কিশোর গ্যাং- রাজনীতির ছায়ায় লালিত দানব Latest Update News of Bangladesh

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৪ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩
সংবাদ শিরোনাম:
আইপিএল নিলামে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের প্রতি আগ্রহ নেই শেবাচিম হাসপাতালে পরিচালকের দায়িত্ব নিলেন ব্রিঃজেঃ একেএম মশিউল মুনীর ‘সংস্কারের পাশাপাশি অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা জরুরি’ : তারেক রহমান পিরোজপুরে ২৪ বছরেও সম্পন্ন হয়নি আয়রন ব্রিজ নির্মাণ কাজ, জনদূর্ভোগ চরমে বরিশালে তথ্য মেলা: দুর্নীতি প্রতিরোধে জোরালো পদক্ষেপ মমতার বাঁধায় বন্ধ হতে পারে বাংলাদেশে আলু রপ্তানি ! কাউখালী উপজেলা জামায়াত ইসলামীর কমিটি গঠন বিএনপির শোক মিছিলে হামলা: রিমান্ডে হাসানাতপুত্র মঈন আব্দুল্লাহ খুনি হাসিনার পুনর্বাসন, জীবন দিয়ে প্রতিরোধ করবে শহীদ ফাউন্ডেশন: সারজিস আলম নতুন কমিশনের দায়িত্ব ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা: রাষ্ট্রচিন্তা পরিষদ




কিশোর গ্যাং- রাজনীতির ছায়ায় লালিত দানব

কিশোর গ্যাং- রাজনীতির ছায়ায় লালিত দানব




কাজল কুমার দাস : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন যে- “তের চৌদ্দ বছরের মতো এমন বালাই আর নেই।”

কিশোর বয়সটাই মূলত এরকম; এই সময়ে ছেলেমেয়েদের সামনের জীবন জগৎ সম্পর্কে থাকে বাঁধভাঙ্গা কৌতূহল। এ সময়টাতেই পরিবেশের কারণে বা আশাভঙ্গের বেদনার হতাশায় মগ্ন হয়ে নৈরাশ্যের অন্ধকারে ডুবে যায় কিশোর। এভাবেই কিশোর বয়সীরা ধীরে ধীরে অপরাধপ্রবণ হয়ে পড়ে।

অপরাধ বিজ্ঞানী রবার্টের মতে-

“কোনো শিশুকে তখনই অপরাধী মনে করতে হবে যখন তার অসামাজিক কাজ বা অপরাধ প্রবণতার জন্য আইনগত ব্যবস্থার প্রয়োজন পড়ে।”

অপরাধ বিজ্ঞানী বিসলারের মতে-

“কিশোর অপরাধ হলো প্রচলিত সামাজিক নিয়মকানুনের উপর অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরদের অবৈধ হস্তক্ষেপ।”

আমাদের সমাজে চুরি-ছিনতাই বা ঘর পালানোর মতো অপরাধকে পেছনে ফেলে সম্প্রতি কিশোরদের সন্ত্রাস-মাদকসেবন ও ব্যবসা আর খুন-ধর্ষণের মতো ভয়ংকর অপরাধে জড়ানোর প্রবণতা বেড়েই চলছে। এটা আমাদের অনাগত ভবিষ্যতের জন্য একটা অশনীসংকেত। অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে যে, কিশোর অপরাধের ধরন পাল্টাচ্ছে। বিভিন্ন অপরাধে জড়িত এসব কিশোরের মধ্যে দরিদ্র পরিবারের সন্তান যেমন আছে, তেমনি আছে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানও।

বাংলাদেশের ২০১৩ সালের শিশু আইন অনুযায়ী, ৯ থেকে অনূর্ধ্ব ১৮ বছরের কোনো ছেলেশিশু অপরাধে জড়ালে তাদের গাজীপুরের টঙ্গী ও যশোরের পুলেরহাটের কিশোর (বালক) উন্নয়ন কেন্দ্রে রাখার বিধান করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক শেখ তৌহীদুল ইসলাম এর মতে-

“কিশোর অপরাধীদের মধ্যে এখন তিনটি শ্রেণি আছে। তাঁর মতে, বস্তিবাসী ও নিম্ন আয়ের পরিবারের কিশোরেরা দারিদ্র্যের কারণে, মফস্বল থেকে বড় শহরে আসা কিশোরেরা সমাজে টিকে থাকার জন্য এবং উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে অপরাধে জড়াচ্ছে।”

বাংলাদেশে বিগত বছরগুলোতে কিশোর অপরাধের বহু আলোচিত ঘটনাটি ঘটেছে। ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি আধিপত্যকে কেন্ত্র করে ঢাকাতে কিশোরদের দুই দলের বিরোধের জেরে খুন হয় নবম শ্রেণির ছাত্র আদনান কবীর। সেই একই বছর এ ঘটনার ১২ দিনের মাথায় তেজগাঁওয়ের তেজকুনীপাড়ায় ‘কে বড়, কে ছোট’ এ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে খুন হয় আবদুল আজিজ নামে এক কিশোর। এ দুটি ঘটনার মধ্যে ১৫ জানুয়ারি রূপনগরে এক স্কুলছাত্রকে পিটিয়ে আহত করে একদল কিশোর। এ ছাড়াও ২০১৬’র ১৪ মে রাজধানীর ভাষানটেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। ওই ঘটনায় ১৪ বছরের এক কিশোরকে আটক করে পুলিশ।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শিল্পী রানী দে কিশোর অপরাধ নিয়ে ২০১৫ সালে গবেষণা করেন। তাতে তিনি ১৯৯০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত কিশোর অপরাধের তথ্য বিশ্লেষণ করেন। তাতে দেখা যায়, ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে রাজধানী ঢাকায় মোট কিশোর অপরাধের মামলা ছিল ৩ হাজার ৫০১টি। এর মধ্যে ৮২টি হত্যা ও ৮৭টি নারী নির্যাতনের মামলা ছিল। পরের ১০ বছরে এ দুই ধরনের মামলার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৩৮ ও ২২৪। সেই ১০ বছরে (২০০১-১০) মোট ৪ হাজার ৮৮২টি মামলা হয় । বছর অনুসারে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০০১ সালে শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকায় কিশোর অপরাধের মামলা ছিল ৫১২টি। এর মধ্যে চুরির ঘটনা ছিল ১৩৮, হত্যা মামলা ১৪ ও নারী নির্যাতন ১৮টি। পাঁচ বছর পর ২০০৬ সালে এসে মোট মামলা তেমন বাড়েনি। কিন্তু খুন ও নারী নির্যাতন বা ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ ও ২২-এ। আর চুরির মামলা কমে যায় (১১৩টি)। ২০০৬ সালে মোট মামলা ছিল ৫২৮টি।

সম্প্রতি অবসরে যাওয়া সিআইডির জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার ফজলুল কবীর বলেন, একটা সময় ছিল হরতালের আগের দিন সন্ধ্যায় পথশিশুকে ধরে থানায় নিয়ে যাওয়া হতো। কারণ, সামান্য টাকার বিনিময়ে তারা হরতালে মিছিলের সামনে থাকত, মারামারি লাগলে ইটপাটকেল, বোমা ছুড়ত। এ ধরনের শিশুদের মাদক বহনসহ বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত করা হতো। কিন্তু এখন মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেরাও নানা অপরাধে জড়াচ্ছে। পরিবার, চারপাশের পরিমণ্ডল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুশাসন নেই। ছেলে কোথায় কী করে বেড়াচ্ছে, তার খোঁজ মা-বাবা রাখতে পারছেন না। প্রযুক্তি তাদের জীবনাচরণকে পাল্টে দিচ্ছে। পাশের বাড়ির ছেলেটির নতুন মোটরসাইকেল দেখে কিশোর ছেলেটির পরিবারও তার চেয়ে দামি কিছু কিনতে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নামছে। কিশোরদের ওপর এর মারাত্মক বাজে প্রভাব পড়ছে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) মো. জুলফিকার হায়দার বলেন, অনেক মা-বাবা আছেন, সন্তান কী করছে, কার সঙ্গে মিশছে, ইন্টারনেটে কী দেখছে সে সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন না। মনে করেন টাকা দিলেই সব দায়িত্ব শেষ। যাঁরা এমন মনে করেন, তাঁদের সন্তানদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

কিশোর অপরাধ সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক ও জাতীয় উদ্বেগের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের প্রধান শহরগুলোতে কিশোর-তরুণরা বিভিন্ন গ্যাংয়ের মাধ্যমে অপরাধ করছে। গত বছরে বাবার সাথে বাড়ি ফিরছিল বরিশালের স্কুলছাত্রী মেনহাজ হাসান মিলি। কিন্তু তার শেষ রক্ষা হলো না। কাজ ফেলে যে বাবা শুধুমাত্র বখাটেদের ভয়ে, নিরাপত্তার অভাবে সন্তানকে পাহারা দিয়ে নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছিলেন, সেই বাবাই তার মেয়েকে শেষ রক্ষা করতে পারলেন না। চোখের সামনেই ঘটল অবাক করার মতো ঘটনা। দশ-বারোজন কিশোর বাইক নিয়ে বাবা ও মেয়ের পথ আগলে ধরল। অতঃপর মেয়েটির ওড়না ধরে টান দিয়ে রাস্তায় ফেলে দিল। তারপর বাইক চালিয়ে চলে গেল মিলির শরীরের উপর দিয়ে। রক্তাক্ত মিলি তিন দিন হাসপাতালের বেডে ছটফট করার পর মারা গেল।

সম্প্রতি বরগুনায় আলোচিত রিফাত হত্যা মামলা আমাদের আরেকবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, রাজনীতির প্রচ্ছন্ন মদদে- মাদক ব্যবসায় ব্যবহার হওয়া “জিরো জিরো সেভেন” নামে একটা কিশোর গ্রুপ কিভাবে একটা লাগামহীন দানবে পরিনত হয়। আর নয়ন বন্ড নামের কিশোর কিকরে ভয়ংকর সন্ত্রাসীতে পরিনত হয়। পেশাদার সন্ত্রাসী-গডফাদার চক্রের মতো করে তাদেরও রয়েছে গ্যাং। একেক গ্যাং একেক এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে। এভাবেই চলতে চলতে কিশোর সন্ত্রাস এখন একটি ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।সময় পেরিয়ে গেছে। এখন কেবল অপরাধের সংখ্যাই বৃদ্ধি পেয়েছে তা নয়, অপরাধের ধরনও পাল্টেছে। দেশের আলোচিত হত্যাকাণ্ডের বেশিরভাগই কিশোর অপরাধীদের হাতে ঘটেছে। এটি খুবই ভয়ঙ্কর তথ্য। পুরো দেশজুড়েই এসব কিশোর গ্যাং মাদক বিক্রি, ইফটিজিং, দখলবাজি ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার খবর রয়েছে। এদের দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে খুনের ঘটনাও। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে কিংবা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনুচর হিসেবে কাজ করছে এসব কিশোর। কিশোর বয়সটাই বেপরোয়া ও আগ্রাসী একটা বয়স। কৌতুহলের বশে বা অজ্ঞাতসারেই তাদের পা পড়ে যেতে পারে অন্ধকার জগতে।

সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে বরিশালের আরেকটি চাঞ্চল্যকর কিশোর গ্রুপের সংবাদ। বরিশালের সিটি কলেজের মধ্যে ‘আব্বা গ্রুপ’ নামে একটি কিশোর গ্যাং কলেজটির অধ্যক্ষকে লাঞ্চিত করে। অভিযোগ রয়েছে গ্রুপটি অনেকদিন থেকেই শহরের সদর রোডে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। রাজনৈতিক দলের এলাকা দখলের হাতিয়ার হিসেবে এরা নোংড়া রাজনৈতিক নেতাদের ছায়ায় বেড়ে উঠেছে। তাই প্রশাসনও এদের ব্যাপারে কোন একশন নিতে পারছে না। তারা এতটাই বেপড়োয়া হয়ে উঠেছে যে, সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হবার ক্ষোভে তারা তন্ময় তপু নামের এক সংবাদ কর্মিকেও হত্যার হুমকি দিয়েছে প্রকাশ্যে। এসব শুধু ভাবনারই বিষয় নয়; অপ্রতিরোধ্য এসব কিশোর সন্ত্রাস এখনই রুখতে না পারলে এ দানব একটা সময়ে গিলে খাবে পুরো সিস্টেমকে।

এমনিতেই নানা সমস্যায় জর্জরিত আমাদের জীবন । দুশ্চিন্তার শেষ নেই, তার উপর সম্প্রতি এ ভয়ঙ্কর কিশোর সন্ত্রাস আমাদের সেই আতঙ্কের কারনকে আবারও উস্কে দিচ্ছে। যে বয়সে কিশোরদের মাঠে খেলাধুলা করার কথা, পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার কথা, আচরণে নম্র ও শিষ্টাচারী হওয়ার কথা; সেই বয়সে তরুণরা গ্রুপিং করছে, মাদকের ব্যবসায় নেমেছে, রাজনীতির নোংড়া মাঠে নেমে একে অন্যকে হুমকি দিচ্ছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে মত্ত হয়ে উঠে খুন করছে, ইভটিজিং আর বখাটেপনা করছে। এরাই কি আমাদের ভবিষ্যত? দেশ ও দশের ভাগ্যের চাকা এরাই কি বদলে দেবে? আগামী দিনের নেতৃত্ব কি এরাই দেবে?

কিশোর সন্ত্রাস গ্যাংগুলোকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করা জরুরি। এর জন্যে যেমন আইনি ব্যবস্থা দরকার তার চেয়েও বেশি দরকার পরিবার ও সমাজের প্রচেষ্টা। আমাদের মনে রাখতে হবে, কিশোর বয়সটা খুবই স্পর্শকাতর। সুতরাং কিশোরদের এ ধরনের সমস্যা খুবই সতর্কতার সঙ্গে পরিবার ও সমাজের সাহায্যে সামাধান করতে হবে। শুধু আইনি ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। এই সন্ত্রাসের উৎপাত থামাতে কী করা যায়, সেটাই এখন ভাববার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাড়া-মহল্লায় নিজেদেরকে ত্রাস হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে, গ্রুপিং করতে এই বখাটেদের দলগুলোর আলাদা আলাদা নামও রয়েছে। যেমন- ‘জিরো জিরো সেভেন গ্রুপ’ ‘আব্বা গ্রুপ’ ‘দজাম্বু গ্রুপ’, ‘পট্টি গ্রুপ’, ‘দুল গ্রুপ’ ইত্যাদি।

খবর নিয়ে দেখেন, এসব কিশোর অপরাধীদের অনেকেই স্থানীয় নোংড়া রাজনৈতিক ছায়ায় পালিত হচ্ছে। কখনো এরা রাজনীতিজীবিদের মদদে স্থানীয়ভাবে মাদক ব্যবসায়ও জড়িয়ে পরে। তাই সাধারণ মানুষও এদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না, আবার স্থানীয় প্রশাসনের কানে দিলে তারা এটাকে ‘নিছক ছেলেমানুষি’ বলে চালিয়ে নিজেদের দায় সারে। আমরা এমন একটা সমাজের দ্বারপ্রান্তে এসেছি যেখানে বাবার পাশেও সন্তান নিরাপদ নয়। বাবার সামনে কন্যাকে বাইকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করছে। চোখের সামনেই সন্তান খুন বা নির্যাতিত হচ্ছে। স্বজনরা বিচার পাচ্ছেন না। পিতা/স্বজন ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আইনের আশ্রয় নিলে হুমকি-ধামকি খেতে হয়। উঠতি বয়সেই ছিনতাই, মাদক কারবার ও মহল্লায় মাস্তানিতে জড়িয়ে পড়ছে তারা।

কিশোরদের বেপথ হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটিতে সুস্থ পরিবেশে বেড়ে ওঠার সুযোগ। কিশোররা যেন অপরাধে জড়াতে না পারে এবং কেউ তাদের অসৎ কাজে ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে নজর দিতে হবে। এ জন্য সবার আগে পরিবার তথা বাবা-মাকে এগিয়ে আসতে হবে।

সন্তানরা কী করে, কার সঙ্গে সময় কাটায়- এসব খেয়াল রাখতে হবে। সন্তানদের অযৌক্তিক আবদার পূরণ করার আগে ভাবতে হবে। গোটা সমাজেই শিশু-কিশোরদের সুস্থ-সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। স্কুল কারিকুলামের বাইরে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আকৃষ্ট করতে হবে। কারন, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত কিশোর কখনোই একজন অপরাধী বা সন্ত্রাসী সৃষ্টি হবে না। তাই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড যেমন- গান, আবৃত্তি, নাটকের সাথে এদের যুক্ত করতে হবে। বই পড়ার অভ্যাস করাতে হবে। ছিন্নমূল শিশু-কিশোরদের কিশোর অপরাধ রুখতে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। আর যারা ইতোমধ্যে অপরাধ চক্রে জড়িয়ে গেছে, তাদের জন্য উপযুক্ত কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

যেহেতু রাষ্ট্রের উদাসীনতায় প্রজন্মটি এই ভয়ংকর সময়ে এসে দাড়িয়েছে তাই এখান থেকে ফিরে আসবার এবং এর লাগাম টেনে ধরার দায় আর দায়িত্বটিও তার…

লেখক: ব্লগার ও প্রাবন্ধিক

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD