মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৩ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধি॥ ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে টিসি (বাধ্যতামূলক ছাড়পত্র) দিয়ে বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করেছেন প্রধান শিক্ষক। শিক্ষক টিসিতে এমন ‘দুটি শব্দ’ জুড়ে দিয়েছেন; যার কারণে কোনো স্কুলেই ভর্তি হতে পারেনি ওই ছাত্রী।
ওই কিশোরী চারবার আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। প্রায় বছরখানেক স্কুলে স্কুলে ঘুরেও ভর্তি হতে না পেরে অবশেষে গার্মেন্টসে কাজ নিয়েছে মেয়েটি। এ বিষয়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, এক বছর আগে বরিশালে মুলাদীতে উপজেলার চরকালেখান আইডিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম জাহাঙ্গীর আলম তার বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীকে চারিত্রিক অবক্ষয়ের সনদ দিয়ে বিদ্যালয় থেকে বের করে দিয়েছিলেন।
ওই ছাত্রীর বাবা চরকালেখান গ্রামের আলতাফ সরদার জানান, তার মেয়ে ২০১৭ সালের পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় পাস করে ২০১৮ সালে চরকালেখান আইডিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম জাহাঙ্গীর আলম ওই মেয়ের চারিত্রিক অবক্ষয় হয়েছে বলে একটি ভুয়া অভিযোগ এনে বিদ্যালয় থেকে বাধ্যতামূলক বদলির সনদ দেন। কিন্তু ছাড়পত্রে বিদ্যালয় পরিত্যাগের কারণ হিসেবে ‘চারিত্রিক অবক্ষয়’ কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
প্রধান শিক্ষক এসএম জাহাঙ্গীর আলম বিষয়টি স্বীকার করে জানান, ওই ছাত্রী শ্রেণিকক্ষে এক সহপাঠীকে জড়িয়ে ধরে চুমু দেওয়ায় বিদ্যালয় থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যালয় পরিত্যাগের কারণ হিসেবে ‘চারিত্রিক অবক্ষয়’ উল্লেখ করায় অন্য কোথাও ভর্তি হতে না পারায় ক্ষোভে-দুঃখে তিন থেকে চারবার আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় ওই ছাত্রী। ছাত্রীকে আত্মহত্যার পথ থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষকের কাছে অনুরোধ জানালে তিনি কোনো কর্ণপাত করেননি। পরে ছাত্রীর পিতা ও স্থানীয় আমিনুল ইসলাম সবুজ মৃধা গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেন।
দুদক অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য বরিশাল জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব দেন। জেলা প্রশাসক তদন্তের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দায়িত্ব দিলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিটন ঢালী তদন্ত কাজ শুরু করেন।
এদিকে ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা লিটন ঢালীর বিরুদ্ধে তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এছাড়া বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান তালুকদার জানান, কোনো ছাত্রীকে চারিত্রিক অবক্ষয়ের জন্য বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের করা হয়েছে এমন কিছুই তার জানা নেই।
বর্তমানে ওই ছাত্রী লেখাপড়া বন্ধ করে গার্মেন্টেসে চাকরি নিয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, ষষ্ঠ শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে চরিত্রিক অবক্ষয়ের মতো অভিযোগ এনে বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করায় অভিভাবকদের মাঝে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তবে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
Leave a Reply