বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৪৪ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক॥ কোথাও গর্ত হয়ে পানি জমে আছে, কোথাও সড়কের উপরেই জমে আছে কাদামাটি। আবার পিচ উঠে গিয়ে ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে ইট-পাথর। এ চিত্র বরিশাল নগরীর পাকা সড়কের। বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) হিসাব মতে, নগরীর ৮৫ কিলোমিটার সড়কই বেহাল, যা মোট পাকা সড়কের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। তবে নগরবাসী বলছেন, নগরীতে চলাচলের অনুপযোগী পাকা সড়কের পরিমাণ আরো বেশি। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে এসব সড়কের অবস্থা দিন দিন আরো খারাপ হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর ২৪ নং ওয়ার্ডের জিয়ানগর সড়ক, ২৫ নং ওয়ার্ডের মাওলানা ভাসানী সড়ক থেকে ফকিরবাড়ি স্কুলের সংযোগ সড়ক, ১২ নং ওয়ার্ডের স্টেডিয়াম কলোনি, সাগরদী ধান গবেষণা সড়ক, ত্রিশ গোডাউন বধ্যভূমি সড়ক, খ্রিস্টানপাড়া সড়ক, ইসলামপাড়া সড়ক, সদর রোড, নিউ সদরঘাট সড়ক, ফকিরবাড়ি রোড, কালীবাড়ি রোড, মল্লিক রোড, মুসলিম গোরস্তান রোড, দরগাবাড়ী রোড়, কাশীপুর বাজারসংলগ্ন সড়ক, ইছাকাঠি সড়ক, লুৎফর রহমান সড়ক, কাউনিয়া প্রধান সড়ক, বগুড়া রোড, সাগরদি ব্রাঞ্চ রোড, কাশিপুর কলোনি সড়ক, কাশিপুর চৌমাথা সড়কসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক খানাখন্দে ভরা। বৃষ্টি হলে এসব সড়ক কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। কোনো কোনো সড়কে বিটুমিন উঠে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বগুড়া রোড, সাগরদি ব্রাঞ্চ রোডসহ বিভিন্ন স্থানে সড়কের ভেতর থেকে পাথর উঠে যাচ্ছে।
নগরবাসী জানান, নগরীর বেশির ভাগ সড়কের কোথাও বড় বড় গর্ত, আবার কোথাও খানাখন্দে ভরা। বৃষ্টি ও জোয়ারের পরে এসব সড়কে পানি জমে থাকে। বেহাল দশার কারণে এসব সড়ক দিয়ে স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করা যায় না। প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়কের এই বেহাল দশার কারণে বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট দেখা দিচ্ছে। এ কারণে অনেক সময় অফিসগামী লোকজন ও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীকে হেঁটে গন্তব্যে যেতে হয়।
২৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা হারুন জানান, এই এলাকার বেশির ভাগ সড়কের অবস্থাই নাজুক। বৃষ্টি হলে সড়কে পানি জমে যায়। তখন খানাখন্দ টের পাওয়া যায় না। আন্দাজ করে পা রাখতে হয়।
আরেক বাসিন্দা মেহেদি হাসান জানান, স্থানীয়দের উদ্যোগে একবার পানি অপসারণের চেষ্টা করা হলেও তাতে কোনো লাভ হয়নি। বড় ধরনের উদ্যোগ ছাড়া সড়কের জলাবদ্ধতা নিরসন করা যাবে না।
ডা. মিজানুর রহমান নামের এক চিকিৎসক বলেন, বেহাল সড়ক দিয়ে যানবাহন যাওয়ার সময় চাকা খাদে পড়ে কাদাপানি উছলে উঠে পথচারীর গায়ে পড়ে। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটছে।
২৫ নং ওয়ার্ডের রূপাতলী হাউজিং এস্টেটের বাসিন্দা শিপন বলেন, সড়কের সঙ্গে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতি না ঘটলে এ সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ পানি জমার কারণে সড়ক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই পানি অপসারণের ব্যবস্থা করতে হবে।
বিসিসি সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল নগরীতে মোট ৫৯৩ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে পিচ ঢালাই করা সড়ক রয়েছে ২৬৭ কিলোমিটার। এসব সড়কের ৮৫ কিলোমিটার এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
২৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এম সাইদুর রহমান জাকির সড়কের দুরবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, সড়ক সংস্কারে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করি সংস্কারকাজ শেষে হলে দুর্ভোগ থাকবে না।
বিসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুহা. আনিছুজ্জামান বলেন, ভাঙা ও খানাখন্দের সড়ক মেরামতের জন্য মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ নির্দেশনা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী কিছু সড়কের কাজ শুরু করা হলেও তা বর্ষার জন্য বন্ধ রাখতে হয়েছে। কারণ বর্ষার সময় কার্পেটিং কাজ করা যায় না। বৃষ্টি বন্ধ হলেই নগরীর সব ভাঙাচোড়া সড়কের মেরামতকাজ শুরু হবে।
Leave a Reply