শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:৫৪ পূর্বাহ্ন
মোঃ মাসুদ সরদার: মহান মে দিবসেও বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার নারী শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরী থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উপজেলার নারী শ্রমিকরা ঘরের কাজের গন্ডি থেকে বেরিয়ে জমিতে ধান চাষ, হাতে হাতুড়ি, মাথায় ঝুঁড়ি, কাঁখে কলসী নিয়ে অভাব অনটন ক্ষুধা আর দারিদ্রতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সকাল-সন্ধ্যা কাজ করে চলেছেন। ইট-পাথর ভাঙ্গা, মাটি কাটা, সিমেন্ট বালু মিশ্রন, রাস্তাঘাট নির্মাণ ও চা-মিষ্টির দোকানে পানি টানার মতন কঠিন পরিশ্রম করেও ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এসব নারী শ্রমিকরা। উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে পুরুষ শ্রমিকের পাশা পাশি নারী শ্রমিকেরা কাজ করছে। বর্তমানে পুরুষ শ্রমিকদের চেয়ে নারী শ্রমিকের কদর অনেক বেশী হলেও বৈষম্যে থেকে তারা রেহাই পায় না।
নারী শ্রমিক হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর ন্যায্য মজুরী থেকে বঞ্চিত হয়ে অতি কষ্ঠে জীবন যাপন করছে। উপজেলার বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরাও পাল্লা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তবে তাঁরা সমপরিমান কাজ করলেও ন্যায্য মজুরিতে নারী শ্রমিকরা বৈষম্যের শিকার। একজন পুরুষ শ্রমিক প্রতিদিন শ্রম বিক্রি করে যে পরিমান মজুরি পায়, কিন্তু একজন নারী শ্রমিক সমপরিমান শ্রম দিয়ে তার অর্ধেক মজুরি পান না।
জানা গেছে, এ উপজেলায় কৃষিকাজে জড়িত রয়েছে অনেক নারী শ্রমিক। নারী শ্রমিকরা ক্ষেতে ধান রোপণ, নিড়ানি, এমনকি ধান কাটা, মাড়াইয়ের কাজেও পুরুষ শ্রমিকদের সমান অবদান রাখছেন। আর অল্প মজুরিতে বেশি কাজ পাওয়া যায় এবং নারীরা কাজে গাফলাতি না করায় বিভিন্ন গ্রামে কৃষি নারী শ্রমিকদের কদর ও চাহিদা দিন দিনি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গত একযুগ আগে একজন পুরুষ শ্রমিকের মজুরি ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা। কিন্তু কয়েক বছরে পুরুষদের শ্রমের মজুরি বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি। বর্তমানে একজন পুরুষ শ্রমিক মজুরি পাচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা আর একই কাজে করে একজন নারী শ্রমের মজুরি পাচ্ছে ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। কৃষি কাজে পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে নারী শ্রমিকরা এগিয়ে থাকলেও মজুরি বৈষম্যে তাঁরা আজও অবহেলিত। কয়েকজন নারী নেত্রী বলেন, সকল কাজে নারীরা একধাপ এগিয়ে থাকলেও পুরুষ স্বাশিত সমাজে আজও তাল মিলিয়ে সমপরিমান কাজ করলেও নারীরা মজুরী বৈষম্যসহ শিকার হয়ে অবহেলিত রয়ে যাচ্ছে। অথচ প্রতিবছর শ্রমিক দিবস, নারী দিসব পালিত হয়, সকল কাজে নারী পুরুষ সম-অধিকার বলা হয়।
কিন্তু ন্যায্য মজুরীর ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় না। বিধবা জরিনা বেগম জানান, বাজারে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দোকানে দোকানে পানি টানার কাজ করে ৪০-৪৫ টাকা পাই। প্রতি কলস পানিতে ২ টাকা মজুরী দেয়া হয়। জীবন বাঁচানোর তাগিদে এবং বাচ্চাদের ক্ষুধা নিবারণের জন্য পানি টানার কাজ করছি। ইট-পাথর ভাঙ্গা মহিলা শ্রমিক কাকলী ঘরামী জানান, ঠিকাদাররা ইট-পাথর ভাঙ্গার জন্য প্রতিফুট হিসেবে টাকা দেয়। এতে প্রতিদিন গড়ে ৯০-১০০ টাকার কাজ করা যায়।
এ স্বল্প আয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করা সম্ভব হয়না। স্থানীয় একাধিক এনজিও’তে কর্মরত মহিলা শ্রমিকরা জানান, তারা সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে ১০০-১২০ টাকার বেশি রোজগার করতে পারেন না। দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির কারণে তাদের পারিশ্রমিকও বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন নারী শ্রমিকরা। বিশেষ করে মে দিবসেও নারী শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য মজুরী থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তারা এব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি কামনা করছেন।
Leave a Reply