মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:২৩ অপরাহ্ন
বাকেরগঞ্জ প্রতিনিধি॥ বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠী বাজারে বুধবার রাতে স্বর্ণের দোকানে সিরিয়াল ডাকাতির ঘটনায় এখনো পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ডাকাতরা কলসকাঠী বাজারের ৭টি স্বর্ণের দোকান থেকে ৮০-৯০ ভরি স্বর্ণ, ১শত ৫০ ভরির উপরে রূপা এবং নগদ কয়েক লাখ টাকাসহ অর্ধকোটি টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
ওই ঘটনায় বাকেরগঞ্জ থানায় দুটি মামলা দায়ের হলেও ডাকাতির ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ডাকাতির ঘটনার পর থেকে তদন্তে অগ্রগতি না হওয়া নিয়েও ব্যবসায়ীদের মনে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের এ ক্ষোভ যেকোনো মুহূর্তে বিক্ষোভে রূপ নিতে পারে।
ঘটনার শিকার স্বর্ণালংকার দোকানের মালিকরা অভিযোগ করে বলেন, এত বড় বাজারে সিরিয়াল ডাকাতির পরও এখনো পর্যন্ত ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে আটক করতে না পারা রহস্যজনক। ডাকাতির পর বাবুল নামের এক দুর্ধর্ষ ডাকাত তিনদিন ধরে থানায় অবস্থান করলেও পুুলিশ তাকে আটক করেনি বলে জানায়।
তাছাড়া ডাকাতির রাতে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ওই রাতে ডাকাতদের প্রতিহত করতে গিয়ে থানার এএসআই জসিম আহত হয়েছেন, তিনি বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মা ইলেকট্রনিক্সের কর্মচারী সৌরভ সমাদ্দার (১৬) জানান, তিনি ওই রাতে মন্দিরে পূজোর লাইটিংয়ের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ করে ৪-৫ জন ডাকাত এসে পিছন থেকে তার হাত বেঁধে সেবা ফার্মেসিতে নিয়ে যায়।
ডাকাতি শেষে তিনিসহ কয়েকজন গুরুতর আহত এএসআই জসিমকে রক্তাক্ত অবস্থায় কলসকাঠী ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে গেলে পুলিশের নায়েক উত্তম পালকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। সৌরভ জানান, আহত এএসআই জসিমের কাছে ওই সময় কোন অস্ত্র ছিলনা। এলাকাবাসীর প্রশ্ন, তাহলে এত বড় একটি বাজারে পুলিশ কি অস্ত্র ছাড়াই ডিউটিতে এসেছিলো ? নাকি ডাকাতরা দারগার অস্ত্র নিয়ে গেছে। আবার ডিউটি করতে এসে নায়েক উত্তম পাল ডিউটি না করে তিনি কিভাবে ইউনিয়ন পরিষদে ঘুমিয়ে ছিলেন।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট এসব বিষয় খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষতিগ্রস্থ একাধিক স্বর্ণ ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, ওই রাতে ডাকাতরা স্পিডবোট নিয়ে এসে ডাকাতি করে নিরাপদে চলে যায়। কোন দিক থেকে স্পিডবোটে ডাকাতরা আসলো, তারা এত অস্ত্র পেলো কোথায়? পুলিশ সেসব বিষয়ে খতিয়ে না দেখে উল্টো বারবার (সোনার দোকানদার) তাদেরকে প্রশ্ন করে হয়রানি করছেন।
আবার অনেক ব্যবসায়ীদের মনে করেন, কলসকাঠী বাজারের এ সিরিয়াল ডাকাতির সাথে প্রশাসনেরও কেউ জড়িত থাকতে পারে। তা না হলে স্বর্ণের দোকানে এত বড় সিরিয়াল ডাকাতি কি করে সম্ভব! তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে দুর্ধর্ষ ডাকাত বাবুল ও ইব্রাহীমকে আটক করে দফারফা করে ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় পুলিশের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল কালামের মোবাইল ফোনে কল করলে ওসি (তদন্ত) মোঃ জহিরুল ইসলাম বলেন, ডাকাতির ঘটনায় তারা এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। কোন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু বলা যাবে না। ঘটনার দিন আহত এএসআই জসিমের সাথে কেন অস্ত্র ছিলনা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। বাবুল ডাকাত নামের কাউকে আটকের বিষয়টিও তিনি অস্বীকার করেন।
Leave a Reply