সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২২ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: সড়কে বৈদ্যুতিক পেলার রেখে উন্নয়ন। এ নিয়ে দেশ জুড়ে বেশ হইচই পড়ে গেছে। কিন্তু সেই মুহুর্তে আরেকটি ভয়াবহ চিত্র ধরা পড়েছে নগরীতে। সড়কের মধ্যে নয়, বরং ঘরের মধ্যেই রয়েছে বৈদ্যুতিক খুটি। যার উপর দিয়ে গেছে ৩৩ কিলো ভোল্ট শক্তি সম্পন্ন লাইন। তার নিচেই একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ অন্তত ২০টি পরিবারের ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস চলছে। যার মধ্যে একটি দ্বিতল টিন সেট ঘরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছে একটি পরিবার। বৃষ্টি বা হালকা বাতাসেও আর্থিং এর কারনে গুন গুন শব্দে ঘুম ভেঙে যায় ওই পরিবারের সদস্যদের।
নগরীর সব থেকে ঘনবসতি এলাকা ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ পলাশপুর গুচ্ছগ্রাম ১ নম্বর গলিতে এমন চিত্র সাধারণ মানুষকে শঙ্কিত করলেও বিষয়টি নিয়ে যেন মাথা ব্যথা নেই বিদ্যুৎ বিভাগের। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা দিন দিন প্রকট হচ্ছে। সরেজমিনে দেখাগেছে, দক্ষিণ পলাশপুরে গুচ্ছগ্রামের ১ ও ৬ নম্বর ব্যারাকের জমিতে ৫টি স্থাপনা নির্মান করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ৪ মাস পূর্বে ভবনের মধ্যে ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ এর খুটি রেখেই দ্বিতল ভবন নির্মান করেছেন হাসান নামের ব্যক্তি। বরাদ্দ পাওয়া মোশারফ হোসেন নামের ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি ওই জমি কিনেছেন।
ভবনের ছাদের কাজও শেষ হয়েছে। ছাদের অল্প দুরেই রয়েছে ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ লাইন। এর পাশেই রয়েছে শাহজাহান মিয়ার দ্বিতল টিন ঘর। যে করটির মধ্যেই রয়েছে আরো একটি বিদ্যুৎ এর খুটি। যেখানে পরিবার পরিজন নিয়ে ভাড়া থাকছে অন্য একটি পরিবার। ঝর অথবা বৃষ্টি হলেই আর্থিং-এ হয়ে ঢেউ টিনের মধ্যে থেকে গুন গুন শব্দ বের হচ্ছে। অপরপাশে অর্থাৎ ১ নম্বর গুচ্ছগ্রামের জমিতে আরেকটি দ্বিতল বসত বাড়ি নির্মান করেছেন আনয়াল বেপারী।
তার বাড়ির দেয়াল ঘেঁসেই রয়েছে বিপজ্জন ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ এর লাইনের দুটি খুটি। এর আরেকটু সমানে আব্দুস ছত্তার এর তিন তলা ভবনের পাশ থেকে বিপজ্জন ওই বিদ্যুৎ এর লাইন বয়ে গেছে। তার পাশেই ঘরের মধ্যে খুটি রেখে নির্মান করা হয়েছে আরেকটি টিন সেট ঘর। এর পরেই রয়েছে তৃতীয় তলা ভবন বিশিষ্ট এ করিম বাস্তহারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সরেজমিনে দেখাগেছে, পলাশপুর এলাকায় ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানির পলাশপুর বিদ্যুৎ উপ-কেন্দ্র রয়েছে।
রূপাতলী পাওয়ার হাউস থেকে ৩৩ কেভি ক্ষমতা সম্পন্ন ওই বিদ্যুৎ এর লাইন পৌছেছে পলাশপুরের ওই উপ-কেন্দ্রে। বিদ্যুৎ এর তিন তারের ওই লাইনটি মুল সড়কের পাশ হয়েই পলাশপুর চরমোনাই ট্রলার ঘাটের মোড় পর্যন্ত পৌছেছে। পরে সেখান থেকে আলাদা আলাদা খুটির মাধ্যমে উপ কেন্দ্রে পৌছেছে।
আলাদা ওই খুটির কারনেই প্রায় ২০টি পরিবারকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করতে হচ্ছে। উপ কেন্দ্রের ইন-চার্জ ইখতিয়ার হোসেন বলেন, ২৫ থেকে ৩০ বছর পূর্বে এই উপ কেন্দ্র নির্মান করা হয়েছে। তখন এখানে কোন বাড়ি-ঘর ছিলো না। বিদ্যুৎ এর লাইন ওই একই সময় হয়েছে। এখন যারা বসবাস করছেন তারা বুঝে শুনেই কাউকে কিছু না যানিয়ে ঘর বাড়ি নির্মান করেছেন।
ভেতরে খুটি রেখে দ্বিতল ভবন ও টিনের ঘর নির্মানের বিষয়ে উপ-কেন্দ্রের ইনচার্জ ইখতিয়ার বলেন, কে কি করলো সেটা আমার দেখার বিষয় না। আমার দায়িত্ব উপকেন্দ্রের ভেতরে। আমি সেটাই করছি। যিনি এই এলাকার ফিডার ইন-চার্জ এর দায়িত্বে রয়েছে এটি তার দেখার কথা তিনিই দেখবেন।
এদিকে বিদ্যুৎ উপ-কেন্দ্রের পাশে খুটি রেখে দ্বিতল টিনের ঘর নির্মান করা শাহজাহান ফকির বলেন, ৩ শতাংশ জমি নিয়ে আমার একটি ভিটি রয়েছে। যা গত ২০/২৫ বছর পূর্বে জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে আমার নামে বরাদ্দ হয়। ওই জমির একাংশে টিন সেট ও অপর অংশে পাকা স্থাপনা নির্মান করেছেন।তিনি বলেন, খুটি রেখেই টিনের ঘরটি নির্মান করেছেন। যে কারনে সব সময় আমাদের আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়।
বিশেষ করে যে রাতে ঝড়-বৃষ্টি হয় সেই রাত নির্ঘুম কাটাতে হয়। তাছাড়া প্রতি রাতেই বিদ্যুৎ এর গুন গুন শব্দ শুনে ঘুমতে যেতে হয় পরিবারের সদস্যদের। অপর ব্যক্তি আয়নাল ব্যাপারী বলেন, ১৯৭৮ সালে জেলা প্রশাসন থেকে ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ জমি আমি বরাদ্দ পাই। এর পর গত ৪২ বছর ধরে ওই জমিতে টিনের ঘর তুলে বসবাস করে আসছি। গত ৬/৭ মাস পূর্বে পুরানো ঘর ভেঙে নতুন দ্বিতল ভবন বানিয়েছি।
যার পাশ থেকে বিদ্যুৎ এর তার বয়ে গেছে। তিনি বলেন, বিদ্যুতের ওই খুটি থাকতেই আমার ভবন নির্মান করা। তবে ভবন নির্মানের পূর্বে সিটি কর্পোরেশন থেকে কোন প্লান অনুমোদন অথবা বিদ্যুৎ বিভাগকে অবহিত করা হয়নি। এমনকি ঘরের মুধ্যে খুটি রেখে ভবন নির্মান করা হাসান নামের ব্যক্তিও বাড়ির প্লান অথবা বিদ্যুৎ বিভাগের অনুমতি নেয়নি বলে স্বীকার করেছেন। ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানির বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরন বিভাগ-২ এর অধিনস্ত পলাশপুর ফিডার ইন-চার্জ উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহিদু হোসেন বলেন, যে জমিতে ভবন নির্মান করা হয়েছে সেটা রেকর্ডিও জমি।
কিন্তু ওখানে বিদ্যুৎ এর খুটি তারও অনেক আগে থেকে। যারা বিদ্যুৎ এর খুটি দখল করে ইমারত বা বাড়ি ঘর নির্মান করেছে তারা অপরাধ করেছেন। তাছাড়া এ বিষয়ে পূর্বে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। তাই যারা খুটি দখল করে ইমারত নির্মান করেছে তাদের নোটিশ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানির বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরন কেন্দ্র-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী অমূল্য রঞ্জন সরকার বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। কেননা ইতিপূর্বে বিষয়টি কেউ আমাকে বলেনি। তাই যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
Leave a Reply