সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৬ অপরাহ্ন
পটুয়াখালী সংবাদদাতা: পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার মজিদবাড়ীয়া ইউনিয়নের করমজাবুনিয়া গ্রামের মো. জসিম উদ্দিন নামের এক প্রধান শিক্ষকের বাসার কিশোরী কাজের মেয়ে দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অর্থের বিনিময়ে অভিযুক্ত ছেলের মামা ও উপজেলা ওলামাদলের সভাপতি মাওলানা ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ, মাধবখালী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মনির হোসেন ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. বাচ্চু মিয়া এ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য পায়তাঁরা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। ভু্ক্তভোগী কিশোরীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ওই কিশোরীর মা মারা যাওয়ার পর তারা বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। মেয়েটির পরিবারে অভাব-অনটনের কারণে তাকে করমজাবুনিয়া গ্রামের মো. জসিম উদ্দিনের স্ত্রী শিউলী বেগম নিজ বাসায় কাজের জন্য নিয়ে যান। ওই বাড়িতে অনেক বছর কাজ করার সুবাদে শিউলী বেগমের বড় বোনের ছেলে মো. ওলি আহম্মেদের কুনজর পরে ওই কিশোরী ওপর।
ভুক্তভোগী কিশোরীর ভাষ্যমতে, ‘খালার বাড়িতে আসলে আমাকে বিভিন্ন সময় কুপ্রস্তাব দিত ওলি, একপর্যায়ে খালা-খালু স্কুলে থাকায় সে আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার সাথে দৈহিক মেলামেশা করে। এভাবে প্রায় সময়ই সে খালা বাড়িতে আসলেই আমার সাথে দৈহিক সম্পর্ক করতো। এতে আমি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ি। ঘটনা জানাজানি হলে ছেলের খালা করমজাবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শিউলী বেগম ও তার স্বামী জসিম উদ্দিন আমাকে মেডিকেল চেকআপ করানোর জন্য বরগুনার একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। চেকআপের রিপোর্টে আমি দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি ধরা পড়ে। পরের দিন শিউলী বেগম আমাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে নিয়ে এসে আমার বাড়ির পাশের রাস্তায় আমাকে নামিয়ে দেয় এবং ঘটনাটি কাউকে না বলার জন্য ভয়ভীতি দেখিয়ে চলে যায়।’
ওই কিশোরী আরও বলে, ‘আমি বাড়িতে এসে আমার সৎ মার কাছে ঘটনা খুলে বললে আমার বারা শিউলী বেগমের কাছে বিষয়টি জানতে চায়। পরে উভয় পক্ষ আলোচনা করে আবার দ্বিতীয়বারের মতো মেডিকেল চেকআপ করানোর জন্য ছেলের ছোট মামা মো. মিজানুর রহমান, মনির হোসেন ও বাচ্চু আমাকে বাকেরগঞ্জের একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। রিপোর্টে অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি পুনরায় ধরা পড়লে আমার বাবা স্থানীয় মাধবখালী ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম তালুকদারকে বিষয়টি জানান। তিনি (চেয়ারম্যান) তাৎক্ষণিকভাবে ছেলের অভিভাবকদের ডেকে সামাজিকভাবে বিয়ের করার জন্য প্রস্তাব দেন। এ সময় বৈঠকে উপস্থিত ছেলের বড় মামা ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং বিষয়টি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সমঝোতার জন্য পাল্টা প্রস্তাব দনে। এতে ইউপি চেয়ারম্যান ও আমার পরিবার রাজি না হওয়ায় বৈঠক থেকে বেরিয়ে যায় ছেলে পক্ষ।’
এ বিষয়ে ওলির বড় মামা মাওলানা ডা. মো. আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, ‘উভয় পক্ষকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধান করা হয়েছে।’ যোগাযোগ করা হলে মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি ঘটনাটি শুনেছি তবে আমি সাথে যাইনি। মো. মনির হোসেন ও বাচ্চু মেয়েটিকে দ্বিতীয়বার মেডিকেল চেকআপের জন্য নিয়ে গিয়েছিল। তবে লোক মুখে শুনেছি, মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা।’
এ বিষয়ে মাধবখালী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে ছেলে পক্ষকে ইউপি কার্যালয়ে ডেকে সামাজিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তারা তা প্রত্যাখ্যান করে অর্থের বিনিময়ে সমঝোতার জন্য পাল্টা প্রস্তাব করে। পরে আমি ও ভিকটিমের পরিবার রাজি না হওয়ায় তারা বৈঠক থেকে বেরিয়ে চলে যান। পরবর্তীতে কী হয়েছে আমার জানা নেই।’ মেয়ের সৎ মা মোসা. পারভীন বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে ওই বাড়িতে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করত। বাড়ির গৃহর্কতার ভায়রার ছেলে ওলি দীর্ঘদিন যাবৎ তার সাথে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করে বলে আমার মেয়ে জানায়।’ এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছেলের খালু দক্ষিণ গাবুয়া সরকরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জসিম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার বাসায় থাকাকালীন এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি।’ মির্জাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুমুর রহমান বিশ্বাস বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি, তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply