শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪০ পূর্বাহ্ন
কলাপাড়া প্রতিনিধি॥
প্রস্তাবিত জেলা কলপাড়া মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী মোঃ নেছার উদ্দিন একই উপজেলায় প্রায় ২০ বছর যাবত কর্মরত থাকায় তার স্বেচ্ছাচারিতা, খামখেয়ালিপনা এবং ঘুস গ্রহনে মাত্রারিক্ত স্পৃহা শিক্ষক কর্মচারীদেরকে ক্লান্ত করে তুলছে। মোঃ নেছার উদ্দিন ঘুস ছাড়া কোন ফাইল ধরেন না। এই ২০ বছরে ৮/৯ জন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বদলী হলেও অদৃশ্য কোন শক্তির জোড়ে তিনি এখনও রয়ে গেছেন। তিনি প্রকাশ্যে বলেন থাকেন তার হাত অনেক লম্ভা, তাকে বদলী করার মতো ক্ষমতাবান কেউ নেই। ডিজি অফিসে (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে) তার লোক আছে, তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ জমা হলে ডিজি মহোদয়ের টেবিলে যাওয়ার আগেই তা গায়েব হয়ে যায়। সূত্র জানান, শিক্ষকদের ট্রেনিংএ নাম দেয়া, উপবৃত্তির টাকা বন্টন, সরকারী বই বিতরন, টিউশন ফি, অনলাইনে এমপিও আবেদন অগ্রায়ন, পোষ্ট ডিউ করন, সিনিয়র স্কেল প্রাপ্তির আবেদন এমনকি পদত্যাগকৃত শিক্ষকদের নাম কর্তনেও তাকে ঘুস টাকা দিতে হয়। তার ঘুস ও দুর্নীতির বিষয়ে এবং তাকে বদলীর জন্য বার বার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে আবেদন করেও বদলী তো দুরের কথা একটি তদন্ত পর্যন্ত হয়নি, উল্টো আবেদন কারীদের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।
তার ঘুস ও দুর্নীতির বিষয়ে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় ২০০৯ সন থেকে বহুবার প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও উর্ধŸতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসেনি। ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে দুর্নীতি দমন কমিশনের গণশুনানি কালে মোঃ নেছার উদ্দিনের বিরুদ্ধে সরাসরি দুর্নীতির অভিাযোগ দাখিল করা হয়। গত ২৪/১২/২০১৭ খ্রিঃ তারিখে মোঃ নেছার উদ্দিনের প্রকাশ্য ঘুস গ্রহনের ভিডিও চিত্র এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুকে) ভাইরাল হয়ে গেছে। মোঃ নেছার উদ্দিনের আচরণ এত নীচে নেমে গেছে যে, তিনি এখন শিক্ষকদেরকে দিন মজুর/ শ্রমিকের মত মনে করেন। উপজেলার প্রভাবশালী কয়েকজন প্রতিষ্ঠান প্রধানদের ম্যানেজ করে বাকী সবাইকে তিনি জিম্মি করে রেখেছেন। তিনি এখন কলাপাড়ার শিক্ষা সেক্টরের আতংক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস কারও নাই। গত ১২/০৭/২০১৮ খ্রিঃ তারিখ তার প্রকাশ্য ও বেপরোয়া ঘুস ও দুর্নীতি কলাপাড়া উপজেলা পরিষদের সাধারন সভায় রেজুলিউশন ভূক্ত হয়েছে এবং তাকে অন্যত্র বদলীর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে/উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে সুপারিশসহ পত্রালাপ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যা বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা নিবার্হী অফিসার কলাপাড়া, পটুয়াখালী ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে অনুরোধ জানানো হয়। জাতি গড়ার মহান কারিগর ভূক্তভোগী শিক্ষকগণ এখন তাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। উল্লেখ্য যে, মোঃ নেছার উদ্দিনের বিরুদ্ধে ২০০৯ সনে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে অভিযোগ দায়ের করা হলে খেপুপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তৎকালীন জেলা শিক্ষা অফিসার মহোদয়ের উপস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ স্বীকার করে সকলের নিকট তিনি ক্ষমা চেয়েছিলেন এবং আগামী এক মাসের মধ্যে আবেদন করে অন্যত্র বদলি হওয়ার শর্তে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়েছিল। তিনি তা মেনে নিয়ে ছিলেন। কিন্তু পরে তিনি বদলীর জন্য কোন আবেদন করেন নাই।
এরপরে তিনি আরও বেপরোয়া হওয়ায় ২০১৭ সনের ফেব্রুয়ারি মাসে অত্র উপজেলার ৩৩ জন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান অতিষ্ঠ হয়ে মোঃ নেছার উদ্দিনের বিরুদ্ধে লাগামহীন দুর্নীতির অভিযোগ এনে প্রতিকার চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে আবেদন করেন। তৎকালীন কলাপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী রুহুল আমিন পরের দিন সকালে আবেদনকারী সকল প্রতিষ্ঠান প্রধানদের ডেকে সভা করেন। উক্ত সভায় মোঃ নেছার উদ্দিনের থাকার অনুমতি না থাকায় তিনি অপমানিত হয়ে বেড়িয়ে যায় এবং শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী রুহুল আমিন সু-কৌশলে মোঃ নেছার উদ্দিনের পক্ষে সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন এবং তিনি আগামী এক মাসের মধ্যে মোঃ নেছার উদ্দিনকে অন্যত্র বদলীর ব্যবস্থা করবেন বলে উপস্থিত সকলকে অভিযোগ প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানান।
উপস্থিত শিক্ষকগণ শিক্ষা কর্মকর্তার অনুরোধে মোঃ নেছার উদ্দিনকে অন্যত্র বদলীর জন্য এক মাস সময় দিয়ে ছিলেন কিন্তু পরিস্থিতি অনুকুলে আসায় এবারও মোঃ নেছার উদ্দিন অন্যত্র বদলীর জন্য কোন আবেদনই করেন নাই বরং উল্টো তিনি ঘুস ও দুর্নীতির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। যার প্রমান ২৪/১২/২০১৭ তারিখে তার প্রকাশ্য ঘুস গ্রহন ভিডিও চিত্র যা ফেসবুকে ভাইরাল। বর্তমানে কলাপাড়া উপজেলা পরিষদে তাকে বদলীর সিদ্ধান্ত হওয়ায় তিনি আবারও একই কৌশল অবলম্বনের চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে সূত্র জানান।
Leave a Reply