মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:২৩ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক॥ বরিশাল শহরাংশে কীর্তনখোলা র মোট ৩৬ একর জমির মধ্যে বর্তমানে ২০ একরই বেদখল হয়ে আছে। অবৈধভাবে এ জমিতে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছে তিন শতাধিক দখলদার। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ এ নদী দিন দিন সংকুচিত হয়ে পড়ছে, শিকার হচ্ছে দূষণের।
এদিকে এসব দখলদারের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বিআইডব্লিউটিএ ও জেলা প্রশাসন। দখলদার উচ্ছেদে উপেক্ষা করা হচ্ছে আদালতের রায়ও। সর্বশেষ ২০১৭ সালে বিআইডব্লিউটিএ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলেও তা অজ্ঞাত কারণে বন্ধ হয়ে যায়। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, আসছে ঈদুল আজহার পর পরই এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু হবে।
বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, কীর্তনখোলা নদীকে বরিশাল নদীবন্দর ঘোষণা হয় ১৯৬০ সালে। এ সময় নদীর উত্তরে আমানতগঞ্জ খাল থেকে দক্ষিণে রূপাতলী সিএসডি গুদাম পর্যন্ত প্রায় ৩ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার তীরের জমি বিআইডব্লিউটিএকে হস্তান্তর করা হয়। হস্তান্তর করা হয় মোট ৩৬ দশমিক ৮০ একর জমি। তবে পিলার বা সীমানাপ্রাচীর না থাকায় ধীরে ধীরে এর ২০ একরই বেদখল হয়ে যায়।
এ অবস্থায় দখলদারদের চিহ্নিতকরণে সর্বশেষ ২০১৪ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে একটি জরিপ করে বিআইডব্লিউটিএ। জরিপে দেখা যায়, ৩০৬ জন নদীতীরের জমি বিভিন্নভাবে দখল করে রেখেছে। যাদের অধিকাংশই স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী। এরপর উচ্চ আদালত থেকে এর মধ্যে ২২০ জন দখলদার উচ্ছেদের জন্য বিআইডব্লিউটিএ ও জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে নির্দেশনা অনুযায়ী উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি।
কীর্তনখোলার দখল ও দূষণ বিষয়ে বরিশাল নদী-খাল বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন বলেন, নদীতীর ঘিরে অসংখ্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। ফলে কোনোভাবেই নদীটির দূষণ ঠোকানো যাচ্ছে না। এ দখল ও দূষণ রোধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে অচিরেই গুরুত্বপূর্ণ নদীটি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।
বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন অর রশীদ বলেন, আমরা এ বিভাগ থেকে জমি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য শুধু লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে থাকি। আমরা ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে অস্থায়ী ১৩৮টি সীমানা পিলার স্থাপন করেছিলাম।পরে দখলদাররা ওই পিলার তুলে ফেলে।
এ বিষয়ে বরিশাল নদীবন্দরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু বলেন, জেলা প্রশাসনের সহায়তায় কীর্তনখোলার তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের প্রস্তুতি চলছে। আসন্ন ঈদুল আজহার পর আগস্টের তৃতীয় বা চতুর্থ সপ্তাহে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে। নৌ-পরিবহনমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এ অভিযান শুরু হবে।
এর মধ্যে প্রথম ধাপে পলাশপুর সেতু থেকে যমুনা অয়েল ডিপো পর্যন্ত ৩ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার অংশে কীর্তনখোলার উভয় অংশে উচ্ছেদ অভিযান চলবে। উচ্ছেদের পর স্থায়ী সীমানা পিলার দেয়া হবে। এ উচ্ছেদ অভিযান সফল করতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শহীদুল ইসলামকে প্রধান করে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে বিআইডব্লিউটিএ, পাউবোসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা রয়েছেন। বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী (দায়িত্বপ্রাপ্ত) মামুন অর রশিদ জানান, ওই উচ্ছেদে শক্তিশালী বুলডোজার ব্যবহার করা হবে। এগুলো দিয়ে অনায়াসে নদীতীরের অবৈধ বহুতল ভবন গুঁড়িয়ে দেয়া যায়। এবার উচ্ছেদ অভিযানের পর স্থায়ী পিলার স্থাপন করা হবে।
টাস্কফোর্স কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শহিদুল ইসলাম বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও বিআইডব্লিউটিএর নীতিমালা অনুযায়ী অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর জমি উদ্ধার করা হবে। তবে এর আগে সীমানা চিহ্নিত করে দখলদারদের স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ার জন্য সময় দেবে বিআইডব্লিউটিএ। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনায় এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
Leave a Reply