সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৮ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: ভেজাল ও পঁচা-বাসি খাবার খাচ্ছেন লঞ্চযাত্রীরা। লঞ্চের কয়েক লাখ যাত্রী বাধ্য হচ্ছেন এই খাবার খেতে। ভেজাল সিন্ডিকেটের কাছে লঞ্চ মালিক, ক্যান্টিন মালিক সবাই জিম্মি। নিম্নমানের এসব পণ্যের আবার বাড়তি মূল্য রাখা হচ্ছে। রাজধানীর সদরঘাট থেকে নৌপথে ৪১ রুটে কয়েক লাখ মানুষ লঞ্চে যাত্রী যাতায়াত করে। প্রতিদিন শতাধিক লঞ্চ চলাচল করে বিভিন্ন রুটে। তার মধ্যে ঈদে থাকে কয়েকগুণ বেশি। এসব লঞ্চের যাত্রীদের পঁচা-বাসি খাবার খাওয়ায় কেন্টিন কর্তৃপক্ষ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ কেউ তাদের কিছু বলছে না।
লঞ্চের কেন্টিনগুলোতে যেসব খাবার পরিবেশন করা হয় তা খুবই নিম্নমানের বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। এ ছাড়া লঞ্চে যেসব কেক, বিস্কুটসহ শুকনা খাবার ও পানীয় বিক্রি হয় তা অখ্যাত কোম্পানির। এমন এমন কোম্পানির সামগ্রী বিক্রি করা হয় যার নামও অনেক মানুষ শোনেনি। এ ছাড়া হকাররা লঞ্চে লঞ্চে ঘুরে যেসব খাবার বিক্রি করে তাও অনেক নিম্নমানের। অনেক সময় তারা লঞ্চ যাত্রীদের এই নিম্নমানের খাবার কিনতে বাধ্য করে থাকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এসব ভেজাল সিন্ডিকেটের মূল হোতা আসাদ ও দালাল খোকন। লঞ্চে প্রতিদিন হাজার হাজার পিস মুরগি সাপ্লাই দেয় কেন্টিন দালাল খ্যাত খোকন। তার নেতৃত্বে পাকিস্তানি মুরগি, চাল, বিস্কুট, কেক ও রুটি নিতে বাধ্য কেন্টিন মালিকরা। ১৫০ টাকা করে একটি মুরগি কেনে কেন্টিন মালিক। এই মুরগি কোত্থেকে কেনে, মুরগির মান কি রকম তা ক্যান্টিন মালিকরাও বলতে পারেন না। তারা শুধু রান্না করে যাত্রীদের খাওয়ান।
লঞ্চযাত্রী সোহাগ জানান, কয়েক দিন আগে সুরভি লঞ্চে করে বরিশালে যান তিনি। লঞ্চে পরিবারের সবাই মুরগি দিয়ে সেহরি খায়। সকালে তার ১৩ বছরের ভাগনে মুমিন, মা রোকেয়া ও ছোট বোন পাপড়ির ডায়রিয়া হয়। পরে বরিশাল মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়। তিনি বলেন, ডাক্তার জানান পচা ও বাসি খাবার খাওয়াতে এমনটা হয়েছে। বোতলজাত পানির মধ্যে শ্যামলি, লিলিয়া, প্রিমিয়ার ও রংধনু নিচ্ছে কেন্টিন মালিকরা।
তা লঞ্চে বিক্রি করছে হাফ লিটার ২০ থেকে টাকা। এক লিটার ৪০ থেকে ৬০ টাকা। একাধিক যাত্রী বলেছেন, তারা এসব কোম্পানির পানির নামও কোনো দিন শোনেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্যান্টিন মালিক বলেন, এই পানি না নিয়ে অন্য কোম্পানির পানি লঞ্চে সরবরাহ করা হলে মার খেতে হবে।
বরিশাল ও ঝালকাঠি রুটে লঞ্চে চলাচলরত একাধিক যাত্রী জানায়, লঞ্চের কেন্টিনের খাবার ফুটপাথের খাবারের চেয়েও মানহীন। পচা ও বাসি খাবার বেশি খাওয়ান তারা। শোল মাছের বদলে মৃগেল মাছ। আর দেশী মুরগির বদলে পাকিস্তানি মুরগি খাওয়ায় তারা। একাধিক লঞ্চের কেন্টিন মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, লঞ্চ মালিককে অ্যাডভান্স ৪০ থেকে ৮০ লাখ টাকা চুক্তিতে কেন্টিন ভাড়া নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি ট্রিপে চার হাজার টাকা ভাড়া বাবদ নেয়। আর এত টাকা অগ্রিম দিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে। তাই তারা খাবারে অতিরিক্ত টাকা নেন।
তারা বলেন, মুরগি, চাল, কেক, বিস্কুটসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার সাপ্লাই দেয় খোকন ও তার লোকজন। তবে খোকন দুইটা লঞ্চে কেন্টিন চালায়। তারমধ্যে ঘোষেরহাট রুটে সাব্বির ও পটুয়াখালী রুটে রাসেল নামে দুটি লঞ্চে কেন্টিন তার। ওই সব মালামাল তার কাছ থেকে না নিলে কেন্টিন চালাতে পারবে না কেউ।
আর পানি নিতে হয় আসাদের কাছ থেকে। শ্যামলি, রংধনু লিলিয়া ও প্রিমিয়ার বোতলজাত পানি যাত্রীরা খেতে চায় না। অন্য পানি না পাওয়ায় খেতে বাধ্য হচ্ছে বলে জানান তারা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাপ) সংস্থা ঢাকা নদী বন্দর আহ্বায়ক মামুন আর রশিদ বলেন, একটি লঞ্চ নামাতে ৩০ থেকে ৫০ কোটি টাকা খরচ হয়। তার মধ্যে চুক্তিতে লাখ টাকায় কেন্টিন ভাড়া দেয়া হয়েছে। আর তারা কিভাবে খাওয়াবে-না-খাওয়াবে তা দেখার বিষয় তাদের না। তবে পচা-বাসি খাবার খাওয়ানো ছাড়াও কেন্টিন মালিকরা জিম্মি কথাটির সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আসাদ ও খোকনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের পাওয়া যায়নি।
Leave a Reply