্ত্রীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা তাকে খুঁজে বের করতে সর্বচ্চো চেষ্টা করছি। তার কাছে মোবাইলও নেই। আমরা বিভিন্ন থানা এলাকায় তার ছবি দিয়েছি, তথ্য দিয়েছি। তিনি ডিপ্রেসনে ভুগছিলেন। এর আগেও তিনি কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে চলে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তাকে উদ্ধার করা হয়।’
Leave a Reply